আজকের অনুষ্ঠানে চীনের হংকংয়ের একজন জনপ্রিয় গায়িকার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো, তার নাম চেন মেই লিং। তিনি সুন্দর চেহারা ও শক্তিশালী কণ্ঠের জন্য পরিচিত। গত শতাব্দীর ৭০ ও ৮০’র দশকে তিনি চীনের হংকং তাইওয়ান এবং জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে তার কিছু সুন্দর গান শুনবো। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুনুন ছেন মেই লিংয়ের একটি সুন্দর গান ‘বিচ্ছিন্ন করতে পারে না’।
ছেন মেই লিং ১৯৫৫ সালে চীনের হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার খুব উচ্চ মানের শৈল্পিক প্রতিভা দেখা যায়। প্রাথমিক স্কুল থেকেই তিনি গান গাওয়া ও পারফর্ম করা শুরু করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করেন। এই অ্যালবামের সব গান অন্যান্য গায়কের গান, তবে ছেন মেই লিংয়ের নতুন গাওয়া গান হংকংয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়। তার ১৭ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে যে কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন, তা হংকংয়ের পাশাপাশি মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডেও বেশ জনপ্রিয় হয়। বন্ধুরা, এখন আমরা একসঙ্গে শুনবো ছেন মেই লিংয়ের গাওয়া একটি সুন্দর ইংরেজি গান ‘you’re my everything’
১৯৭২ সালে জাপানের বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার মাসাকিরা হিরাও’র আমন্ত্রণে ছেন মেই লিং জাপানে গিয়ে একটি জাপানি অ্যালবাম রেকর্ড করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় পারফর্ম করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি অনেক ভক্ত পেয়ে যান। পরের বছর ছেন মেই লিং জাপানের রেকর্ড অ্যাওয়ার্ডসের শ্রেষ্ঠ নতুন গায়িকার পুরস্কার অর্জন করেন। বন্ধুরা, এখন শুনুন ছেন মেই লিংয়ের গাওয়ার একটি সুন্দর জাপানি গান ‘পাখি ফিরেছে’।
খুব জনপ্রিয় হলেও তখন ছেন মেই লিং মাত্র একজন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৭৪ সালে ছেন মেই লিং জাপানের সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আরও ভালোভাবে পড়াশোনার জন্য তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন---সাময়িকভাবে শোবিজ জগত থেকে ছেড়ে দেন এবং কানাডায় গিয়ে অধ্যয়ন করেন। জনপ্রিয় গায়িকা হবার পরও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ অনেকে বুঝতে পারেন না। তবে, তার মতে জ্ঞান শেখা আরও গুরুত্বপূর্ণ, নিজেকে উন্নত করার পর দর্শকদের আরও ভালো গান পরিবেশন করতে পারেন। বন্ধুরা, এখন শুনুন ছেন মেই লিংয়ের একটি সুন্দর গান ‘প্রেমের ঘূর্ণি’
১৯৭৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর ছেন মেই লিং হংকং ও শোবিজে ফিরে যান। পরের বছরে তিনি তার প্রথম ক্যান্টনিজ গান ‘বৃষ্টিতে কার্নেশন’ প্রকাশ করেন। অ্যালবামের প্রধান গান ‘বৃষ্টিতে কার্নেশন’ হংকংয়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। পরে তিনি আরও কিছু ক্যান্টনিজ অ্যালবাম প্রকাশ করেন এবং সবগুলোই বেশ ভালো সাড়া পায়। ১৯৮৩ সালে ছেন মেই লিং চীনের সংগীতের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘গোল্ডেন অ্যালবাম পুরস্কার’ অর্জন করেন, হংকং এবং চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রতিনিধিত্বকারী গায়িকা হয়ে ওঠেন। বন্ধুরা, এখন শুনুন ছেন মেই লিংয়ের একটি জনপ্রিয় গান ‘বৃষ্টিতে কার্নেশন’।
১৯৮৬ সালে ছেন মেই লিং বিয়ে করেন এবং একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। কাজের জন্য তাকে সন্তান নিয়ে বিভিন্ন দেশে পারফর্ম করতে হয়। সে সময়ে নারীদের বিষয়ে জাপানের সাধারণ ধারণা ছিল- সন্তান নিয়ে বাইরে কাজ করার চেয়ে বিয়ের পর বাড়িতে স্বামী ও সন্তানের যত্ন নেওয়া উচিত। তাই তার আচরণ জাপানে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে। তিনি ভাবেন, কেন নারীদের এত বেশি লিঙ্গ বৈষম্য সহ্য করতে হয়? এ সমস্যার কারণ খোঁজার জন্য ছেন মেই লিং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লিঙ্গ সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেন। ৪ বছর পর তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি লিঙ্গ সমতা প্রচার করেন এবং অনেক নারী এতে উত্সাহিত হয়। বন্ধুরা, এখন শুনুন ছেন মেই লিংয়ের গাওয়া উত্সাহপূর্ণ গান ‘Everything Must Change’।
২০০৬ সালে ছেন মেই লিং আনুষ্ঠানিকভাবে শোবিজ ছেড়ে দেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং কয়েকটি বই প্রকাশ করেন। বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমরা একসঙ্গে ছেন মেই লিংয়ের আরেকটি সুন্দর গান ‘সবচেয়ে সুন্দর সময় স্মৃতিতে রাখুন’ শুনবো। আশা করি, আপনারা তার গানগুলো পছন্দ করবেন।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান তাহলে এখানেই শেষ করছি। আশা করি, আমাদের অনুষ্ঠানে প্রচারিত গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। এখন বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন ও সুস্থ থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়ান।