‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৮২তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. রাষ্ট্র গঠনে দায়িত্ব পেলেন যে দুই তরুণ
২. ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের তরুণরা
৩. পর্বতারোহণে চীনা তরুণদের অবস্থান
১. রাষ্ট্র গঠনে দায়িত্ব পেলেন যে দুই তরুণ
সম্প্রতি বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দুই তরুণ উপদেষ্টা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণ শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সম্প্রতি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ পান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই দুই সমন্বয়ক। দুজনই ছাত্র এবং সার্টিফিকেট অনুযায়ী দুইজনের বয়সই ২৬। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ উপদেষ্টা হলেন তারা।
তরুণরাও যে দেশের হাল ধরতে পারেন, তা প্রমাণ করতে চান এই দুই তরুণ উপদেষ্টা। গণমাধ্যমকে তারা জানান, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করাই তাদের লক্ষ্য। তারা আরও বলেন, শুধু পুরোনোরা নন, নতুনরাও দেশের হাল ধরতে পারেন।
নাহিদ ইসলাম ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তার বাড়ি ঢাকার বনশ্রীতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে বর্তমানে মাস্টার্স প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করছেন।
আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন।
২. ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের তরুণরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। জয় হয় তারুণ্যের। ছাত্রদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠন করা হয়। দেশে যখন ট্রাফিক পুলিশ ছিলনা, তরুণরা শৃঙ্খলা ফেরাতে নেমে পড়ে রাস্তায়, নিজের কাঁধে তুলে নেয় দায়িত্ব। কোন স্বার্থ চিন্তা না করে তারা রাষ্ট্র সংস্কার শুরু করে।
এভাবেই রোদ কিংবা বৃষ্টিতে, দিনে অথবা রাতে রাস্তায় তরুণ ছাত্ররা শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যস্ত। তারা গণতন্ত্র মুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছিল না তখন রাস্তার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়ে ছাত্র ছাত্রীরা । এদের স্বপ্ন এলোমেলো রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরানোর মত করে বিশৃঙ্খল দেশেরও সংস্কার করবে। স্কুল কিংবা কলেজের ছোট-বড় সকল তরুণ দেশকে ভালোবেসে আজ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমেছে । কারণ একটাই দেশপ্রেম।
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মৃতি রেখে যেতে, সেই সঙ্গে অপরিচ্ছন্ন দেয়ালকে নান্দনিক করতে তরুণেরা হাতে তুলে নেয় রং-তুলি। সেখানে তারা প্রকাশ করছে মনের কথাগুলো ছবি এঁকে, লিখে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ছাত্ররা রাস্তার খানা খন্দ ভরাট করতেও কাজ করছে। জঞ্জাল ও আবর্জনা পরিস্কারেও দেশের তরুণ সমাজ এগিয়ে এসেছে বিনা স্বার্থে ।
এভাবেই বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র সমাজ বিশ্বে ইতিহাস স্থাপন করেছে। ন্যায্য দাবি ও গণতনন্ত্রের মুক্তির জন্য রাস্তায় রক্ত দিয়ে তারা সরকার পতনে বাধ্য করেছে। ৫২, ৭১ এর মতো ২০২৪ এর ছাত্র আন্দোলন এভাবেই ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে মনে করেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদক : শাহানশাহ রাসেল
সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. পর্বতারোহণে চীনা তরুণদের অবস্থান
২০২০ টোকিও অলিম্পিকে, অলিম্পিক ইভেন্ট হিসেবে প্রথম শুরু হওয়া ইন্ডোর ক্লাইম্বিং বা পর্বতারোহণ চীনা তরুণদের ব্যাপক ভাবে আকৃষ্ট করেছে। চীনের তরুনরা এই সাহসী খেলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
চাইনিজ মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য ডেটা প্ল্যাটফর্মের একটি যৌথ প্রতিবেদনে দুই বছরেরও কম সময়ে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ ক্লাইম্বিং জিমে উল্লেখযোগ্যভাবে ৩১ শতাংশ অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে চীনে পর্বতারোহণ জিম সংখ্যা ছিলো ৪৮৫টি। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের জিম সংখ্যা ৬২২ ছাড়িয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৬ এ।
২০২৩ সালে, চীন ২৫ টি উচ্চ-স্তরের রক ক্লাইম্বিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অফ স্পোর্ট ক্লাইম্বিং আয়োজিত মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্টগুলো ছিলো। তরুণদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের জন্য এই প্রতিযোগিতায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ইভেন্ট কিশোর পর্বতারোহীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল।
পর্বতারোহী ওয়াং মিনহাও বলেন, " পর্বতারোহণ খুবই মজার। এটি আপনাকে প্রতি পদক্ষেপে ভাবায়, অনুভব করায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটি এই মুহূর্তে কী ঘটছে তার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে"।
পর্বতারোহণের জনপ্রিয়তার ঢেউ এখন ইন্ডোর এবং আউটডোর জিমের বাইরে প্রকৃতির প্রস্তর পাহাড়ে গিয়ে পড়েছে। টোকিও ২০২০ অলিম্পিক এ আত্মপ্রকাশের পর থেকে খেলাটি ব্যাপক উত্সাহ উদ্দীপনা ছড়িয়েছে।
লিউ মিংইউ বলেন, "যেহেতু ক্লাইম্বিং অলিম্পিকে একটি স্পোর্টস ইভেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাই আমরা এর জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি দেখছি। ক্লাইম্বিং হল ক্রমাগত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এটি খুবই উদ্দীপক কারণ আপনি একই পথে আরোহণ করলেও প্ররিবারের চ্যালেঞ্জ ভিন্ন ভাবে মোকাবিলা করতে হয়।"
সদ্য শেষ হওয়া প্যারিস অলিম্পিকে, পর্বতারোহীরা অলিম্পিকের চেতনা অনুভব করেন ক্লাইম্বিং ওয়াল পরিমাপ করে।
প্রতিযোগিতামূলক ক্লাইম্বিং ২০২০ সালে জাপানের টোকিওতে ৩২ তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে আত্মপ্রকাশ করে, যেখানে দুটি পর্বতারোহণ ইভেন্ট ছিলো পুরুষদের সম্মিলিত এবং নারীদের সম্মিলিত। প্যারিস ২০২৪ গেমসে পর্বতারোহীরা দুটি বিভাগে প্রতিযোগিতা করে: দ্রুত আরোহণ এবং বোল্ডারিং।
প্রতিবেদক : নাসরুল্লাহ রাসু
সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী