বাংলাদেশের পাশে আছে চীন
2024-09-06 11:47:54

গত অগাস্টে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে গুরুতর বন্যা আঘাত হানে। যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই কঠিন মুহূর্তে চীন বাংলাদেশের পাশে আছে এবং দ্রুত বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে যা চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সমর্থনকে প্রতিফলিত করেছে।

 

বন্যার পর, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের কাছে সমবেদনা জানান এবং চীনের রেডক্রস সোসাইটির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে জরুরি মানবিক সহায়তা হিসেবে ১ লাখ মার্কিন ডলার পৌঁছে দেন। বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ২০ হাজার ডলার অনুদান দেয় এবং ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ এবং ত্রাণ সরবরাহের জন্য দুর্যোগ এলাকায় ছুটে যায়। এই পদক্ষেপটি কেবল বস্তুগত সমর্থনই নয়, মানসিক সমর্থনও বটে, যা বাংলাদেশি জনগণের দুর্ভোগে চীনা জনগণের গভীর উদ্বেগ ও যত্ন প্রদর্শন করে। অনুদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উল্লেখ করেন যে, "দুর্যোগ যদিও অনেক নিষ্ঠুর ও দুঃখের, তবে চীনা জনগণ সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে।" এই বাক্যটি কঠিন সময়ে একে অপরকে সমর্থন করার আন্তরিক অনুভূতি প্রকাশ করে।

 

চীনের সাহায্য কার্যক্রম আকস্মিক নয়। বরং, দীর্ঘমেয়াদী বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এবং চীনের বৈদেশিক সাহায্যের মূল নীতির উপর ভিত্তি করে রচিত। চীন সর্বদা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতা এবং স্বেচ্ছাসেবী নীতি মেনে চলে এবং বড় দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতায় সাহায্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে না। এই সহযোগিতার অবস্থা কিছু দেশের তুলনায় ভিন্ন, যারা সাহায্যের জন্য রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে দেয় এবং তথাকথিত "গণতান্ত্রিক" গুণাবলীর উপর জোর দেয়। তবে, চীনের সাহায্য সর্বদা প্রাপক দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং গ্রহীতা দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও পছন্দকে সম্মান করে। সম্মান ও সমতার এই মনোভাব শুধুমাত্র গ্রহীতা দেশগুলোকে উষ্ণতাই বোধ করে না, বরং চীনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে সুনাম অর্জনে সহায়তা করে।

 

গত ছয় বছরে, চীন ৪০টিরও বেশি দেশে ৮ শতাধিক জরুরি মানবিক সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং ৩০টিরও বেশি দেশে জরুরি খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, চীন সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করা উন্নয়নশীল দেশ। এই সংখ্যার পিছনে রয়েছে অগণিত জীবনের আশা, যা আন্তর্জাতিক মানবিক কাজে চীনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।

 

বন্যার মুখে, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়েছিল, সীমাহীন ভালবাসার চেতনা প্রদর্শন করে। ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত চীনা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলো দুর্যোগ-কবলিত এলাকায় ৪১.৩ লাখ টাকারও বেশি সহায়তা দিয়েছে এবং প্রায় ৬১.৯ লাখ টাকার সামগ্রী সরবরাহ করেছে। মোট অনুদানের পরিমাণ ১ কোটি টাকারও বেশি। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা কেবল অর্থনৈতিক শক্তিকেই প্রতিফলিত করে না, বরং মানবিকতার উপরও জোর দেয় এবং আন্তর্জাতিক সমাজে চীনা কোম্পানিগুলোর ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরে।

 

চীনের সাহায্য কার্যক্রম বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়। এই বছরের শুরু থেকে চীন কিউবা, জাম্বিয়া, ফিলিস্তিন, ফেডারেটেড স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়া এবং অন্যান্য দেশে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। যা কার্যকরভাবে স্থানীয় মানবিক সংকট দূর করেছে, প্রাপক দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সমাজের জনগণের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই কার্যক্রমগুলো সমস্যায় পড়া আত্মাকে পুষ্ট করে এবং আশা ও উষ্ণতা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় যে, চীন সর্বদা জন-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলে, মানবজাতির জন্য অভিন্ন কল্যাণের সমাজের ধারণা অনুশীলন করে এবং আন্তর্জাতিকতা ও মানবতাবাদের চেতনাকে সমুন্নত করে।

 

আজ, বিশ্বায়ন গভীর হওয়ার সাথে সাথে, সাধারণ চ্যালেঞ্জের মুখে দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমর্থন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চীন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে যৌথভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করা এবং উন্নয়ন প্রচারে হাত মিলিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক। এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে, আরও নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলা একটি দায়িত্বশীল প্রধান দেশ হিসেবে চীনের লক্ষ্য ও দায়িত্ব।

 

দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্গঠন হোক বা ভবিষ্যৎ অভিন্ন উন্নয়ন হোক, চীন সবসময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে এবং হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে। এই ধরনের বন্ধুত্ব ও দায়িত্ববোধ একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার ভিত্তি। বাংলাদেশে বন্যার প্রেক্ষাপটে, চীনের সাহায্য কার্যক্রম শুধু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্যই সহায়তা নয়, মানবজাতির জন্য অভিন্ন কল্যাণের সমাজ ধারণার একটি প্রাণবন্ত ব্যাখ্যা। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন যেমন বলেছিলেন: "আমি বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে, বাংলাদেশি জনগণ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম হবে।" এটাও সব চীনা মানুষের অভিন্ন প্রত্যাশা।