পরিচ্ছন্ন পানির খাল মানুষের হৃদয়কে সিক্ত করে
2024-09-02 11:05:28

আগস্ট মাসের একদিন, মধ্যাহ্নের সূর্য মাটিকে যেন সেঁকছিল। শ্রীলংকার মধ্যাঞ্চলীয় গালেওয়েলা শহরে নদীর মধ্যে কিছু চড়া পড়েছে আর কয়েক ডজন বক সেখানে বিচরণ করছে। তার ঠিক অদূরে স্ফটিক স্বচ্ছ পানি। ৪ মিটারের বেশি প্রস্থ এবং ২ মিটারের বেশি গভীরতার কাটা খাল ফসলের ক্ষেত বরাবর চলে গেছে, যার মাধ্যমে চলছে সেচকাজ।

শুকনো মৌসুমে দেশটির অনেক জায়গায় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমৃদ্ধ পানি সম্পদ, সঙ্কটে থাকা মধ্যাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে আনতে শ্রীলংকার সরকার মহাওয়েলী পানি নিরাপত্তা বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরী করে। চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোং, লিমিটেডের (সিএসসিইসি) নির্মিত শ্রীলংকার মধ্যাঞ্চলের ১৭ কিলোমিটার খাল প্রকল্পের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চলতি বছরের মে মাসে, প্রকল্পের প্রধান অংশ সম্পন্ন হয়। খালটি গালেওয়েলা শহরের আশপাশে ১০টি গ্রামের প্রায় ৪শ’ হেক্টর ক্ষেতে সেচকাজ করতে পারে।

“আগে যখন শুকনো মৌসুম আসে, আমরা শুধু গভীর কূপের জল দিয়ে ক্ষেতে সেচকাজ করতে পারতাম। এখন চীনের নির্মিত খাল আছে, বছরে একবারের পরিবর্তে দুবার ধান উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরো একবার সবজি চাষ করা যায়। জীবন আরো প্রতিশ্রুতিশীল!” প্রায় ৬০ বছর বয়সী গালেওয়েলা শহরের গ্রামবাসী কুলা সেকালা বললেন এমন আশার কথা।

পানি স্থানান্তরে খাল নির্মাণ সহজ নয়। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ শুরু হওয়া থেকে প্রকল্প বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। প্রকল্পের ম্যানেজার কুও বিংখুই’র স্মৃতিতে, শ্রীলংকা সরকারের পরিকল্পিত খালের প্রধান লাইন আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে, তাই অবকাঠামো বেশি হবার কারণে নির্মাণকাজে বহু সমস্যার সম্মুখীন ছিল।

কুও বিংখুই জানান, খালের একটি অংশ স্কুলের কাছে থাকার কারণে, তাদের নির্মাণ সময় বাছাই করতে হতো এবং সর্বাধিক মাত্রায় কম্পন কমাতে ও কর্কশ উচ্চশব্দ কমাতে হতো। যাতে স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে খাল কাটা সম্পন্ন করা যায়।

সিএসসিইসি’র শ্রীলংকা শাখা কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি লিউ বিংছুয়ান ব্যাখ্যা করেন, প্রকল্পটি সবসময় নির্মাণ কাজকে সামাজিক দায়িত্বের সাথে সংযুক্ত করে। ৬ শতাধিক স্থানীয় কর্মসংস্থান সরবরাহ করার পাশাপাশি ‘লুবান কারিগর পরিকল্পনা’ কার্যকর করার মাধ্যমে ৮০ জনের বেশি স্থানীয় প্রযুক্তিকর্মী প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

চীনা পক্ষের আন্তরিকতা ও সম্মান স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন করে। “চীনা বন্ধুরা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর পথটি পুনরুদ্ধার ও সবুজায়ন করে অথবা গ্রামের জন্য অন্যান্য মেরামত করে, গ্রামবাসীদের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করে। সুতরাং আমি নিজের সামর্থ্যে নিকটবর্তী শহরবাসী ও গ্রামবাসীদের নিয়ে চীনা বন্ধুর জন্য সর্বাধিক মাত্রার সমর্থন ও সমন্বয় দিতে চাই।” গালেওয়েলা শহরের অধীনে এক গ্রামের কৃষি সমিতির চেয়ারম্যান ভিজেকন এমন কথা বললেন।

অনেক স্থানীয় বাসিন্দার জন্য খালটি নতুন জীবনের আনন্দ বয়ে এনেছে। সন্ধ্যার সময় ২৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ নুরশাদ অফিস থেকে এসে খালের ধারে বন্ধুদের সাথে খেলার জন্য তার তর সয় না। তিনি বললেন, খালটি শহরের কৃষি উত্পাদন বাড়িয়েছে, আমাদের জীবনেও আনন্দ নিয়ে এসেছে।”

পানি খেলা, হাঁটাহাঁটি...... যখন সূর্য ততটা গরম হয় না, খালের পাশে সবসময় বলার কিছু থাকে। (প্রেমা/হাশিম)