১ বাংলাদেশকে ভালোবাসেন শিল্পী মংইয়াও ইয়ুয়ান
২. স্বর্ণজয়ী অদম্য নারী
৩. বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে কাজ করে গর্বিত মিশরীয় নারী প্রকৌশলী
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
বাংলাদেশকে ভালোবাসেন শিল্পী মংইয়াও ইয়ুয়ান
বাংলাদেশকে ভালোবাসেন চীনের নারী মংইয়াও ইয়ুয়ান। দুই বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে আছেন। সম্প্রতি তিনি আমাদের স্টুডিওতে এসেছিলেন।
মংইয়াও ইয়ুয়ান যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। সেখানে তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে পড়েছেন। নিতান্ত শখের বসে তিনি শুরু করেন নেইল আর্ট। নখের উপর ছবি আঁকা। নেইল আর্ট চীনের নারীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় একটি শিল্পমাধ্যম। চীনের অনেক নারী মনে করেন এটা সৌভাগ্য বয়ে আনে। আবার অনেকে শুধু সৌন্দর্য চর্চার অংশ হিসেবেই নেইল আর্ট পছন্দ করেন।
মংইয়াও নখের উপর ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী চীনা নকশা বেছে নেন। তিনি প্রথমে তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য এই শিল্পচর্চা শুরু করেন।
বাংলাদেশে তিনি এসেছেন মূলত তার বাবার ব্যবসায় সহায়তা করার জন্য। তার বাবা বাংলাদেশে একটি সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক। মংইয়াও তার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি দেখে তিনি বেদনা অনুভব করেছেন। নেইল আর্ট থেকে উপার্জিত অর্থ তিনি বন্যা দুর্গতদের জন্য সহায়তা হিসেবে দিতে চান।
এর মধ্যেই পরিবহনযোগ্য দশটি সোলার প্যানেল তার প্রতিষ্ঠান থেকে বন্যা দুর্গত মানুষদের জন্য উপহার দিয়েছেন। এই সোলার প্যানেলগুলো ছোট আকারের। সহজে বহনযোগ্য। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আলো। মোবাইল ফোন চার্জ দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এই প্যানেলের মাধ্যমে। ফলে দুর্গম এলাকা যেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই সেখানে এই ধরনের সোলার প্যানেল লাইট ও মোবাইল চার্জার খুবই উপযোগী।
মংইয়াও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়াতে গিয়েছেন। সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার তার খুব ভালো লেগেছে।
তিনি বাংলাদেশের খাবার পছন্দ করেন।
মংইয়াও মনে করেন বাংলাদেশের মানুষ খুব পরিশ্রমী। তারা বন্ধুত্বপরায়ণ, সরল ও আন্তরিক। বাংলাদেশে বসবাস করে বাবার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান মংইয়াও। বাংলাদেশকে ভালোবাসেন তিনি। এদেশের মানুষের কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে চান।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
স্বর্ণজয়ী অদম্য নারী
প্যারিস প্যারালিম্পিকে স্বর্ণজয় করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন চীনের দুই নারী লিউ ইয়ুথোং এবং ইয়িন ম্যংলু। কিন্তু তাদের এই স্বর্ণজয়ের পিছনে রয়েছে অনেক কঠোর অনুশীলন ও সংগ্রাম। শুনবো সেই যুদ্ধজয়ের গল্প।
চীনের দুজন নারী ক্রীড়াবিদ লিউ ইয়ুথোং এবং ইয়িন ম্যংলু প্যারিস প্যারালিম্পিকে নারীদের ব্যাডমিন্টন ডাবলসে ডব্লিউ এইচ ওয়ান-ডব্লিউ এইচ টু স্বর্ণপদক ম্যাচের পর হাসেন বিজয়ীর হাসি। কিন্তু তাদের এই স্বর্ণজয়ের পথ মসৃণ ছিল না। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয় যাদের, তাদের জন্য ক্রীড়াবিদ হওয়াটা এমনিতেই যথেষ্ট কঠিন। শারিরীক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করার জন্য চাই অদম্য মনোবল।
ইয়িন ম্যংলু স্বর্ণজয়ের পর বলেন, প্রতিরাতে যখন তিনি ঘুমাতে যেতেন তখন একটা চিন্তাই তার মনে ভেসে উঠতো। তিনি নিজেকে বলতেন, আমি এই এই গেমসের জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়েছি আমাকে প্যারিসে জয় পেতেই হবে।
টোকিও অলিম্পিকে একটুর জন্য জাপানের কাছে পরাজিত হন ইয়িন। তখন তার মনে হয়েছিল প্যারিলিম্পিক জয় যেন হাত থেকে পিছলে গেল। সেই অধরা স্বপ্নকে সফল করতে এরপর আগের চেয়েও কঠোর অনুশীলনে মেতে ওঠেন তিনি। তার কোচ তাকে এ বিষয়ে অনেক সহায়তা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই ফাইনাল জয়ের খুব কাছাকাছি ছিলাম। অল্পর জন্য জয় আমাদের কাছ থেকে সরে যায়।’ সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে তখনি তিনি স্থির করেন আরও কঠোর পরিশ্রম করবেন। তিন বছর ধরে তিনি কঠোর অনুশীলন করেন। অনুশীলনের সময় অনেকবার চিৎকার করে বলতেন এবার স্বর্ণ জিতবোই।
কঠোর প্রশিক্ষণের ফলে তার কাঁধে ব্যাথা করতো। পিঠ শক্ত হয়ে যেত। মাংসপেশীতে টান লাগতো। কিন্তু শারিরীক কষ্টকে জয় করতেন তিনি।
একইভাবে লিউ ইয়ুথোং স্বপ্ন দেখতেন স্বর্ণজয়ের। তারও ছিল স্বপ্নকে সফল করার জন্য অনেক কঠোর পরিশ্রম।
আর এভাবেই অদম্য এই নারী জুটি জয় করলেন প্যারিস প্যারালিম্পিক। তাদের এই স্বর্ণজয় আরও অনেক প্রতিবন্ধী নারীর জন্য অনুপ্রেরণার বার্তা নিয়ে এসেছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে কাজ করে গর্বিত মিশরীয় নারী প্রকৌশলী
মিশরের আলামিন সিটি নির্মানে কাজ করছেন নারী প্রকৌশলী সোহিলা সাইদ। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীন নির্মাণাধীন এই প্রকল্পে কাজ করতে গর্বিত এই নারী। চীনের প্রকল্প প্রতিষ্ঠান ও চীনা সহকর্মীদের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখতে পারাটাকেও বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন এই নারী। বিস্তারিত আফরিন মিমের প্রতিবেদনে।
মিশরীয় প্রকৌশলী সোহিলা সাইদ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নির্মাণাধীন কাজের সঙ্গে আছেন তিনি। সম্প্রতি ব্যস্ত সময় পার করছেন আলামিন সিটি নির্মাণে। চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে।
চীনের স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের মিশরীয় শাখা কাজ করছে এই আলামিন সিটি নির্মাণে। এই সিটি মিশরের নগর উন্নয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর দিনের বেশিরভাগ সময় এই কোম্পানির সঙ্গে নির্মাণ কাজ করছেন এই নারী প্রকৌশলী।
চীনের এতো বড় প্রকল্পে কাজ করতে পেরে খুশি সোহিলা। একসময় এখানে কাজ করতে পারার আনন্দ নিজের ছেলেমেয়েকে বলতে পারবেন বলে আনন্দিত তিনি।
তিনি বলেন, আমি খুব খুশি, এই প্রকল্প শেষ হলে আমি আমার সন্তানদের বলতে পারবো আমি এখানে কাজ করতাম। তারাও খুব গর্ববোধ করবে তাদের মা এখানে কাজ করেছিল’।
এছাড়া চীনা এই প্রকল্পে সহকর্মীদের কাজ ক্তহেকে নতুন কিছু শিখছেন বলেও জানান সোহিলা।
তিনি বলেন, চীনা সহকর্মীদের কাজ থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কাজ শিখছি। নিজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করছি।
একজন নারী হিসবে নিজেকে ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেননি সোহিলা।নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে রক্ষণশীল বিশ্বাস থেকে বের এসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজের স্বপ্নের মতো।
তিনি বলেন, " আমি সব সময় নিজের স্বপ্নকে গুরুত্ব দিয়েছি। তাই এমন প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আসার সুযোগ পেয়েছি। চীনা এই প্রকল্পে একজন নারী হিসেবে আমি অনেক সম্মান পাই”।
নারীদের নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ছুটে চলা উচিত বলে মনে করেন এই নারী প্রকৌশলী।
তিনি বলেন, "আমি মনে করি মেয়েরা যেকোন কিছু করতে পারে। এরজন্য চাই ইচ্ছাশক্তি। এই মিশরেই অনেক নারী এগিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র তাদের ইচ্ছাশক্তিতে”।
আলামিন সিটির মতো আন্তর্জাতিক প্রকল্পে কাজের সুযোগকে নিজের বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখছে সোহিলা। স্বপন আরও বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার। আরও বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ