চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (বৃহস্পতিবার) মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সঠিক কৌশলগত বোঝাপড়া স্থাপন করতে হয়, প্রথমে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বী বা অংশীদার এই মূল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। চীন, আশা করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এ দু’টি ভিন্ন সভ্যতা, ব্যবস্থা, ভিন্ন পথে যাওয়ার দেশ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান ও একসঙ্গে উন্নয়নের উপায় খুঁজতে পারবে এবং একই দিকে যাবে। সুলিভান যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে চীনের সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রাখবে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক অব্যাহত উন্নয়নের উপায় খুঁজে পাবে।
সুলিভানের এবারের চীন সফর হল চীনের সঙ্গে নতুন দফা কৌশলগত যোগাযোগ এবং দু’দেশের শীর্ষনেতার সান ফ্রান্সিসকো ঐকমত্য বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চীন প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, উভয়পক্ষ ‘অকপট, বাস্তব ও গঠনমূলক আলোচনা করেছে’ এবং অদূর ভবিষ্যতে দুই নেতার নতুন দফা যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করেছে। এবারের চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ সম্পর্কে হোয়াইট হাউস ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছে। এ থেকে দেখায়, উভয়পক্ষ পার্থক্য ও মতভেদ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে ইচ্ছুক। কিছু বিশ্লেষক বলেন, সুলিভান চীনে সফরের আগে বেইজিং স্পষ্টভাবে অবস্থান প্রকাশ করেছিল, এর উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, চীনের মূল স্বার্থকে সম্মান করার বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এজেন্ডার কারণে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষতি না করা, যাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক একটি স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য দিকে উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
বিগত কয়েক বছরে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষনেতার ফোনালাপ বা দু’পক্ষের বৈঠক হোক না কেন, চীন সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রকাশ করে: পৃথিবীতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের উন্নয়ন সুযোগ গ্রহণ, এবং দু’দেশের সম্পর্কের ভালো উন্নয়ন আশা করতে পারে।
এবারের যোগাযোগে চীন আবারও চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সঠিকভাবে সহাবস্থান করার একাধিক অবস্থান ও প্রস্তাব ব্যাখ্যা করেছে, উত্থাপন করেছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সঠিক পথে রাখার চাবিকাঠি হল দুই শীর্ষনেতার সঠিক নেতৃত্ব, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সংঘর্ষ ও প্রতিযোগিতা এড়ানোর চাবিকাঠি হল ৩টি যৌথ বিবৃতি মেনে চলা, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে সহযোগিতার চাবিকাঠি হল একে অপরের সঙ্গে সম-আচরণ করা, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার চাবিকাঠি হল জনমতের ভিত্তিকে সুসংহত করা, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অর্জনের চাবিকাঠি হল সঠিক বোঝাপড়া স্থাপন করা। এই ৫ ‘চাবিকাঠি’তে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নে চীনের সামগ্রিক সচেতনতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা প্রতিফলিত হয়।
সাক্ষাতে সুলিভান যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তা হল তারা নতুন স্নায়ুযুদ্ধে জড়াবে না, চীনের ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চায় না, চীনের বিরুদ্ধে জোটকে শক্তিশালী করবে না, ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ সমর্থন করে না এবং চীনের সঙ্গে সংঘাত করার কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সমান উপায়ে একে অপরকে বিবেচনা করা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই পৃথিবীতে দীর্ঘ সময়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে সম্মত হয়েছে। এ সব বক্তব্য ইতিবাচক, তবে মূল বিষয় হল যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। কিন্তু তারা বলে একভাবে আর করে অন্যভাবে। চীনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা, দক্ষিণ চীন সাগর সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়া, তাইওয়ানের নেতাকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আমন্ত্রণ করা ইত্যাদি আচরণ চীনের বৈধ অধিকার এমনকি মূল স্বার্থকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনকে আটকে দেয়া ও দমন করার কৌশল পরিবর্তন না করে, তাহলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে ভালো হবে না।
(তুহিনা/হাশিম/লিলি)