সি’র দূরদর্শী ভাবনা: চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার উজ্জ্বল ভবিষ্যত তারুণ্যের শক্তিতে
2024-09-01 17:17:48

“চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আমাদের তরুণদের মধ্যে নিহিত”, চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের (এফওসিএসি) ২০১৮ সালের বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ মন্তব্য করেছিলেন।

চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার আলোচ্যসূচিতে বরাবরই তরুণদের উন্নয়ন অগ্রাধিকার পেয়েছে। এফওসিএসি শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি যেসব উদ্যোগের রূপরেখা দিয়েছেন তার অনেকগুলোই তাদের কাজের সুযোগ অন্বেষণে এবং আরও ভালো ব্যক্তিগত উন্নয়ন সাধনে সহায়তা করার জন্য প্রণীত হয়েছিল।

এর আগে, এফওসিএসি-২০১৫, জোহানেসবার্গ সামিটে, চীনের প্রেসিডেন্ট আফ্রিকার জন্য আঞ্চলিক বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্র এবং সক্ষমতা-নির্মাণ স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন। তিন বছর পর, বেইজিং সামিটে, তিনি তরুণদের জন্য আরও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানে মহাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ স্থাপনের ধারণা চালু করেন।

বছরের পর বছর ধরে, এই ব্যবস্থাগুলো অনেক তরুণ আফ্রিকানকে উপকৃত করেছে। তাদের একজন, কেনিয়ার ২৬ বছর বয়সী তরুণ জামলিক মওয়াঙ্গি কারিউকি বেইজিংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করছেন।

চীনের সাথে কারিউকির সংযোগ ২০১৭ সালে শুরু হয়, যখন চীনা-নির্মিত মোম্বাসা-নাইরোবি স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে (এসজিআর) ট্রাফিকের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল। প্রকল্পটি শুধুমাত্র দুই শহরের মধ্যে রেল-ভ্রমণের সময়কে অর্ধেকে কমিয়ে দিয়েছিল তা নয়, বরং স্থানীয়দের জন্য প্রায় ৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এ জন্য দেশের ২ হাজার ৮০০ জনের বেশি উচ্চ-দক্ষতার রেলওয়ে পেশাদারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

২০২১ সালে স্নাতক হওয়ার পর, কারিউকি কেনিয়া রেলওয়ে কর্পোরেশনে একজন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতে দেশে ফিরে যান এবং মোম্বাসা-নাইরোবি-এসজিআরের অপারেশনে অবদান রাখেন। একই প্রোগ্রামে তার অনেক সহকর্মী কেনিয়ান কর্পোরেশনের জন্য কাজ করছেন। আরও উন্নত জ্ঞানের সন্ধানে, কারিউকি রেলওয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা আরও এগিয়ে নিতে ২০২৩ সালে চীনে ফিরে আসেন।

তারা যে সুযোগগুলো পেয়েছেন তার জন্য প্রেসিডেন্ট সি ও চীনের প্রতি কৃতজ্ঞবোধ করেন। কারিউকিসহ কেনিয়ার ছাত্রদের প্রতিনিধিরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা ২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট সিকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তারা রেল পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আরও জানতে চীনে এসে তাদের দুর্দান্ত আনন্দময় অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছিলেন।

২০২৩ সাল দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী, সেইসাথে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’র (বিআরআই) ১০ম বার্ষিকী হিসাবে চিহ্নিত করেছে, যার উদগাতা প্রেসিডেন্ট সি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই চিঠির উত্তরের, সি বলেন যে, বিআরআই চীন ও কেনিয়ার উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের আদর্শকে বাস্তবে পরিণত করেছে। মোম্বাসা-নাইরোবি এসজিআরকে একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন এটি দুই দেশের জনগণের মঙ্গলকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করেছে। এটি চীন-কেনিয়া বিআরআই সহযোগিতার একটি সফল উদাহরণ।

প্রেসিডেন্ট সি চিঠিতে লেখেন, “আমি আনন্দিত যে আপনারা এই আনন্দের রাস্তা দিয়ে চীনের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। আপনারা চীন-কেনিয়া এবং চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সাক্ষী এবং উপকৃত হয়েছেন এবং আপনারা চীন-কেনিয়া ও চীন-আফ্রিকার মধ্যে আরো গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা গড়ে তুলতে এবং ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছেন।

তিনি আরও যোগ করেন যে, বিআরআই এবং চীন-কেনিয়া ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তাদের মতো আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং সক্ষম তরুণ ব্যক্তিদের জড়িত করার দাবি করে।

সি’র কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে কারিউকি বলেছেন যে, তিনি দুই দেশের সহযোগিতা এবং অভিন্ন উন্নয়নে অবদান রাখতে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাবেন।

চীন-আফ্রিকা ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের উত্তরাধিকার এবং চীনা ও আফ্রিকান যুবকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় উভয়কেই সি চি নপিং জিনপিং মূল্য দেন। ২০১৩ সালের মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময়, তিনি ডারবান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে যৌথভাবে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রত্যক্ষ করেন। প্রতিষ্ঠার দশ বছরে, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

২০২৩ সালে, ডারবানের ইনস্টিটিউটের ৫০ জন ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং ছাত্র  প্রেসিডেন্ট সি’কে একটি যৌথ চিঠি লেখেন, তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং আফ্রিকান যুবকদের তাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে আরও সুযোগ দেওয়ার জন্য সি এবং চীনা সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

চিঠির উত্তরে, সি তাদের প্রায়ই চীন সফর করতে এবং চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য চীনা ভাষার ভালো দখল অর্জনের পাশাপাশি চীন সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়া গড়ে তুলতে উত্সাহিত করেন।

২০১৮ চীন-আফ্রিকা বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময়, সি তাঁর আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন যে চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বের রিলেকাঠি এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেয়া হবে এবং চীন ও আফ্রিকা একসাথে কাজ করে, একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের প্রাণবন্ত সম্প্রদায় গড়ে তুলবে।

মাহমুদ হাশিম

সিএমজি বাংলা, বেইজিং।