এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। ভিসামুক্ত নীতির পরিসর বাড়ছে চীনে, পর্যটকের ঢল হাইনানে
২। হুয়ালিং গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা
৩। ঘুরে আসুন চীনের প্রাচীন গ্রাম উলং
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। ভিসামুক্ত নীতির পরিসর বাড়ছে চীনে, পর্যটকের ঢল হাইনানে
ভালো কূটনৈতিক সম্পর্কের জেরে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভিসামুক্ত চুক্তি করেছে চীন। ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে দক্ষিণ চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনান। সেখানে নেমেছে পর্যটকের ঢল। ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে দক্ষিণ চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনান। সেখানে নেমেছে পর্যটকের ঢল। এই বছরের প্রথমার্ধে, হাইনানে পর্যটক এসেছে প্রায় ৫ লাখ। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। চীনের জাতীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এসব তথ্য জানিয়েছে।
তথ্যে আরও দেখা গেছে, গত সোমবার চীন সরকার নতুন করে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ চুক্তি করে। এতে করে ভিসা ছাড়া মোট ৫৯টি দেশের জনগণ ৩৭টি প্রবেশপথ দিয়ে চীনে ঘুরে বেড়াতে পারবেন ১৪৪ ঘণ্টার জন্য। চীনে প্রবেশের দিন মধ্যরাত থেকে গণনা করা হবে ওই সময়।
প্রশাসন আরও জানিয়েছে, হাইনানে প্রবেশের ক্ষেত্রে পর্যটকদের হংকং ও ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের নিবন্ধিত ট্যুর গ্রুপের মাধ্যমে আসতে হবে। আর এতে করে চীনের পর্যটনঅঞ্চলগুলোর ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসাও বেশ উন্নতি করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও বলা হয়েছে, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে পর্যটক গ্রুপের প্রবেশের আগের দিন বিকাল ৪টার মধ্যে জাতীয় অভিবাসন প্রশাসনের সরকারি পরিষেবা প্ল্যাটফর্মে সীমান্ত পরিদর্শন সংস্থার কাছে ট্যুর গ্রুপের তথ্য ঘোষণা করতে হবে। এতে করে পাসপোর্ট স্ট্যাম্প এবং আগমনী ফরমের তথ্যপূরণ সময় বাঁচাবে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
২। হুয়ালিং গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা
চোখ মেললেই ধরা দেবে সবুজের হাতছানি ! এমনই একটি গ্রাম হুয়াংলিং। চীনের চিয়াংসি প্রদেশের এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ করে পর্যটকদের। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনগুলোতে প্রকৃতি মেলে ধরে তার চিরযৌবনা রূপ।
বসন্তের সময়টাতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন এই গ্রামে। হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে বুকে লাগান করছে হুয়াংলিং, এ কারণে গবেষকদেরও বেশ আকর্ষণ করে চীনের ঐতিহ্যবাহ এই গ্রাম।
গ্রামটিকে পর্যটকদের চোখে আরো আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে এক যুগ আগে থেকে নানা রকম উদ্যোগ নিয়ে আসছে চীনের স্থানীয় সরকার। বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি সুযোগ পায় এই খাতে বিনিয়োগের করার জন্য। সরকারের দারুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় গ্রামবাসীরা।
এরপর দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ঘরবাড়িগুলো পায় নান্দনিক রূপ, হয়ে ওঠে সুবিশাল ফার্ম হাউস। পাহাড়ের উপরে নির্মাণ করা হয় এমন কিছু ফার্ম হাউস যা আকর্ষণ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। রয়েছে বেশ কিছু দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল
এসব দোকানে কাজ করে স্থানীয় মানুষজন। এত সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় গ্রামবাসী। পরিসংখ্যান বলছে, দিনে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন নান্দনিক এই গ্রামে। সব মিলিয়ে হুয়াংলিং গ্রামের সুনাম ছড়িয়েছে চীনের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তরে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
৩। ঘুরে আসুন চীনের প্রাচীন গ্রাম উলং
চীনে এখন সাংস্কৃতিক পর্যটন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইয়ুননান প্রদেশের অনেক স্থান সাংস্কৃতিক পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এমনি একটি স্থান হলো উলং এনসিয়েন্ট ভিলেজ বা প্রাচীন গ্রাম।
ইয়ুননানের প্রাদেশিক রাজধানী কুনমিং সিটির ছ্যংকং জেলায় এর অবস্থান। ছ্যংকং জেলা আগে ছিল অরণ্য ও পাহাড়ি ভূমি। এখানে অনেকগুলো গ্রাম ছিল। বর্তমানে ছ্যংকং কুনমিং পৌর এলাকার মধ্যে থাকলেও এখানে অনেক গ্রাম রয়ে গেছে।
উলং প্রাচীন গ্রামকে বলা হয় প্রাচীন স্থাপত্যের জীবন্ত জাদুঘর। এখানে প্রাচীন আমলের অনেক বাড়িঘর স্থাপনা আগের মতোই রয়েছে। এটি একটি জেলেপল্লী বা মৎস্যজীবীদের গ্রাম। ছিসিং পর্বত এবং তিয়ানছি লেকের মাঝামাঝি অবস্থানে এই গ্রাম অবস্থিত।
তিয়ানছি লেক থেকে যারা মৎস্য আহরণ করতেন তাদেরই এক সম্প্রদায় এখানে বাস করতেন। এই গ্রামে অনেক ঐতিহাসিক ও প্রাচীন বাড়ি রয়েছে। এগুলো পাথরের, মাটির ও কাঠের তৈরি। প্রাচীন চীনের বাস্তুবিদ্যা বা গৃহনির্মাণ কৌশলে ঘরের দরজা কোনমুখী হবে, ঘরে প্রবেশের সময় কোথায় চাইম ঝুলানো হবে সেগুলো খুব চিন্তাভাবনা করে নির্ধারণ করা হতো। উলং গ্রামে এই প্রাচীন বাস্তুবিদ্যার প্রয়োগ করা হয়েছে।
ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় ও ইয়ুননান মিনজুবিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছ্যিংকং জেলায় রয়েছে। এসব স্থান থেকে এই প্রাচীন গ্রামটি বেশ কাছে অবস্থিত।
প্রাচীন এই গ্রামে বেড়াতে গেলে পর্যটকরা দেখতে পাবেন কাঠের কিছু চমৎকার কারুকার্য, পাথরের ভাস্কর্য ও স্থাপত্য। এখানকার প্রকৃতিক দৃশ্যও খুব সুন্দর। গ্রীষ্মের শেষে জলাশয়গুলোতে প্রচুর পদ্মফুল চোখে পড়ে।
প্রাচীন গ্রাম হলেও এখানে আধুনিক সুযোগ সুবিধাও রয়েছে। হোমস্টের সুবিধা আছে। আছে বুক ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট এবং আর্ট মিউজিয়াম। রেস্টুরেন্টে ইউননানের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য পাবেন। এখানে হালাল ফুড রেস্টুরেন্টও রয়েছে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী