তাঁদের গল্প কখনও বিবর্ণ হবে না!
2024-08-12 11:43:09

প্যারিস অলিম্পিকে নারী ক্রীড়াবিদদের অনেক গল্প বলা হয়েছে। স্ট্যানফোর্ড একাডেমিক এবং ফেন্সিং চ্যাম্পিয়ন জিয়াং মিন হুই, অতিরিক্তি সময়ে চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। ৫৮ বছর বয়সী টেবিল টেনিস অভিজ্ঞ প্রতিযোগী জেং জি ইং এবং ৪৬ বছর বয়সী সাহাকিয়ানের সাথে একটি খেলায় মুখোমুখি হন। দু’জনের বয়স যোগ করলে ‘১০৪ বছর’। দু’জন খেলোয়াড় মানুষকে টেবিল টেনিসের প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখিয়েছেন। জাপানি সাঁতার তারকা রিকাকো ইকি লিউকেমিয়া কাটিয়ে প্রতিযোগিতায় ফিরেছেন। কিন্তু পরাজয়ের মুখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তারা পদক জিতুন বা না জিতুন, প্রতিযোগিতায় তাদের জমকালো উপস্থিতি মানুষের মন ছুঁয়েছে।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, অলিম্পিক গেমস মূলত একটি ‘পুরুষদের উদযাপন’ ছিল এবং নারীদের অংশগ্রহণ বা এমনকি খেলা দেখারও অনুমতি ছিল না।

১৮৯৬ সালের এথেন্স অলিম্পিক ছিল প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমস, এবং ওই গেমসে সমস্ত খেলোয়াড় পুরুষ ছিল।

১৯০০ সালে, দ্বিতীয় প্যারিস অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো নারীরা অংশ নেন, যদিও তা গল্ফ এবং টেনিসের মতো ‘নারীসুলভ’ ইভেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

১৯২৪ সালে, নারী প্রতিযোগী মাত্র ৪.৪% ছিল, এবং তাদের ইভেন্টের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত।

কিন্তু নারীদের তখনও ম্যারাথনের মতো দীর্ঘমেয়াদী ইভেন্টগুলো থেকে দূরে থাকতে হতো, কারণ তাদের ‘দুর্বল এবং অযোগ্য’ বলে মনে করা হতো।

পরবর্তী প্রতিটি গেমসে, নারী ক্রীড়াবিদদের অনুপাত ধীরে ধীরে এবং একপর্যায়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে।

১০০ বছরেরও বেশি সময় পর, অবশেষে এ বছর, নারীরা সমস্ত খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন, এবং নারী প্রতিযোগীদের অনুপাত ৫০% পৌঁছেছে! অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে এই প্রথম পুরুষ নারী অনুপাত ১:১ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি টমাস বাখ বলেছেন যে, এটি অলিম্পিক গেমস এমনকি সমগ্র ক্রীড়া ইতিহাসে একটি মাইলফলক!

অলিম্পিক গেমস থেকে বাদ দেওয়া থেকে, অলিম্পিকের আকাশের অর্ধেক ধরে রাখা পর্যন্ত, এই কাঁটাযুক্ত রাস্তাটি নারী ক্রীড়াবিদদের প্রজন্মের সংগ্রাম এবং প্রচার থেকে আলাদা করা যায় না।

এখন যখন টেনিস পোশাকের কথা আসে, অপরিহার্য উপাদান হল একটি হালকা এবং স্টাইলিশ স্কার্ট। কিন্তু আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না যে ১০০ বছর আগে নারী টেনিস খেলোয়াড়রা কত লম্বা ও ভারী পোশাক পরতেন!

১৯১৯ সালে, নারী টেনিস খেলোয়াড় সুসান লেংলেন, যিনি সাহসের সাথে রীতিভঙ্গ করে লম্বা হাতাকে ছোট হাতাতে রূপান্তরিত করে, হাঁটু-উচ্চ প্লেটেড স্কার্ট এবং স্টকিংসের সাথে পরেছিলেন।

টেনিসের সাথে তুলনা করলে, নারীদের ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করার প্রক্রিয়া আরও বাধার সম্মুখীন হয়।

১৯৬৭ সালে, ১৯ বছর বয়সী ক্যাথরিন সুইজার কর্মীদের না জানিয়ে ‘কে.ভি. সুইজার’ নামে বোস্টন ম্যারাথনে সাইন আপ করেন।

রেস শুরু হওয়ার পর, কর্মীরা এবং সংগঠকরা আবিষ্কার করেন যে তিনি একজন নারী এবং তাকে ধাওয়া করে ট্র্যাক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দৃশ্যটির ভিডিও ধারণ করা হয় এবং বিশ্ব সংবাদের শিরোনাম হয় - সেখানে আসলে একজন নারী ম্যারাথনে অংশ নিচ্ছেন! “নারীরা শুধু দৌড় প্রতিযোগিতায়ই নয়, জীবনের আরও অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে”- বলছিলেন ক্যাথরিন।

তার ক্রমাগত চেষ্টার পর ১৯৭২ সালে, বোস্টন ম্যারাথন অবশেষে ঘোষণা করে যে নারীরা ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ১৯৮৪ সালে, নারীদের ম্যারাথন অলিম্পিক গেমসে একটি অফিসিয়াল ইভেন্ট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আরেক নারী অ্যাথলেট জাং শান একই প্রশ্নের ভিন্ন উত্তর দিয়েছেন। তিনি ছিলেন প্রথম নারী অলিম্পিক মিক্সড স্কিট চ্যাম্পিয়ন।

১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকে, ৫৩ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারীসহ মোট ৬০ জন ক্রীড়াবিদ স্কিট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। প্রিলিমিনারিতে, জাং শান পুরো ১৫০টি লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলেন, সেমিফাইনালে অগ্রসর হওয়া একমাত্র নারী হয়ে ওঠেন। এমনকি তিনি ২০০টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে একটি বিস্ময়কর ২০০ ছুঁয়েছিলেন, যা শুধুমাত্র একজন আমেরিকান খেলোয়াড়ের করা বিশ্ব রেকর্ড ও অলিম্পিক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।

বছর খানেক পর জাং শান বলেন, আমি প্রমাণ করতে চাইনি যে আমি পুরুষদের চেয়ে ভালো, আমি শুধু শুটিং পছন্দ করতাম।

তার কারণে, ২০০০ সাল থেকে অলিম্পিক গেমস নারীদের জন্য স্কিট ইভেন্ট যোগ করা শুরু হয়।

প্রথম নারী ক্রীড়াবিদ, প্রথম নারী চ্যাম্পিয়ন, প্রথম নারী রেফারি, প্রথম নারী পতাকাবাহী...

বলা যায়, অলিম্পিক গেমসে নারীদের অংশগ্রহণের ইতিহাস নারীদের সমান অধিকারের সংগ্রামের জীবন্ত ইতিহাস।

অলিম্পিক গেমসের শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাসে, এমন অগণিত মহান নারীর আবির্ভাব হয়েছে তাদের গল্পগুলোকে বারবার বলা উচিত যাতে আরও বেশি লোক তাদের মহান সংগ্রাম এবং অবদান সম্পর্কে জানতে পারেন।

 (স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)