এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। চীনের পর্যটনে নতুন সংযোজন
২। আনন্দ উল্লাসে মুখর চীনের পর্যটন গন্তব্যগুলো
৩। ঘুরে আসুন ইয়ুননান মিনজু গ্রাম
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। চীনের পর্যটনে নতুন সংযোজন
একটি দেশ তার পর্যটনশিল্পকে আকর্ষণ করার জন্য সর্বোচ্চ কতটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে? এর সঠিক উত্তর কারও জানা নেই। তবে চীন এবার পর্যটক আকর্ষণ করতে ৩৭ হাজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। বিশ্বের পর্যটন খাতে এটি নিঃসন্দেহে এক বিশাল সংযোজন। এই গ্রীষ্মে দেশটির ৪ হাজারের বেশি জায়গায় এই ইভেন্টগুলো সফলভাবে আয়োজিত হয়েছে।
চীন এশিয়ার বৃহৎ বিচিত্র এবং চমকপ্রদ দেশ হিসেবেও জনপ্রিয়। চীনের সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এ দেশের খাবারের বৈচিত্র্য এর প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলে।
দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মা লি গট এ সপ্তাহের শুরুতে জানান, কার্যক্রমগুলো সাংস্কৃতিক ও পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য চীনের প্রচেষ্টার অংশ। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য একটি— উন্নত জীবনযাত্রার জন্য জনসাধারণের প্রত্যাশাগুলো পূরণ করা। জাদুঘর এবং পর্যটক আকর্ষণের জন্য শুধু দিন নয়, রাততেও কাজে লাগাতে চায় চীন।
মা লি আরও জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের অংশীদারদের সাংস্কৃতিক ও পর্যটন ব্যয় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ছিল পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে টিকিট ছাড় অনুষ্ঠান উপভোগ এবং ভোক্তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্যান্য প্রণোদনা।
আঞ্চলিক এবং জাতিগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে, এমন সব সাংস্কৃতিক প্রকল্পের বিকাশের জন্যও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন কর্তৃপক্ষ। ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য সাংস্কৃতিক এবং পর্যটন খাতের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে দেশটির সরকার।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। আনন্দ উল্লাসে মুখর চীনের পর্যটন গন্তব্যগুলো
শিশুদের কলকাকলিতে মুখোর সুইমিংপুল। দেখে মনে হবে এক ঝাঁক ছোট পাখির মেলা। আবার আকাশ থেকে মেঘের মত করে ঝরে পড়ছে রঙ্গিন বুদবুদ। যা কিনা মনে করিয়ে দেবে শীতের সকালের স্নিগ্ধ তুষারের কথা। আর এই সব পেয়ে আনন্দে আত্মহারা শিশুরা।
এখানে শিশুরা মেতেছে জলকেলি কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে জলযুদ্ধে। আবার কেউ কেউ জল বন্দুক নিয়ে ছুড়ছে জলেরগুলি। গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড তাপ থেকে পর্যটকদের প্রশান্তি দিতে এমন সব আয়োজন করেছে চ্যচিয়াং প্রদেশের থোংসিয়াং শহরে অবস্থিত ফুয়ুয়ান ফ্যাশন রিসোর্টটি।
পরিবার আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে এমন অনন্দের মুহূর্ত দারুণভাবে উপভোগ করছেন শিশুরা।
পর্যটক লু ইয়ানখান বলেন, "এখানের পরিবেশ শীত কালের মত । আমি বুদবুদ দেখে অনেক মজা পেয়েছি। আমি আমার গ্রামের সব ছেলেমেয়েদের এখানে নিয়ে আসতে চাই।"
শুধুমাত্র জলবিহারই নয়, রিসোর্টটিতে অন্যান্য অনেক সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য ঠাণ্ডা পানীয়, আইসড টি এবং সুস্বাদু গ্রীষ্মকালীন খাবারের আয়োজন রয়েছে। এছাড়া নদীর তীরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে এই রিসোর্টে।
এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা যেন গ্রীষ্মেই শীত উপভোগ করতে পারেন সেজন্য নেয়া হয়েছে দারুণ এক উদ্যোগ।
রিসোর্টের কর্মী উ খ্যসিন বলেন, "আমরা এখানে কৃত্রিম উপায়ে জলীয় কুয়াশা পদ্ধতি স্থাপন করেছি। গ্রাহকরা আইসড টি এবং তাজা ফল খাওয়ার সময় কুয়াশার মধ্যে ডুবে থাকবেন। এটি সত্যিই শীতল এবং আনন্দদায়ক।"
অন্যদিকে, সিংইয়ি শহরের মালিং নদীর ক্যানিয়ন দিনদিন জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হয়ে উঠছে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পর্যটকরা এখানের শান্ত জলপ্রপাত ও প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে যেতে পারেন। এই ঝর্ণার স্বচ্ছ জলের মৃদু সুর মনকে প্রশান্ত করে তোলে।
জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে কিছুটা প্রকৃতির কোলে নিজেকে ফিরিয়ে নিতে এখানে দিনদিন বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। গ্রীষ্মের অভিযাত্রীদের জন্য একটি শীতল আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এই পর্যটন স্থান।
পর্যটক চাং ইয়ান বলেন, "ক্যানিয়নের বিশালতা সত্যিই অসাধারণ, এটি কার্স্ট ভূতত্ত্বের একটি প্রধান উদাহরণ।"
পর্যটক লুও ইয়ং বলেন, "এটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। প্রকৃতি কতটা বিস্ময়কর। এই ক্যানিয়নে অনেক দুর্দান্ত জলপ্রপাত আছে। এটি বিশাল, চিত্তাকর্ষক এবং আরামদায়ক।"
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন পর্যটন মৌসুমের শীর্ষে মালিং নদীর ক্যানিয়ন। এরইমধ্যে ২লাখ ৮০হাজার দর্শনার্থী এখানে ভ্রমণ করেছেন। প্রতিদিন প্রায় ১৫হাজার দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসেন। এই মৌসুমে মোট ৬লাখ দর্শনার্থী এখানে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা।
প্রতিবেদন- নাজমুল হক রাইয়ান
সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। ঘুরে আসুন ইয়ুননান মিনজু গ্রাম
ইয়ুননান প্রদেশের ২৬টি জাতিসত্ত্বার বর্ণাঢ্য সংস্কৃতির পরিচয় পেতে হলে সবচেয়ে চমৎকার স্থান হলো ইয়ুননান মিনজু সুন। ইয়ুননান ন্যাশানালিটিজ ভিলেজ বা ইয়ুননানের জাতিসত্ত্বার গ্রাম নামে পরিচিত এই পর্যটন স্পট বেশ জনপ্রিয়। একে সংক্ষেপে ইয়ুননান এথনিক ভিলেজ নামেও ডাকা হয়।
সিশান ফরেস্ট পার্ক এবং তিয়ানছি লেকের খুব কাছেই এর অবস্থান। ৮৪ হেকটর এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই পার্ক। এরমধ্যে ৩১ হেকটর এলাকা জুড়ে রয়েছে জলাশয়। সারাদিন ধরে বেড়ানোর জন্য এই জায়গা অত্যন্ত উপযোগী। এখানে ঢোকার মুখেই রয়েছে বিশাল তোরণ। সোনালি ফিনিক্স পাখি এবং সাদা হাতির ভাস্কর্য রয়েছে শুরুতেই।
পার্কের ভিতরে ছোট ছোট এলাকায় একেকটি জাতির গ্রাম নাম দিয়ে তাদের বাড়িঘর, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র সাজানো রয়েছে এমনভাবে যেন সত্যি সত্যি কোন এথনিক গ্রামে ভ্রমণের অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
পার্কের ঢোকার পর প্রথমে দেখতে পাবেন তাই জাতির গ্রাম। এখানে তাই জাতির ঐতিহ্যবাসী বাসগৃহ, তাদের অলংকার পোশাক ইত্যাদি রয়েছে। রয়েছে একটি প্যাগোডা। বিভিন্ন রকম প্যাভিলিয়ন ও সেতু রয়েছে যেগুলো খুবই সুন্দর। ই জাতির গ্রামে রয়েছে সূর্যঘড়ি, বড় সূর্যচত্বর, বাঘ, হাতি ও নানারকম টোটেমের ভাস্কর্য।
পাই জাতির সাদা রঙের সুদৃশ্য গৃহগুলোও বেশ আকর্ষণীয়। এখানে তাই, ইয়াও নাসি, চিংপো, হানি, চুয়াংসহ বিভিন্ন জাতির গ্রাম রয়েছে।
বিভিন্ন জাতির মানুষের বাসগৃহ বাঁশ, কাঠ, পাথর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। এর উপর বিভিন্ন রকম ছবি আাঁকা ও কাঠের খোদাই করা দরজা রয়েছে। এই পার্কে দিনের বেলাতে ভ্রমণ করা যায়। আবার রাতে কোন ইভেন্ট থাকলে সেসময়ও ভ্রমণ করা যায়।
এখানে প্রায়ই বিভিন্ন লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন থাকে। যেমন ই জাতির মশাল প্রজ্জ্বলন, তাই জাতির পানি ছিটানো উৎসব, নববর্ষ উদযাপন।
এখানে বিভিন্ন জাতির ঐতিহ্যবাহী খাদ্যের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এরমধ্যে হালাল খাদ্যের রেস্টুরেন্টও আছে। রয়েছে অনেকগুলো সুভেনির শপ। এসব সুভ্যেনির শপে বিভিন্ন জাতির কারুশিল্পের সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, অলংকার ইত্যাদি পাওয়া যায়।
ইয়ুননান মিনজু সুন পার্কে বেড়াতে গেলে সারাদিনের জন্য যুাওয়া ভালো। পাহাড়ি প্রকৃতির শোভা আর লোকজ সংস্কৃতির চোখ জুড়ানো পরিবেশনা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। পার্কে প্রবেশের জন্য টিকেট কাটতে হবে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী