১। চাঁদের মাটি থেকে পানি আহরণের পদ্ধতি আবিষ্কার চীনে
২। চীনে রকেট প্রযুক্তিতে তৈরি হলো হৃদরোগের যন্ত্র
৩। শীর্ষ উদ্ভাবনী পুরষ্কার পেলো চীনের পানি শোধনাগার প্রকল্প
চাঁদের মাটি থেকে পানি আহরণের পদ্ধতি আবিষ্কার চীনে
চাঁদের মাটি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে পানি আহরণের যুগান্তকারী একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘ইনোভেশন’ জার্নালে চীনা বিজ্ঞানীদের এ অসাধারণ কৃতিত্বের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে।
ছাং’এ-৫ মিশনে পাওয়া চাঁদের নমুনা বিশ্লেষণের পর চাঁদের মাটি থেকে পানি আহরণের এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন চীনের গবেষকরা। যা ভবিষ্যতের চন্দ্রমিশনে বড় বিপ্লব ঘটাতে পারে এবং এতে করে চাঁদের বুকে স্টেশন তৈরির সম্ভাব্যতাও বেড়ে গেছে অনেকখানি।
চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে নিংবো ইনস্টিটিউট অব ম্যাটেরিয়ালস টেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষকদের আবিষ্কৃত এ পদ্ধতিতে এক টন চাঁদের মাটি থেকে ৭৬ কেজি পর্যন্ত পানি উৎপাদন করা যাবে।
গবেষক ছেন সিয়াও জানিয়েছেন, হিলিয়াম পাওয়ার আশায় চাঁদের মাটিতে থাকা টাইটেনিয়াম আয়রনের আকরিককে প্রচণ্ড তাপে উত্তপ্ত করার পরই সেখানে পানির বুদবুদ তৈরি হতে থাকে।
গবেষকরা আরও জানতে পেরেছেন, কোটি বছর ধরে চাঁদের মাটির খনিজ উপাদানগুলো সৌর বিকীরণের সংস্পর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং তাতে যথেষ্ট হাইড্রোজেনের মজুদ রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে ওই হাইড্রোজেন খনিজগুলো আয়রন অক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লোহা ও প্রচুর পানি উৎপন্ন করে। তারা জানান, চাঁদের মাটি এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে তরল হয় এবং এই রূপান্তরের সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প উন্মুক্ত হয়। এ পদ্ধতিতে এক গ্রাম চাঁদের মাটি থেকে প্রায় ৫১ থেকে ৭৬ মিলিগ্রাম পানি পাওয়া সম্ভব বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
ছাং’এ-৫ প্রোব চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মোট এক হাজার ৭৩১ গ্রাম শিলা এবং মাটি নিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল। চলতি বছরের জুনে চীনের ঐতিহাসিক ছাং’এ-৬ প্রোব চাঁদের দূরবর্তী প্রান্ত হতে এক হাজার ৯৩৫ গ্রাম নমুনা নিয়ে আসে।
২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে মনুষ্যবাহী যান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে চীনের।
চীনের এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি মহাকাশ গবেষণার নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। চাঁদে পানি থাকা মানে সেখানে মানুষের বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে চাঁদে মানব বসতি গড়ার স্বপ্নও সত্যি হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ
|| সম্পাদনা: শুভ আনোয়ার
চীনে রকেট প্রযুক্তিতে তৈরি হলো হৃদরোগের যন্ত্র
গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য চীনের থিয়েনচিনের টিইডিএ ইন্টারন্যাশনাল কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় রকেট নির্মাতা চায়না একাডেমি অব লঞ্চ ভেহিকেল টেকনোলজি তৈরি করে হার্টকন নামের একটি প্রযুক্তি। এবার সেই হার্টকনের আরও উন্নত দ্বিতীয় সংস্করণ আসতে চলেছে বাজারে।
হার্টকন মূলত একটি বায়োমেডিক্যাল ডিভাইস, যা হৃদরোগের চিকিৎসায় একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। এই ডিভাইসটি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং হৃদরোগের জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা আরও ভালোভাবে বাঁচতে পারবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
চীনের তৈরি হার্টকন নামের কৃত্রিম হার্টটি একটি পাম্প হিসেবে কাজ করে যা পুরো শরীরে রক্ত সরবরাহ করে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার লক্ষণগুলোর উপশম করে। প্রকল্পের প্রকৌশলীরা বলছেন, ডিভাইসটি রকেটের সার্ভমেকানিজমের মতো কাজ করে, যা মূলত হাইড্রোলিক পাম্প পদ্ধতিতে চলে।
২০২২ সালে, ডিভাইসটি চীনের বাজারের অনুমোদন লাভ করে এবং এখন পর্যন্ত ১৯০ জনেরও বেশি চূড়ান্ত পর্যায়ের হৃদরোগীকে এটি সেবা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই যন্ত্রের ব্যবহারহারীরা রোগীদের কোমরে একটি ছোট কন্ট্রোলার পরতে হয়, যা আকারে একটি মোবাইল ফোনের সমান। মেশিনটি রক্ত পাম্পের গতি, প্রবাহ, শক্তি এবং হৃদস্পন্দনের ডেটা রেকর্ড করে। একটি পাতলা তারের সংযোগের মাধ্যমে যন্ত্রটি সারা শরীরে রক্ত পাম্প করতে সহায়তা করে।
টিইডিএ হাসপাতালের লিউ সিয়াওছেং জানালেন, চীনে কমপক্ষে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ হার্ট ফেইলিউরে আক্রান্ত। চীনে তৈরি এই কৃত্রিম হার্ট ডিভাইসটি তুলনামূলক সস্তা। নতুন হার্টকন-২ মডেলটি হবে আরও ছোট ও হালকা। নতুন সংস্করণটি নিয়ে এখন আরও কিছু পরীক্ষা চলছে।
|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ
|| সম্পাদনা: শুভ আনোয়ার
শীর্ষ উদ্ভাবনী পুরষ্কার পেলো চীনের পানি শোধনাগার প্রকল্প
‘গ্লোবাল গ্র্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পুরষ্কার জয়ী হয়েছে চীনের বর্জ্যপানি শোধনাগারের একটি প্রকল্প। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশন (আইউব্লিউএ) এ পুরষ্কার প্রদান করে।
কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব পানি সম্মেলন ও প্রদর্শনীতে’ ‘স্টিমুলেটিং টেকনোলজি অ্যান্ড মার্কেট ট্রান্সফরমেশন: চায়না'স স্যুয়েজ রিসোর্স কনসেপ্ট প্ল্যান্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি শীর্ষ উদ্ভাবনী পুরষ্কার লাভ করে। সম্মেলনে বর্জ্যপানি পরিশোধন প্ল্যান্ট কমিটি এবং সিএসডি ওয়াটার সার্ভিস কোম্পানি লিমিটেডের হাতে এ পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তন, পানির অভাব এবং টেকসই জীবন যাপনের চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা। চীনের এই প্রকল্পটি প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার নষ্ট হওয়া পানিকে পরিষ্কার করে নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০ হাজার ঘন মিটার বর্জ্য পানি পরিশোধন করা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, এ প্রকল্পটি পানি সম্পদের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, কৃষিকাজ এবং সারা বিশ্বে টেকসই বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনার একটি মডেল। চীনের এমন উদ্ভাবন এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং ভবিষ্যতে আরও উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় উৎসাহ দেবে।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী