১। ফ্রেইলটি ম্যানেজমেন্টে কমবে অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকি
২। চীনের তৈরি টিউমারের ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনুমোদন
৩। চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব
ফ্রেইলটি ম্যানেজমেন্টে কমবে অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকি
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানব শরীরের দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা। এর মধ্যে অন্যতম হলো অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা অ্যারিথমিয়া। অ্যারিথমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদযন্ত্র দ্রুত, ধীর বা অনিয়মিতভাবে স্পন্দিত হতে পারে। যা স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তবে সক্রিয় ফ্রেইলটি বা বার্ধক্যজনিত শারীরিক দুর্বলতা ব্যবস্থাপনা একজন বয়স্ক ব্যক্তির অ্যারিথমিয়া বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ঝুঁকি কমাতে পারে। সম্প্রতি একদল চীনা গবেষক এটি আবিষ্কার করেছেন।
এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল ‘ক্যাচেক্সিয়া, সারকোপেনিয়া অ্যান্ড মাসল’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। ফ্রেইলটি ম্যানেজমেন্ট হলো একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে বিভিন্ন ধরনের যত্ন ও পরিষেবা প্রদান করা।
হুয়াচোং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অধিভুক্ত থোংচি হাসপাতালের গবেষক চাং ছুনথাইয়ের নেতৃত্বে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণায় যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্কের ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্রেইলটি সিন্ড্রোম, একটি বয়স-সম্পর্কিত ব্যাধি যা বিপাকীয় রোগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এছাড়া শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস, পেশী দুর্বলতা, ক্লান্তি বৃদ্ধি বা অসুস্থ হলে সুস্থ হতে বিলম্ব হয়।
সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর এর স্পষ্ট প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, ফ্রেইলটি এবং অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকির বিষয়টি এতদিন আড়ালেই ছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রি-ফ্রেইলটি এবং ফ্রেইলটি অবস্থার সঙ্গে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (এএফ) এবং অন্যান্য অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে। ফ্রেইলটি বা প্রি-ফ্রেইলটি অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের অ্যারিথমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল।
চাং জানান, এই গবেষণা দেখা গেছে অ্যারিথমিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় ফ্রেইলটি ব্যবস্থাপনা খুবই কার্যকর
তিনি বয়স্কদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়ামের পাশাপাশি মানসিকভাবে ভালো থাকার মতো বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বয়স্কদের জন্য সক্রিয় ফ্রেইলটি ব্যবস্থাপনা কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও এটি একটি কার্যকর উপায়। তাই, বয়স্ক ব্যক্তিদের উচিত নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিজের জন্য উপযুক্ত শারীরিক কার্যকলাপের একটি রুটিন তৈরি করা। পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত বয়স্কদের দিকে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
চীনের তৈরি টিউমারের ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনুমোদন
ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরিতে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো চীন। দেশটির তৈরি ক্যান্সারের এপস্টেইন-বার ভাইরাস পজিটিভ টিউমারের ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চীনের ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওষুধ মূল্যায়ন কেন্দ্র এ অনুমোদন দিয়েছে।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতুতে অবস্থিত ওয়েস্টজেন বায়োফার্মা নতুন এ ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে। এ বছরের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন থেকেও অনুমোদন পেয়েছে এ ভ্যাকসিন।
ওয়েস্টজেন বায়োফার্মার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সোং সিয়াংরং জানান, ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার এপস্টেইন-বার ভাইরাসকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন হিসেবে শনাক্ত করেছে এবং এটি প্রথম আবিষ্কৃত মানব অনকোজেনিক ভাইরাস। ভাইরাসটি নাসোফেরিনজিয়াল কার্সিনোমা, লিম্ফোমা এবং গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারসহ ১০টিরও বেশি ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কোম্পানিটি যতো দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিনের প্রয়োগ প্রচারের জন্য সারা দেশে ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনা করবে। যদিও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অর্থ এই নয় যে ভ্যাকসিনটি এখনই ব্যবহারের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকরী। এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতে এই ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওয়েস্টজেন বায়োফার্মা আশা করছে যে এই এমআরএনএ ভ্যাকসিনটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি বড় অগ্রগতি হবে এবং তারা দ্রুত এটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব
পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে দূরত্ব বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। যৌথভাবে এ গবেষণাটি করেছে চীন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং আয়ারল্যান্ডের গবেষকরা। এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’ এ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, বিগত ৬৫ থেকে ২৮ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্ব প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এক দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২.২ ঘণ্টা বেড়েছে।
এমনকি পৃথিবীর ঘূর্ণনও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীর হয়ে আসছে। কারণ হিসেবে এই বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীতে জোয়ারের অপচয় বা টাইডাল ডিসিপেশনের কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন সময়ের সাথে সাথে ধীর হয়ে আসছে, তবে এই হ্রাসের হার কতোটুকু কিংবা কতো দ্রুতই পৃথিবীর ঘূর্ণন স্থীর হয়ে আসছে সে বিষয়ে কোনও তথ্য গবেষণাপত্রে তুলে ধরা হয়নি।
জোয়ারের অপচয় হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে জোয়ারের শক্তি তাপে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরে ধীরে স্থীর হচ্ছে আর এ কারণে চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন আরও ধীরে হবে। এর ফলে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকবে। আবার, চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর জোয়ার-ভাটাও কমে যাবে। শুধু তাই নয় এই টাইডাল ডিসিপেশনের ফলে জোয়ারের উচ্চতা ও সময় পরিবর্তন হতে পারে। এছাড়া জলবায়ু ও পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব পরবে।
অতীতে পৃথিবী কত দ্রুত ঘুরতো সে তথ্য খুঁজে বের করতে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া ৮টি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভূতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা একটি ফিজিক্যাল টাইডাল মডেল তৈরি করেছেন। এই মডেলটি পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা এবং ঘূর্ণনের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।
বিগত ৬৫ কোটি থেকে ৫০ কোটি বছর এবং ৩৫ কোটি থেকে ২৮ কোটি বছর আগের দুটি সময়কালে পৃথিবীর ঘূর্ণন ব্যাপকভাবে ধীর হয়েছিল।
গবেষণা পত্রে আরও বলা হয়েছে, এই দুটি সময়কাল প্রায় ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ এবং পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাণী বিলুপ্তির সময়ের সঙ্গে মিলে যায়। আবার এই দুটি সময়কালেই সমুদ্রের প্রাথমিক বাস্তুতন্ত্রের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এবং জীবনের বিবর্তনের গতিপথকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
ছেংতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মা ছাও জানান, পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীর হওয়ার কারণে জলবায়ু, পরিবেশ এবং জীবন বিবর্তনের বিষয়গুলো অনুসন্ধানে এই গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক ভিত্তি রয়েছে।
মা জানান, গবেষক দলটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের পরিবর্তন এবং পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র, জোয়ারের প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক আরও গভীরভাবে অধ্যয়ন করবে যাতে আরও ব্যাপক ও নির্ভুল বিবর্তন মডেল তৈরি করা যায়।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী