এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। চীনের বিখ্যাত ৫ পর্যটন গন্তব্য
২। টুকরো খবর-
· চীনে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ হয়েছে ১০ দশমিক ৯ বিলিয়ন বার
· বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ভ্রমণ পাস চালু করবে বেইজিং
৩। কুনমিংয়ের স্বর্ণমন্দির পার্ক
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮৪তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। চীনের বিখ্যাত ৫ পর্যটন গন্তব্য
দরজায় কড়া নাড়ছে মধ্য শরত উৎসব। পরিবারের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটানোর অপেক্ষায় চীনবাসী। এই সময়ের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ছুটবেন বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে। তাই এবারের পর্বে থাকছে চীনের পাঁচটি পর্যটন গন্তব্যের খোঁজ।
· পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের ছিংতাও
ইয়েলো সি বা পীত সাগরের তীরে অবস্থিত ছিংতাও পর্যটন শহর হিসেবে বিখ্যাত। সমুদ্রতীরের এই শহরটিতে বছরের যেকোন সময়ই জমে উঠে পর্যটন। ছিংতাও পোলার ওস্যান পার্কে মেরু অঞ্চলের পরিবেশ অনুভব করা যায়। দেখা মেলে শ্বেত ভালুকের। এছাড়া আধুনিক ও সৌন্দর্যময় স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত ছিংতাও টিভি টাওয়ার। এ ছাড়া শহরে বেশ কিছু স্থাপত্য রয়েছে যা ঊনবিংশ শতকের ইউরোপীয় স্টাইলে নির্মিত।
সূর্যদয়ের সময় আলো-ছায়ার খেলা ও নানা রঙের আভায় চারদিক রঙিন হয়ে ওঠে এই শহর। সূয্যিমামা তখন হাতছানি দিয়ে নিজের সৌন্দর্যের প্রশংসা কুড়োতে বেশি আনন্দ পায়।সূর্যের এমন রূপে মাতোয়ারা হতে অনেক পর্যটক ছুটে যায় দেশ থেকে বিদেশে। সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্যের দেখা পেতে এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
· পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন
অন্যতম বাসযোগ্য শহর সিয়ামেন দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশে অবস্থিত বন্দরনগরী সিয়ামেন। চীনের সবচেয়ে গোছানো শহরগুলোর মধ্যে একটি। চীনের দেশের সেরা ১০টি বাসযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে সিয়ামেন। সিয়ামেন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে ফেরিতে করে মাত্র ছয় মিনিট গেলেই চিওলং নদীর মোহনায় অবস্থিত কুয়ালাংক্যু দ্বীপটি চোখে পড়ে।
এটি এ শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসাবে পরিচিত। বৈচিত্র্যময় স্থাপত্য এবং বহুসাংস্কৃতিক ইতিহাসের জন্য এ দ্বীপটি বিখ্যাত। ২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক স্থান হিসেবে এই দ্বীপটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করে।
· উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের হারবিন
চীনের পর্যটন খাতের বিখ্যাত নাম হারবিন শহর চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হেইলিংচিয়াং প্রদেশে অবস্থিত। হারবিনের পর্যটন খাত মূলত শীতকেন্দ্রিক। বরফের সৌন্দর্য উপভোগ করে শীতকালে হারবিনে আসেন হাজারো পর্যটক। তবে সম্প্রতি এই দৃশ্যপট বদলেছে।
শীতের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালেও হারবিন শহরে দারুণ আগমন ঘটে পর্যটকদের। এই শহরে ২৩ হাজার ৮০০ বর্গ মিটারে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী বিশাল ইনডোর থিম পার্ক আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
· পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হ্যাংচৌ
"উপরে স্বর্গ আছে, নীচে এখানে সুচৌ এবং হ্যাংচৌ আছে।" এই প্রবাদটি চীনজুড়ে খুব প্রচলিত। এই শহরে রয়েছে মনোমুগ্ধকর ওয়েস্ট লেক। যেখানে প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। এখানে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেরাতে পারেন নানা বয়সী দর্শনার্থী।
জটিল বৌদ্ধ স্থাপত্যসহ একটি আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল লিঙ্গিন মন্দিরের প্রাচীন প্রশান্তিতেও নিজেকে নিমজ্জিত করতে পারবেন এখানে। এ ছাড়া এই শহরেরই খুব বিখ্যাত লংচিং চা। লংচিং চা ওয়েস্ট লেক ড্রাগন ওয়েল চা নামেও পরিচিত। এ চায়ের রঙ সবুজ হয়ে থাকে। স্বাদ অনেকটা মিষ্টি।
· দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের থংরেন
গ্রীষ্মকালীনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য মুগ্ধকর পর্যটন গন্তব্য হতে পারে কুইচৌ প্রদেশের থঙ্গরেন। এখানকার আবাসিক ভবনগুলো মুগ্ধ করবে যে কাউকে। ইতিহাস সম্পর্কে জানতে যেতে পারেন এই শহরে। পাশাপাশি এই শহরে উপভোগ করতে পারবেন হাইকিং। আর প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য আছে ফানচিং পর্বত। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে খ্যাত এই পর্বতে দেখতে পারবেন প্রাচীন শৈলীর কিছু বৌদ্ধ মন্দিরও।
এই শহরের অন্যতম আকর্ষণ মিয়াও এবং তং জাতিগোষ্ঠীর গ্রাম। এই গ্রামগুলোতে নিতে পারববেন স্থানীয় খাবারের স্বাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সিনচিয়াং নদীর তীরে হেঁটেও উপভোগ করতে পারবেন সৌন্দর্য। স্বচ্ছ জলে ঘুরে বেড়াতে পারবেন নৌকায়।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। টুকরো খবর-
· চীনে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ হয়েছে ১০ দশমিক ৯ বিলিয়ন বার
চীনে শেষ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ মৌসুম। এবারের মৌসুমে রেলপথ, সড়কপথ ও আকাশপথে ভ্রমণ হয়েছে ১০ দশমিক ৯ বিলিয়ন বার। রোববার দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, এবারের মৌসুমে গড় দৈনিক যাত্রী ভ্রমণ হয়েছে ১৭ কোটি ৬ লাখ, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
এই সময়ের মধ্যে রেলপথে ভ্রমণ হয়েছে ৮৮ কোটি ৭ লাখ বার, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এই সময়ে রেলপথে দৈনিক গড় যাত্রী ভ্রমণ হয়েছে ১৪ দশমিক ৩১ মিলিয়ন বার।
এদিনে চীনের সড়ক পরিবহন নেটওয়ার্ক এই সময়ের মধ্যে ৯ দহসমিক ৮ বিলিয়ন যাত্রী ভ্রমণ পরিচালনা করেছে, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে এই সময়ে নৌপথে ভ্রমণ করেছে ৬৩ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন যাত্রী , যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ০৪ শতাংশ বেশি।
পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে দেশের বেসামরিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে মোট ১৪১ দশমিক ৮৯ যাত্রী ভ্রমণ করেছে। যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।
· বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ভ্রমণ পাস চালু করবে বেইজিং
আরও বিদেশী-বান্ধব হয়ে উঠতে প্রস্তুত বেইজিংয়ের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম। তাইতো একটি অল-ইন-ওয়ান সিটি ট্রাভেল পাস চালু করার পরিকল্পনা করেছে বেইজিং। সম্প্রতি বেইজিং শহর কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
শুরুর দিকে এই বেইজিং পাসটি বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য পাতাল রেল ভ্রমণের সুবিধা দিবে। এই পাতাল রেলে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ক কার্ড ব্যবহার করে শহরের সাতটি রেলওয়ে স্টেশন এবং দুটি বিমানবন্দরে পাস ক্রয় করতে পারবেন বিদেশিরা।
বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির চায়না একাডেমি অফ কালচার অ্যান্ড ট্যুরিজমের অধ্যাপক উ লিয়ুন বলেছেন, বেইজিং পাসটি বিদেশী দর্শনার্থীদের শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানোর সুবিধা দেবে। এতে করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে কোন টাকা পরিশোধ করতে হবে না বিদেশিদের।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
৩। কুনমিংয়ের স্বর্ণমন্দির পার্ক
ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে রয়েছে অনেক বিখ্যাত পর্যটন স্থান। এরমধ্যে একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান হলো গোল্ডেন টেম্পল পার্ক বা স্বর্ণমন্দির পার্ক। চীনাভাষায় এর নাম চিনতিয়ান পার্ক। এটি চীনের সবচেয়ে বড় ব্রোঞ্জ মন্দির। কুনমিং শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে সাত কিলোমিটার পূর্বে মিনফ্যং পাহাড়ে এই মন্দির অবস্থিত।
১৬০২ সালে মিং রাজবংশের শাসনামলে প্রথম এই মন্দির নির্মিত হয়। সেটি নির্মাণ হয় হুবেইতে। পরে একে ইয়ুননানে সরিয়ে আনা হয়। এরপরে অনেকবার এর সংস্কার হয়েছে। ছিং সম্রাট খাংসির সময় মন্দিরটি পুনর্নিমান করেন মিং সম্রাটের পক্ষে যুদ্ধ করা একজন পরাজিত সামরিক জেনারেল। তিনি আবার মূল নকশা অনুযায়ী মন্দিরটি তৈরি করেন। এই মন্দির নির্মাণে ২০০ টনের বেশি ব্রোঞ্জ ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্রোঞ্জগুলো এত উজ্জ্বল যে দেখলে মনে হয় স্বর্ণ। সেজন্যই এর নাম গোল্ডেন টেম্পল।
এটি চীনের সবচেয়ে বড়, ভারি এবং সুরক্ষিত ব্রোঞ্জ টেম্পল বলে পর্যটকদের কাছে এর রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। মন্দির কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে রয়েছে দারুণ সুন্দর সিঁড়ি। এর নাম প্রজাপতি সিঁড়ি। এখানে মিং আমালের তৈরি চমৎকার কিছু ভাস্কর্য চোখে পড়ে।
তিনতলা একটি বেল টাওয়ার বা ঘন্টা-ভবন রয়েছে। এর ঘন্টা ২.১ মিটার লম্বা এবং ঘন্টার ঘের ৬.৭ মিটার। ১৪২৪ সালে মিং সম্রাট ইয়ংলের সময় এই ঘন্টা তৈরি করা হয়। ঘন্টাটি আগে অন্য একটি প্রাসাদে ছিল। পরে এখানে আনা হয়েছে। এটি তাওবাদীদের মন্দির। এখানে তাও দর্শন ও সমৃদ্ধ তাও সংস্কৃতি অনুভব করতে পারবেন পর্যটকরা।
মন্দির কমপ্লেক্সে প্যারোট গার্ডেন এবং ক্যামেলিয়া গার্ডেন রয়েছে। ক্যামেলিয়া গাডেনে নানারকম দৃষ্টিনন্দন ফুল রয়েছে। বিরল কিছু অর্কিডের দেখা মিলবে এখানে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী