এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। ঘুরে আসুন সার্ফিং এর শহর ওয়াননিং
২। মহাকাশ থিমের পর্যটন
৩। শান্তির খুঁজে পিংথিয়ান লেকে পর্যটকরা
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮১তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। ঘুরে আসুন সার্ফিং এর শহর ওয়াননিং
চীনে আজকাল সার্ফিং বেশ জনপ্রিয় একটি জলক্রীড়া। বিশেষ করে গ্রীষ্মের ছুটিতে অনেকেই যাচ্ছেন সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন শহরে। তবে সার্ফিংয়ের জন্য প্রয়োজন হয় সুবিধাজনক সৈকত, উষ্ণ আবহাওয়া এবং বড় ঢেউ। এর সবকটিই রয়েছে ওয়াননিং শহরে। এজন্য পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে ওয়াননিং শহর।
দক্ষিণ চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের একটি শহর ওয়াননিং। এখানে রিইয়ুয়ে উপসাগরে সার্ফিং এর জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সার্ফিংকে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটন শিল্পও বিকশিত হচ্ছে। ফলে দ্রুত চাঙা হচ্ছে অর্থনীতি।
এই শহরে সার্ফিং শিল্প বেশ জমে উঠেছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে সার্ফিং। গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সার্ফিং ক্লাব। এসব ক্লাবের মাধ্যমে সার্ফিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
রিইয়ুয়ে উপসাগরের তীরে অবস্থিত ওয়াননিং পর্যটন গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পিছনে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে।
এখানকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তাপমাত্রা, পরিষ্কার পানি এবং বড় ঢেউ সার্ফিংয়ের জন্য চমৎকার স্থান হিসেবে এর আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
স্থানীয় প্রতিষ্ঠান শাকা সার্ফ ক্লাবের ম্যানেজার চাং ওয়েই জানান তাদের ক্লাব প্রায়ই বিভিন্ন রকম সার্ফিং ইভেন্ট এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর মাধ্যমে পর্যটক আকর্ষণ করা হয়।
বেইজিং থেকে আসা পর্যটক লি ইয়ুসিয়া বলেন, তিনি এখানে সার্ফিং শিখতে এসেছেন এবং অনেক নতুন বন্ধুও খুঁজে পেয়েছেন।
অলিম্পিকের একটি স্পোর্ট হলো সার্ফিং। এর ফলে এই জলক্রীড়ার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। ওয়াননিংয়ে সার্ফিং করতে আসছেন বিদেশি পর্যটকরাও। ইতালির একজন তরুণ পর্যটক মিশেল এখানে সার্ফিং করে দারুণ মজা পেয়েছেন। তিনি প্রতিদিন সকাল সাতটায় বেলাভূমিতে চলে যান সার্ফিং এর জন্য।
রঙিন সার্ফিং বোর্ড ভাড়া বা বিক্রির জন্য এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সুভ্যেনির শপে পাওয়া যাচ্ছে সার্ফিং বোর্ডের ছবি আঁকা নানা রকম সামগ্রী।
সার্ফিং ছাড়াও এখানে রয়েছে আরও কিছু আয়োজন। বেলাভূমিতে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে যেখানে গান বাজনাসহ বিভিন্ন রকম বিনোদনমূলক আয়োজন রয়েছে। রয়েছে উন্মুক্ত ক্যাফে। সৈকতে বারবিকিউ পার্টিরও আয়োজন রয়েছে। এসব কারণে বেলাভূমিতে রেস্টুরেন্টগুলোও জমে উঠেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে খাবার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আকর্ষণে প্রচুর পর্যটক আসেন।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
২। মহাকাশ থিমের পর্যটন
রুক্ষ্ম পাথুরে ও উঁচু টিলা। সেই সঙ্গে আছে রোভারের মতো দেখতে কিছু যান। দেখলে মনে হবে এ যেন ঠিক মঙ্গল গ্রহ। চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ার এ স্থানগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন এক পর্যটন। যেখানে বেড়াতে গেলে কারও বা পূরণ হবে মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন, আবার কেউ বা পাবেন ভিনগ্রহে ঘুরে বেড়ানোর স্বাদ।
মূলত গোবি মরুভূমির জন্য পরিচিত, কানসুর চিনছাং সিটি এটি। দেখতে যা প্রায় মঙ্গল গ্রহের মতোই। আর এখানে পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে মার্স সিমুলেশন সারভাইভাল এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার।
এই কেন্দ্রে আছে নিয়ন্ত্রণ কেবিন, জৈবিক কেবিন এবং মেডিকেল কেবিনসহ মোট নয়টি মডিউল। মডিউলগুলো মঙ্গল গ্রহে মহাকাশচারীদের জীবনযাপন এবং গবেষণার আবহে বানানো হয়েছে। একটি কেবিনে থেকে আরেকটিতে যেতে দর্শনার্থীদের পাড়ি দিতে হবে এয়ারলক। আবার প্রধান কন্ট্রোল কেবিনের মধ্য দিয়ে হেঁটে তারা দেখতে পাবে কী করে ভিনগ্রহে সবজি জন্মায়।
মহাকাশচারীদের উচ্চ গতির ও ঘূর্ণনের প্রশিক্ষণটা কেমন হয় সেটা সম্পর্কে ধারণা মিলবে এখানে।
এখানে ঘুরতে দর্শনার্থী বলেন, ‘এখানকার সেন্ট্রিফিউগাল ট্রেনিং সিমুলেশনটি বেশ কঠিন। এখন আমি কিছুটা বুঝতে পারছি মহাকাশচারীদের কতটা কঠিন প্রশিক্ষণের ভেতর যেতে হয়’।
শিশুদের জন্য এখানে আছে আলাদা বিজ্ঞান ক্যাম্প। এখানে তারা পরিবেশগত জরিপ, মঙ্গল গ্রহের চাষ পদ্ধতি এবং রকেট ডিজাইনের ধারণা পাবে হাতে-কলমে।
ইনার মঙ্গোলিয়ার উলানকাবে আছে উলানহাদা আগ্নেয়গিরি। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি রয়েছে স্পেসসুট পরে ছবি তোলার ব্যবস্থা।
পোশাক ভাড়া প্রদানকারী থু মুসে বলেন,‘এখানে মহাকাশচারীর পোশাকের জন্য ভাড়া হলো ঘণ্টায় ৮০ ইউয়ান। দিনে আমার আয় হয় প্রায় আট হাজার ইউয়ান।’
স্পেস-থিমযুক্ত পর্যটন শুধু স্পেসস্যুট ভাড়ার বাজারটাকে বাড়ায়নি, বরং স্থানীয় হোটেলের বুকিং ও খাবারের বেচাকেনাও বাড়িয়েছে।
স্থানীয় গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক ইয়িন ফেংচিয়ান বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৩০০ পর্যটকের জায়গা দিতে পারি। দিনে আয় হচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার ইউয়ান।’
এক তথ্যে দেখা গেছে, চীনের এ ধরনের মহাকাশ থিমের পর্যটন স্পটগুলোর জন্য বছরে টিকিট বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ হারে বাড়ছে এবং রকেট উৎক্ষেপণ দেখার জন্য পর্যটন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
৩। শান্তির খুঁজে পিংথিয়ান লেকে পর্যটকরা
পিংথিয়ান লেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হলো লেকের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক। এই সড়কের উভয় পাশে পরিষ্কার পানিতে মেঘমুক্ত নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি এত স্পষ্ট যে দেখে মনে হয় আকাশের মধ্যে দিয়ে শূন্যেভাসমান সড়ক! যেন গাড়ি এবং পর্যটকরা মেঘের উপর দিয়ে যাচ্ছেন বা পানির উপর হাঁটছেন। এই অবিশ্বাস্য দৃশ্যের জন্য অনেকেই এই লেককে 'আকাশের আয়না' বলে থাকেন।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে মুক্তি পেতে এক প্রশান্তির খোঁজে থাকা পর্যটকদের জন্য পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের নির্মল ‘পিংথিয়ান’ লেকের চেয়ে ভালো জায়গা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাইতো প্রতিবছর লেকটির স্বচ্ছ পানি, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে।
লেকের চারপাশে গাছপালা লাগানো পথে হাঁটতে হাঁটতে পর্যটকরা এই দৃশ্যপটের সতেজতায় মুগ্ধ হন, যেখানে সবুজ পাহাড় এবং পান্নার মতো সবুজ পানি একসাথে একটি অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে।
একজন পর্যটক জানান, পাহাড়ের ঘেরা এই লেকটি দেখে মনে হয় যে কোনও ছবি থেকে নেওয়া দৃশ্য। আমি এই গ্রীষ্মে সেতু দিয়ে এবং লেকের চারপাশে ঘুরেছি। বাতাস বইলে অনেক স্বস্তি মেলে।
এটি এমন এক স্থান যেখানে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশে যেতে পারবেন। এই লেকের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনার মনে দীর্ঘদিনের জন্য স্মৃতি রেখে যাবে।
প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী