গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক পরামর্শমূলক গণতন্ত্র হল চীনা-শৈলীর সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটি অনন্য রূপ। এটি জনগণের মধ্যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় ব্যাপক আলোচনা করে এবং ঐকমত্য গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। এটি ৭০ বছর ধরে নয়া চীনে অনুশীলন করা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে যে, জনগণকে কেন্দ্র করার অর্থ হচ্ছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে দেশ শাসন করার সময় জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা করতে হবে, যাতে জনগণকে সত্যিকার অর্থে প্রভু হিসেবে গড়ে তোলা যায়। দেশের নির্বাচনী গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক পরামর্শমূলক গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ হল চীনা-শৈলীর সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
‘চীনের পার্টি ব্যবস্থা’ শ্বেতপত্রে বলা হয়: রাজনৈতিক পরামর্শমূলক গণতন্ত্রের অনন্য সুবিধা হল এটি সেই সমস্যার সমাধান করে যে, নির্বাচনী গণতন্ত্রে নাগরিকদের ভোটের ব্যতীত সত্যিকারের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয় এবং ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচারে’ সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘন এড়িয়ে যায় না। প্রধান ইস্যুতে পূর্ণ আলোচনা কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাকেই সম্মান করে না, তবে সংখ্যালঘুদের যুক্তিসঙ্গত দাবিগুলোকেও মিটমাট করে এবং সর্বাধিক পরিমাণে জনগণের গণতন্ত্রের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারে। পরামর্শমূলক গণতন্ত্র ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে, রাজনৈতিক পার্টির মধ্যে পরামর্শ, গণকংগ্রেসে পরামর্শ, সরকারী পরামর্শ, সিপিপিসিসি’র পরামর্শ, জনগণের সংগঠনে পরামর্শ, তৃণমূলে পরামর্শ এবং সামাজিক সংগঠনে পরামর্শসহ পরামর্শের চ্যানেলগুলো রয়েছে, যার মাধ্যমে জনগণের বিস্তৃত ও সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। তাদের মধ্যে, চীনা গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্যরা প্রতি বছর প্রস্তাব ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের জীবন-জীবিকার বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করেন এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত, সিপিপিসিসি জাতীয় কমিটি সমাজের সর্বস্তরের সিপিপিসিসি সদস্যদের কাছ থেকে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৮০৭টি প্রস্তাব পেয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ২৯৯টি গ্রহণ করা হয়েছে, এবং ১২ হাজার ৯৬টি সামাজিক পরিস্থিতি ও জনমতের তথ্য সংকলন ও হস্তান্তর করেছে এবং অধিকাংশই গৃহীত এবং বাস্তবায়িত হয়েছে। এই সুচিন্তিত গণতন্ত্রের প্রশস্ততা ও গভীরতা বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিচারে অতুলনীয়। চীন কেন রাজনৈতিক পরামর্শমূলক গণতন্ত্রের রূপ গ্রহণ করেছে তার কারণ মূলত চীনের জাতীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
আমরা সবাই জানি, চীন একটি বৃহৎ দেশ যেখানে বিশাল জনসংখ্যা, বিশাল ভূখণ্ড এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে। এর মানে হল যে যদি মাত্র ১০% মানুষ একটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে, তবুও ১৪০ মিলিয়ন মানুষ এটির বিরোধিতা করে। সত্যিকারের মানুষ-ভিত্তিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা হতে, আমরা ১০ শতাংশের কণ্ঠকে উপেক্ষা করতে পারি না। তাই, চীন জনগণের অত্যাবশ্যক স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাধারণ ভোটিং ব্যবস্থায় ‘বিজয়ী-সব-পাবে’ পদ্ধতি ব্যবহার করে না, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময়, চীন বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে জনমতকে গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক ব্যাপার বা জনগণের জীবিকার সাথে সম্পর্কিত প্রধান বিষয়গুলো কেন্দ্র করে বিভিন্ন পরামর্শ মঞ্চের মাধ্যমে জনগণের মতামত সংগ্রহ করে এবং সামাজিক ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, যা নির্বাচনী গণতন্ত্রের ত্রুটিগুলো পূরণ করে এবং দলটির যুক্তিসঙ্গত রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে প্রসারিত করে।
জনমতের অভিব্যক্তি ‘গণতন্ত্র’ প্রতিফলিত করে, এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ‘কেন্দ্রীকরণ’ প্রয়োজন। এটি পশ্চিমা ধারণা থেকে ভিন্ন, কেবল ‘স্বাধীন’ আলোচনা অনুসরণ করে, চীনের পরামর্শমূলক গণতন্ত্র একটি বিস্তৃত গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় এবং ঐক্য অর্জনের জন্য গুরুত্ব দেয়। তাই, আধুনিককালে চীনা পরামর্শমূলক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও কেন্দ্রিকতার নীতি বাস্তবায়ন করে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ব্যাপক পরামর্শ ও আলোচনার গণতন্ত্র প্রয়োগ করা হয়। একদিকে, এটি বহু পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্ত পক্ষের মতামত ও পরামর্শকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে। অন্যদিকে জনগণের সামগ্রিক স্বার্থের উপর ভিত্তি করে বহুমুখী আলোচনার পর কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যার মাধ্যমে দেশটি পরামর্শমূলক গণতন্ত্রের কারণে রাজনৈতিক পক্ষাঘাত এবং সামাজিক বিভাজনের দিকে পরিচালিত হবে না এবং কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে রাজনৈতিক তত্ত্বাবধান, সংস্কার ও উদ্ভাবনের অভাব হবে না।
(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)