চলতি প্রসঙ্গ: চীন-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের তাত্পর্য
2024-08-27 16:19:21

অগাস্ট ২৭: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক বসন্তের বাতাসের মতো, যা শান্তি ও উন্নয়নের বার্তাবহ। ২০২৪ সালের চীন-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন আগামী ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে, চীন ও আফ্রিকা আবারও ইতিহাসের একটি নতুন সূচনাবিন্দুতে দাঁড়িয়ে, যৌথভাবে দু’পক্ষের অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে। এই মহাসম্মিলনীর মধ্য দিয়ে কেবল যে চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বের গভীরতা প্রতিফলিত হবে, তা নয়; বরং দু’পক্ষের হাতে হাত মিলিয়ে আধুনিকায়নের পথে চলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাও এতে ফুটে উঠবে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে সমন্বয়ের প্রেক্ষাপটে, চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের উন্নয়ন দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ঐতিহ্যবাহী কাঠামোকে অতিক্রম করে গেছে এবং এটি একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং আফ্রিকান শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কৌশলগত নেতৃত্ব, চীন-আফ্রিকা সম্পর্কে নতুন প্রাণশক্তি ও চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতামূলক ফোরামের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন, নতুন যুগে দু’পক্ষের নেওয়া কৌশলগত বাছাই। এর উদ্দেশ্য, সংলাপ জোরদার করা ও সহযোগিতা গভীরতর করার মাধ্যমে, যৌথভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।

চীন ও আফ্রিকা আধুনিকায়নের পথে হাতে হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিকায়ন কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের  অনিবার্য ফল নয়, বরং সামাজিক বহুমুখী অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকও বটে। যদিও চীন ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অবস্থা ও উন্নয়ন-প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, তথাপি দু’পক্ষই আধুনিকায়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের ঐতিহাসিক কাজে ব্যস্ত রয়েছে। চীন ও আফ্রিকা উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারে, একে অপরের উন্নয়নের ফলাফল থেকে শিখতে পারে, এবং যৌথভাবে নিজ নিজ অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আধুনিকায়নের পথ অন্বেষণ করতে পারে। এতে কেবল দু’পক্ষের অর্থনৈতিক শক্তি ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা বাড়বে না, বরং বৈশ্বিক ব্যবস্থায় চীন ও আফ্রিকার বুদ্ধি ও শক্তি সঞ্চারিত হবে।

চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে, চীন-আফ্রিকা বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৮২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য এটি একটি নতুন রেকর্ড। চীন-আফ্রিকা বিনিয়োগ-সহযোগিতাও স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ, আফ্রিকাতে চীনের সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বিগত তিন বছরে, চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আফ্রিকার মানুষের জন্য ১১ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। চীন-আফ্রিকা অবকাঠামো সহযোগিতাও উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জন করেছে। আফ্রিকা চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশী ঠিকাদারী প্রকল্পের বাজার। গত দশ বছরে, আফ্রিকাতে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাক্ষরিত ঠিকাদারী প্রকল্প চুক্তির আর্থিক মূল্য ৭০০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ছিল। এর মধ্যে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি টার্নওভার সম্পন্ন করেছে। এটি পরিবহন, জ্বালানি, বিদ্যুত্, আবাসন ও জীবিকাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত, যা শক্তিশালীভাবে স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন জোরদার করেছে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতাও উল্লেখযোগ্য। মহাকাশ খাতে, আলজেরিয়া ও ইথিওপিয়াসহ বিভিন্ন আফ্রিকান দেশের জন্য, আবহাওয়া বা টেলিযোগাযোগ  উপগ্রহ  উত্ক্ষেপণ করেছে চীন। ই-বাণিজ্য খাতে, ‘সিল্ক রোড ই-বাণিজ্য’ সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য, চীন ও আফ্রিকার ভালো ভালো জিনিসের অনলাইন শপিং ফেস্টিভাল আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে, মালি, উগান্ডা ও ক্যামেরুনসহ সংশ্লিষ্ট আফ্রিকান দেশগুলোতে বিনিয়োগ করেছে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো।

চীন-আফ্রিকা সহযোগিতামূলক ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনের সুদূরপ্রসারী তাত্পর্য রয়েছে। এটি কেবল চীন ও আফ্রিকার সহযোগিতা আরও গভীর করবে না, বরং বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা পুনর্নির্মাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্মও যোগাবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)