নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
কী রয়েছে এবারের পর্বে
১. প্যারিস অলিম্পিকে সোনা জিতে বিয়ের আংটি পরলেন চীনের স্বর্ণজয়ী হুয়াং ইয়াছিয়ং
২. চীনে নিরাপদ নারীর জীবন
৩. নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা নারী রেন ইয়িন
প্যারিস অলিম্পিকে সোনা জিতে বিয়ের আংটি পরলেন চীনের স্বর্ণজয়ী হুয়াং ইয়াছিয়ং
প্রেমের শহর প্যারিসে হচ্ছে অলিম্পিক। সেখানে কোনো রোমান্টিক ঘটনা ঘটবে না, তা কী করে হয়! তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে এবার। চীনের স্বর্ণজয়ী নারী খেলোয়াড় হুয়াং ইয়াছিয়ংকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন তার প্রেমিক লিউ ইউচেন। বিস্তারিত আফরিন মিমের প্রতিবেদনে।
প্যারিসকে বলা হয় প্রেমের শহর। প্রেমের শহরে বিয়ের প্রস্তাব পেলেন স্বর্ণজয়ী নারী খেলোয়াড় হুয়াং ইয়াছিয়ং। পদক জয়ের পর প্রেমিক লিউ ইউচেন বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। পরিয়ে দিলেন আংটি। সম্প্রতি সেই দৃশ্য দেখল প্রেমের শহর প্যারিস। প্রেম নিবেদনের রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখেছে ক্রীড়ানুরাগীনা। ভালোবাসার মানুষকে বিয়ের প্রস্তাবই দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন প্রেমিকা হুয়াং ইয়া ছিয়ং।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রেম করছিলেন আরেক ব্যাডমিন্টন তারকা লিউ ইউচুনের সঙ্গে। বাকি ছিল শুধু আংটি পরানোর। সেটিও তারা সেরে ফেললেন ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের’ মতো মঞ্চে।
ইয়াছিয়ং ও ইউচেন দেশের হয়ে পদক জিততে গেছেন প্যারিসে। ব্যাডমিন্টন থেকে চীন এখনও পর্যন্ত একটিই পদক জিতেছে। সেই পদক এনে দিয়েছেন হুয়াং ইয়াছিয়ং।
অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টন মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টের ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার কিম উন-হো এবং জিয়ং না-এয়ুন জুটিকে মাত্র ৪১ মিনিটে ২১-৮, ২১-১১ গেমে হারিয়ে স্বর্ণ জেতেন চীনের মিশ্র দ্বৈত জুটি হুয়াং ইয়াছিয়ং এবং চেং সিওয়েই। প্যারিস অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টন ডিসিপ্লিন থেকে চীনের এই জুটি প্রথম স্বর্ণ পদকটি তুলে নেয়ার পরই মধুর দৃশ্যটা মঞ্চস্থ হয়। আর সেই দৃশ্যের রচয়িতা চীনের ব্যাডমিন্টন দলের পুরুষ দ্বৈত জুটির খেলোয়াড় লিউ ইউচেন।
চীনকে সোনা জিতিয়ে হুয়াং নিজে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন হীরার আংটি। হুয়াং ও চেং সোনার পদক নেওয়ার পর ভিক্টরি ল্যাপ শেষ করে চলে যাওয়ার সময় কোণে দাঁড়ানো অপেক্ষায় থাকা ইউচেন একটি ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে বাক্স থেকে আংটি বের করে ধরেন। এই দৃশ্য দেখে তুমুল হাততালি দেন দর্শকরা।
ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে হুয়াং বলেছেন, ‘প্রস্তাবটা আমার জন্য আশ্চর্যের ছিল। আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন এবং বিয়ের প্রস্তাবও পেয়েছি, যেটা আমি আশা করিনি।
প্যারিস অলিম্পিকে অবশ্য বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে আর্জেন্টিনার নারী ফিল্ড হকি দলের খেলোয়াড় মারিয়া ক্যাম্প বিয়ের প্রস্তাব পান স্বদেশি পুরুষ হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড় পাবলো সিমোনেটের কাছ থেকে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
চীনে নিরাপদ নারীর জীবন
চীনে বসবাসরত অনেক বিদেশি বলেছেন তারা চীনে অত্যন্ত নিরাপদে আছেন। বিশেষভাবে চীনে অত্যন্ত নিরাপদ বোধ করেন নারীরা। একজন বিদেশি নারী আন্দ্রেয়া লেমন্ডস । তিনি একজন বিদেশি হিসেবে চীনে কেমন আছেন সে গল্প শোনাচ্ছেন শুভ আনোয়ার।
সম্প্রতি চীন সরকার বিদেশিদের জন্যও কর্মসংস্থান নীতি সহজ করেছে। এর ফলে ভিসা আবেদন ও কাজের অনুমতি পাওয়াও এখন অনেকটাই সহজ। এই নীতি পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চীনে কাজ করতে আসছেন।
তেমনি একজন মার্কিন নারী আন্দ্রেয়া লেমন্ডস। এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা থেকে চীনে আসেন তিনি। বর্তমানে তিনি উত্তর চীনের শানসি প্রদেশের নর্থ ইউনিভার্সিটি অফ চায়নায় ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
আতিথেয়তায় মুগ্ধ মার্কিন এই নারী দেশটির নাগরিকদের প্রশংসা করেন। সম্প্রতি তিনি চীনে থাকার এক বছরের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, চীনে বসবাস ও কর্মজীবন স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নিরাপদ। চীনা মানুষেরা খুব ভালো। আমি যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করি তাদের খুব ভালো লাগে। তারা সত্যিই দুর্দান্ত শিক্ষার্থী। সহকর্মীরাও খুব ভালো এবং আপনার যদি কিছু দরকার হয় তাহলে তারা আপনাকে সাহায্য করতে সবসময় প্রস্তুত থাকে। আমি মাঝে মাঝে খাবার কিনতে গ্রামে যাই। সেখানকার মানুষেরা খুব ভালো। আপনি যেই ভাষায় কথা বলেন না কেন, এরপরও আপনি বুঝতে পারবেন তারা কতো মধুর।
লেমন্ডস বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন, তার চোখে চীন সব থেকে সেরা। তিনি বলেন, বিশ্বে এমন কিছু দেশ আছে যেখানে হয়তো আপনি আরামদায়ক বা নিরাপদ বোধ করবেন না। কিন্তু এখানে আপনি নিরাপদ। তাই আমি সত্যিই এর জন্য কৃতজ্ঞ।
দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, আকর্ষণীয় বেতন এবং বিভিন্ন সুযোগের কারণে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশি নাগরিকদের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে চীন।
প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা নারী রেন ইয়িন
চীনে এখন চলছে গ্রাম পুনর্গঠনের পালা। অনেক তরুণ তরুণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে গ্রামে ফিরে আসছেন। গড়ে তুলছেন নিজেদের প্রতিষ্ঠান । এমন একজন তরুণী রেন ইয়িন। শুনবো তার গল্প।
চীনের হাংচৌ শহরের এক তরুণী বাসিন্দা রেন ইয়িন। ২৭ বছর বয়সী এই তরুণী হংকং ইউনিভারসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে বিদেশি ভাষা বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন। মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এমন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে তিনি যখন তার হোম টাউনে ফেরার পরিকল্পনা করেন তখন সকলে মনে করেছিলেন এটা বোকামি। অনেকে বলেছিলেন এটা তার মেধা ও শিক্ষার অপচয়। কিন্তু রেন মনে করেন তার শিক্ষাকে তিনি সঠিক ভাবে কাজে লাগাবেন নিজের ব্যবসায়ীক উদ্যোগে। তিনি তার হোমটাউন হোংসুন গ্রামে ফিরে আসেন। ২০২২ সালে তিনি একটি গ্রামীণ ক্যাফে খোলেন। ইয়িন ক্যাফে নামের এই ক্যাফেতে শুধু কফি ও খাবার পাওয়া যায় তা নয়। এখানে মানুষ আড্ডা ও সামাজিক মেলামেশা করতে পারে। এখানে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি হাব গড়ে তোলা হয়েছে।
রেন বলেন পুরো ক্যাফে সাজানো হয়েছে হাল্কা ও আধুনিক আসবাব দিয়ে যেটা তরুণ প্রজন্মের পছন্দ। ফলে আসবাবপত্রের জন্য তার খুব বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়নি।
তিনি ইন্টেরিয়র করেছেন তরুণ প্রজন্মের রুচি অনুযায়ী।
তিনি হাংচৌ নরমাল ইউনিভারসিটির সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছেন। তিনি আনডার গ্র্রঅজুয়েট লেভেলে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলেন। হাংচৌ নরমাল ইউনিভারসিটির সঙ্গে যৌথভাবে এই ক্যাফেতে বিভিন্ন ইভেন্ট করেন তিনি। ফলে নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তার এই ক্যাফেকে খুব পছন্দ করে। এখানে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও এই ক্যাফেকে তাদের সামাজিক মেলামেশার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিদেশিরাও এখানে আসেন। এখানে রেন তার বিদেশি ভাষার ডিগ্রিকে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন যা বিদেশিদের কাছে চীনের লোকজ সংস্কৃতিদকে তুলে ধরে। রেন তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে বেশ সুবিধা পেয়েছেন। এই আর্থিক সুবিধা তার জন্য সহায়ক হয়েছে কারণ প্রয়োজনীয় পুঁজির সংকট ছিল তার।
এভাবে চীনে নতুন প্রজন্মের নারীরা দেশ গঠনে ভূমিকা রাখছেন। তারা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলছেন। অন্যদের জন্যও তার এই প্রতিষ্ঠান প্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: আফরিন
সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ