‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৮৫ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. কলেজ স্নাতকদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর সর্বোত্তম চেষ্টা শেনচেনের
২. বাংলাদেশ নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীর ভাবনা
৩. তাইওয়ানের তরুণের সঙ্গে ফুচিয়ানের তরুণীর সুখের সংসার
১. কলেজ স্নাতকদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর সর্বোত্তম চেষ্টা শেনচেনের
কলেজ স্নাতকদের চাকরি সুরক্ষিত করতে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন প্রচারণা এবং প্রোগ্রাম চালু করেছে শেনচেন। দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের শেনচেন শহর এই উদ্যোগ নিয়েছে।
স্নাতকদের সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে সংযোগ করানোর জন্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান করতে ক্যাম্পাসে এবং বাইরে বিভিন্ন নিয়োগ কার্যক্রম এজেন্ডা হাতে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
শহরটি এরই মধ্যে স্নাতকদের জন্য নীতি-ভিত্তিক পাবলিক সার্ভিস পজিশনও তৈরি করেছে , একটি ব্যক্তি পর্যায়ে ফলো-আপ প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশিকা প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করেছে। যারা স্নাতক হওয়ার পরে এখনও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি তাদের একের পর এক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
অনেক নিয়োগকর্তাও ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের বর্তমান শিল্পের চিত্রপট এবং উচ্চমানের প্রবণতা সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম করে।
কিছু নিয়োগকর্তা কলেজ স্নাতকদের জন্য তাদের নিয়োগের নীতিগুলো শিথিল করেছেন, যোগ্য প্রার্থীদের জন্য স্নাতকের সময়সীমা এক বছর থেকে দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।
গ্র্যাজুয়েটদের জন্য আরও চ্যানেল সরবরাহ করতে শহরটি অক্টোবরে একটি বৃহৎ জাতীয় চাকরি মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এটি হবে ২৮ তম সংস্করণ।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. বাংলাদেশ নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীর ভাবনা
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন করলে দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রই উন্নত করা সম্ভব। এমনটিই বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আল আমিন। সম্প্রতি সিএমজি বাংলার ঢাকা ব্যুরোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি এবং শিক্ষকদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততাসহ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে।
‘আমাদের রাজনৈতিক একটা ভালো ইতিহাস আছে। সেখানে ছাত্ররাজনীতির বড় একটা ভূমিকা আছে। আমরা যে বাংলা ভাষায় কথা বলছি এতেও ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এর ফলাফল ভালো থেকে মন্দের ভাগই বেশি ছিলো। প্রত্যেক এলাকায় ছাত্ররাজনীতির প্রভাব দেখা যায়। তারা এই রাজনীতিকে পলিউটেড করেছে।’ আপাততো, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিৎ।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করা উচিৎ।’ শিক্ষকদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকদের রাজনীতি থেকে আলাদা থাকা উচিৎ।’
আল আমিন মনে করেন, ‘পড়াশোনা গাইড করা, শিক্ষকদের আমাদের রিসার্চ ডেভোলপমেন্ট করা উচিৎ বা আমাদের সমাজকে কীভাবে উন্নত করা যায় স্টুডেন্টদের গাইড করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা উচিৎ।’
সাক্ষাৎকারগ্রহণ : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. তাইওয়ানের তরুণের সঙ্গে ফুচিয়ানের তরুণীর সুখের সংসার
চীনের তাইওয়ানের এক যুবক ছ্যং শ্যং ছুং। পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফিংথান কাউন্টিতে পরিবারসহ বসবাস করেন তিনি। তার কর্মজীবনও এখান থেকেই শুরু হয়। ফিংথান কাউন্টি তাইওয়ান দ্বীপের খুব কাছের একটি কেন্দ্র।
"দ্য ওয়ে হোম" শিরোনামে গেল মাসের সম্প্রচারিত চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিজিটিএন এর একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে তাইওয়ানের যুবক ছ্যং শ্যং ছুংয়ের গল্প উঠে এসেছে। শুধু ছুংই নয় এটি তাইওয়ানের তরুণদের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরে। এই তরুণরাই রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকা সত্ত্বেও তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে ফুচিয়ানে পাড়ি জমায়। ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে তাইওয়ানের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশি, প্রণালীর পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ফুচিয়ান।
৩৭ বছর বয়সী ছ্যং মধ্য তাইওয়ান থেকে ২০১৬ সালে ফিংথানে আসেন। সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অনুকূল নীতি তাকে তখন আকৃষ্ট করে।
"হাইসিয়া ফেরির মাধ্যমে, আমি সকাল ৮টায় বের হোতাম এবং দুপুরের খাবারের জন্য বাড়িতে পৌঁছাতে পারতাম। পরিবহন ব্যবস্থা এতোটাই সহজ ছিলো। এছাড়াও, ফিংথানকে একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ এবং ক্রস-স্ট্রেট ইন্টিগ্রেশনের জন্য পছন্দের জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’
ফিংথান একদিন নাস্তা করার সময় তার স্ত্রীয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখান থেকেই তাদের পছন্দ এবং প্রেমের শুরু হয়। কিন্তু ছ্যংয়ের স্ত্রীয়ের মা তাদের এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিলেন।
"আমি তাইওয়ান থেকে এসেছি এইটা শুনে তিনি পছন্দ করেননি আমাকে। তার মেয়ে বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকবে এইটাও একটা কারণ ছিলো।’
ছ্যং বুঝতে পেরেছিলেন ভবিষ্যত শাশুড়িকে জয় করতে পারলে বাকি সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। তাই তিনি শাশুড়ির মন জয় করতে বাসার বাল্ব বদলানো এবং টয়লেট পরিষ্কার করার মতো গৃহস্থালির কাজেও তাকে সাহায্য করতেন। তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অবশেষে ছ্যং তার শাশুড়ির মন জয় করে অনুমতি পেলেন।
ছ্যং এখন তার স্ত্রী এবং আড়াই বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে সুখে জীবনযাপন করছেন।
ক্যারিয়ারের কঠিন সময়ে সর্বদা তার স্ত্রী পাশে ছিলো এবং বিশাল সমর্থন ছিলো বলে জানান তিনি। তার কাছে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এখন তিনি ফিংথানের সিয়াছুওছাং নামে একটি গ্রামে একজন পরামর্শক হি্সেবে কাজ করছেন। তিনি তার জ্ঞান ব্যবহার করে গ্রামটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটনবান্ধব গ্রামে কীভাবে রূপান্তরিত করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
এরই মধ্যে তাইওয়ানের রাতের বাজারের মতো অব্যবহৃত স্থানগুলোকে অর্থনৈতিক এলাকায় রূপান্তর করা হয়েছে। তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের মানুষের মধ্যে অবাধ বিনিময় হবে এমনটিই প্রত্যাশা এই তরুণের।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল/রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী