বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৫ সদস্যের একটি তরুণ কূটনীতিক প্রতিনিধিদল ২৮ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত চীন সফর করে। ১২ দিনব্যাপী সফরে তারা চীনের মেগাসিটি শাংহাই ও রাজধানী বেইজিংয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন সেমিনার ও পেশাগত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
শাংহাইয়ে তারা নগর পরিকল্পনা প্রদর্শনী কেন্দ্র, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসির প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের স্মারক স্থান, সেন্সটাইমের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তথ্যকেন্দ্র, শাংহাই এইচ-রাইজ নতুন জ্বালানি প্রযুক্তি কোম্পানি, তুও ইয়ুন বুকস্টোর, তিসুই ক্লাউড হল প্ল্যানিং এক্সিবিশান সেন্টার, ওরিয়েন্টাল পার্ল রেডিও এন্ড টিভি টাওয়ারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন। তারা শাংহাইয়ের আধুনিক নগর পরিকল্পনা ও অভাবিত উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ হন। তারা চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন-সিপিপিসিসি’র শাংহাই কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং চীনা পণ্ডিতদের সঙ্গে সেমিনারে যোগ দেন।
রাজধানী বেইজিংয়ে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য, চীনের মহাপ্রাচীর, ফরবিডেন সিটি, সামার প্যালেসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা পরিদর্শন করে অভিভূত হন বাংলাদেশের তরুণ কূটনীতিকরা। ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করে চীনের উন্নয়ন উদ্যোগ তাদের মনে গভীরভাবে ছাপ ফেলেছে।
কূটনীতিক প্রতিনিধিদলের সফর ও প্রশিক্ষণ সমাপ্তি উপলক্ষে শুক্রবার বেইজিং ভাষা এবং সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ে চীন ও বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে পারস্পরিক শিক্ষা ও বিনিময় বিষয়ে দু’দেশের তরুণদের একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়ের বিষয়ে দু’দেশের তরুণ কর্মকর্তা ও গবেষকরা নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন।
গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক ও বাংলাদেশের কূটনীতিক প্রতিনিধিদলের দলনেতা, সিনিয়র সহকারি সচিব মারজান বেগম সিএমজি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন সেমিনারের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে। তিনি বলেন, কীভাবে তরুণ প্রজন্মের ক্ষমতায়ন করা যায়, কীভাবে চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে দু’দেশের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেয়া যায়, কীভাবে দু’দেশের মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো যায় এবং সে জন্য কী কী করা প্রয়োজন— এ সব বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন তরুণ প্রতিনিধিরা।
চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের অর্থনৈতিক কাউন্সিলর মোহাম্মদ মমিনুল হক ভূঁইয়া সেমিনারে বক্তব্যে এবং পরে সিএমজি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তরুণ কূটনীতিকদের চীন সফরকে সফল হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এ সফর থেকে লব্ধজ্ঞান তরুণ কূটনীতিকদের তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের পাশাপাশি চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে সাহায্য করবে।
পরে সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তাদের চীন সফরের উপর গভীর ও ইতিবাচক আলোকপাত করেন। জানান, রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি এবং সংস্কৃতিসহ চীনের বিভিন্ন খাত সম্পর্কে তারা হাতেকলমে জেনেছেন।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়র এশিয়া বিষয়ক বিভাগের কাউন্সিলর ছেন ওয়েই বলেন, ৪৯ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে, চীন এবং বাংলাদেশ সবসময় একে অপরকে সম্মান করেছে এবং জয়-জয় সহযোগিতা অনুসরণ করেছে। চীন সবসময়ই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে মেনে চলেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করেছে, বাংলাদেশী জনগণের দ্বারা নির্বাচিত স্বাধীনভাবে উন্নয়নের পথকে সম্মান করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাউন্সিলর মোহাম্মদ মমিনুল হক ভূঁইয়া সমাপনী পর্বে বলেন, চীনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক শীর্ষপর্যায়ের সফরে দু’দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে পথেই চীন-বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক এগিয়ে যাবে। ২০২৫ সালকে দু’দেশের জনগণের মধ্যে বিনিময়ের বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উভয়পক্ষ পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব প্রচারের জন্য শিক্ষাগত আদান-প্রদান ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেয়। দুই দেশের সকল স্তরে ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক এবং কূটনীতিকদের মধ্যে আদান-প্রদান এবং সার্বিকভাবে দু’দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশি এ কূটনীতিক।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।