আমিরুদ্দিন হচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল সুলাওয়েসি প্রদেশের উত্তর মোরোওয়ালি রিজেন্সি’র তোয়ারা গ্রামের প্রধান। অনেক স্থানীয় বাসিন্দার মতো তিনি গ্রামের অদূরে দেলুং শিল্পপার্কের উত্তর মোরোওয়ালি পার্ক এলাকায় একটি স্থায়ী চাকরি পেয়েছেন। প্রত্যেক কর্মদিনের সকালে তিনি তাজা শাকসবজি ও ফল দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে নাস্তা করেন, তারপর মোটর-সাইকেলে করে অফিসে যান।
কিন্তু এক বছরের বেশি সময় আগে, এমন স্বস্তির সকাল তাঁর জন্য অকল্পনীয় ছিল। উত্তর মোরোওয়ালি রিজেন্সিতে লা নদী তোয়ারাসহ তিনটি গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। স্থানীয় সমৃদ্ধ পানি ও মত্স্য সম্পদের উৎস হলেও, গ্রামবাসীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিরাট অসুবিধার কারণ হয়েছিল নদীটি। আমিরুদ্দিন জানান, সেতুর অভাবে অফিস ও স্কুলে যাওয়া অনেক অসুবিধাজনক ছিল। আগে মোটর-সাইকেলে করে বাসা থেকে অফিসে যেতে নদীকূল বরাবর ঘিরে ঘন্টার বেশি বাগান এলাকায় পৌঁছাতে পারতেন।
গ্রামবাসীদের যাতায়াত সমস্যা বিবেচনা করে, শিল্পপার্ক বেশ কয়েকটি স্থানীয় সেতু নির্মাণে সাহায্য দেয়। ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে শিল্পপার্কের উদ্যোগে লুং ইউয়ে সেতু চালু হয়। গত বছরের মে মাসে সেতু’র পাশে আরেকটি আরো উচ্চমানের সেতু নির্মিত হয়। পাশাপাশি দুটি সেতু দিয়ে নদীর দু’তীরের গ্রামবাসীর অফিসে যাওয়া বা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়া অনেক সুবিধাজনক হয়েছে। নতুন সেতু নির্মিত হবার পর মোটর-সাইকেলে করে নদী পার হয়ে শিল্পপার্কে পৌঁছাতে শুধু দশ-বার মিনিট লাগে। এটি নামের যোগ্য একটি সুবিধার সেতু হয়েছে।
দেলুং শিল্পপার্ক চীন-ইন্দোনেশিয়া ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’র (বিআরআই) উচ্চমানের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় কৌশলগত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। চীন-ইন্দোনেশিয়া আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে শিল্পপার্কটি। জানা গেছে, শিল্প পার্কটি চীন-ইন্দোনেশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রায় ৮ শতাংশ অবদান রাখে এবং দেশটির জন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাজস্ব অর্জনের সুযোগ এনে দিয়েছে। বর্তমানে শিল্প পার্কে ৪০ হাজারের বেশি ইন্দোনেশীয় কর্মী রয়েছে। এ ছাড়া, এখানে ইন্দোনেশিয়া দেলুং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অনেক স্থানীয় পেশাদার মেধাশক্তি লালন করা হয় এখানে।
সেতু প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ইয়ানথুও জানান, প্রকল্প নির্মাণ চলাকালে শতকর্মী নিয়োগ করা হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নিকটবর্তী এলাকার জেলে ও কৃষক। সবার আয় বেড়েছে, জীবনমানও ব্যাপকভাবে উন্নীত হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে দেলুং শিল্পপার্কের সাহায্যে মোট ১৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা এবং ২০টি সেতু নির্মিত হয়েছে।
দেলুং শিল্পপার্কের উত্তর মোরোওয়ালি পার্ক এলাকর প্রেসিডেন্ট চৌ ইউয়ান জানান, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এবং চীন ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের সাথে মৈত্রী গভীরতর করেছে। সুবিধার সেতু ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’র মাধ্যমে মানুষে মানুষে বন্ধন বেগবান করার প্রাণবন্ত প্রমাণ। ভবিষ্যতে শিল্পপার্ক অব্যাহতভাবে সবুজ ও টেকসই উন্নয়ন ধারণা পোষণ করে, উচ্চমান, মানুষের জীবিকার সুবিধা এবং টেকসই লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বাস্তব কার্যক্রম দিয়ে চীন-ইন্দোনেশিয়া মৈত্রী গভীরতর করতে অবদান রাখবে। (প্রেমা/হাশিম)