চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নয়নের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
2024-08-30 18:52:07

মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফর বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের যে প্রচেষ্টা চলছে, তা কেবলমাত্র এই দুই দেশের জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রভাব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সহযোগিতা ও মতবিরোধ নিষ্পত্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে বেইজিংয়ের গণ-মহাভবনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান। এ সময় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, পরিবর্তনশীল ও জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সামনে বিভিন্ন দেশের উচিত একতা ও সমন্বয় জোরদার করা, বিভেদ ও সংঘাত বন্ধ করা। তিনি বলেন, দ্বার রুদ্ধ করা ও পিছনে ফিরে যাবার পরিবর্তে উন্মুক্তকরণ ও অগ্রগতি প্রত্যাশা করে মানুষ। দুটি বড় দেশ হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইতিহাস, জনগণ ও বিশ্বের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। দু’দেশকে বিশ্বের শান্তি ও অভিন্ন উন্নয়নে কাজ করা উচিত বলেও উল্লেখ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। তার আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য, সিপিসি’র বিদেশ বিষয়ক কার্যালয়ের মহাপরিচালক ওয়াং ই বেইজিংয়ে সালিভানের সঙ্গে ‘নতুন দফা কৌশলগত বিনিময়’ আয়োজন করেন। দু’পক্ষ এতে আন্তরিক ও গঠনমূলক আলোচনা করেছে। দু’পক্ষের আলাপ আলোচনা থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন-

১. বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা: চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ট্যারিফ ও বাণিজ্য বাধা কমানো, পারস্পরিক বিনিয়োগে সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে। একটি সুস্থ বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেবল দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।

২. পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসাথে কাজ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্যারিস চুক্তি অনুসারে, দুই দেশ কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে। উন্নত সবুজ প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়নেও একসাথে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের এই সহযোগিতা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

৩. গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা: প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও গবেষণায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসাথে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যসেবা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং স্পেস গবেষণায় যৌথ প্রচেষ্টা দুই দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়া, মহামারি প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়নে সহযোগিতা করা জরুরি।

তবে, এসব কিছুর আগে পরস্পরের মতবিরোধ নিষ্পত্তি করা জরুরি। এক্ষেত্রে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসা গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর উপায়। বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং সম্মেলনের মাধ্যমে উভয় পক্ষ তাদের উদ্বেগ ও মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করাই কল্যাণকর।

তা ছাড়া, জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO), এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে মতবিরোধ নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে উভয় দেশ বাণিজ্যযুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন এবং নিয়মাবলীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করা উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক হতে পারে।

পাশাপাশি, বিশ্বাস ও আস্থা তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বিভিন্ন আস্থা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। সামরিক সংলাপ বৃদ্ধি, তথ্য বিনিময়, এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো প্রসারিত করার মাধ্যমে উভয় দেশ তাদের সম্পর্ককে উন্নত করতে পারে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রভাব কেবল এই দুই দেশের জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য, পরিবেশ, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশ একে অপরের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। মতবিরোধগুলোর শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সংলাপ, কূটনীতি এবং পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্কের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

মোহাম্মদ তৌহিদ, সিএমজি বাংলা, বেইজিং।