বড় আকারের ডোপিং ইস্যুতে বিশ্বকে একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের: সিএমজি সম্পাদকীয়
2024-08-09 16:04:29

অগাস্ট ৯: ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক গেমস অর্ধেক পথ পার হয়েছে। স্টেডিয়ামের ভিতরে এবং বাইরে একটি ‘আন্ডারকারেন্ট’ও বেড়ে চলেছে- একদিকে মার্কিন গণমাধ্যম এবং প্রতিষ্ঠানগুলো মিথ্যা দাবি করছে এবং অবৈধ ডোপিংয়ের জন্য অন্যান্য দেশের ক্রীড়াবিদদের আক্রমণ করছে, অন্যদিকে তারা তাদের নিজস্ব ক্রীড়াবিদদের মধ্যে যাদের ডোপিং পরীক্ষা পজিটিভ হয়েছে- তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারা দ্বৈত মানদণ্ড নিয়ে খেলেছে এবং খেলাধুলাকে রাজনীতি ও অস্ত্রে পরিণত করেছে।

স্থানীয় সময় ৭ অগাস্ট ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (ডাবলিউএডিএ) এক বিবৃতি জারি করে জানায় যে, ২০১১ সাল থেকে, মার্কিন অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (ইউএসএডিএ) অন্তত তিনটি মামলায় স্টেরয়েড এবং এরিথ্রোপয়েটিন (ইপিও) ব্যবহার করা ক্রীড়াবিদদের চার্জ এবং জরিমানা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে এবং তাদের প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই আচরণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সততা রক্ষা করার জন্য ডাবলিউএডিএয়ের নিয়ম-নীতি স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ন্যায্যতা ক্ষুণ্ণ করেছে এবং প্রাসঙ্গিক ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তাও বিপন্ন করেছে।

একই সময় বিশ্বব্যাপী নেটিজেনদের মধ্যে চায়না মিডিয়া গ্রুপ বা সিএমজি’র উদ্যোগে একটি ইন্টারনেট জরিপ অনুসারে ৯৫.০১ শতাংশ উত্তরদাতারা খেলাধুলার নামে প্রতিপক্ষকে দমন করতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণ্য কৌশলের তীব্র নিন্দা করেন। একে অলিম্পিককে ‘আমেরিকান স্টাইলের’ পদদলন হিসেবে সমালোচনা করেন। জরিপের ৯৬.৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ডাবলিউএডিএয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় এবং তারা সংস্থার ন্যায্যতা ও কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। ৯৬.১১ শতাংশ উত্তরদাতা সব দেশকে অলিম্পিক চেতনা মেনে চলা, যৌথভাবে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার কর্তৃত্ব ও নিরপেক্ষতা রক্ষা করা এবং ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এসব মন্তব্য এবং আহ্বান আমেরিকান ক্রীড়াগুলোতে বৃহৎ আকারের, সংগঠিত ও পদ্ধতিগত ডোপিংয়ের গুরুতর সমস্যা নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক সমাজ স্পষ্টভাবে দেখেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তার তথাকথিত ‘সুবিধাপূর্ণ’ অবস্থান বজায় রাখার জন্য সম্ভাব্য সব উপায় ব্যবহার করেছে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক দমন  বেড়ে যাচ্ছে। তথাকথিত ‘ডোপিং ঘটনা’ প্রচার করা এবং চীনা ক্রীড়াবিদ ও চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাও অন্যতম পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। ক্রীড়ার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় নিজেকে ‘ক্রীড়া খাতে আধিপত্যকারী’ হিসেবে বিবেচনা করে এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে তার নরম শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন ও অন্যান্য দেশের প্রতিযোগিতার স্তরের উন্নয়ন অব্যাহত থাকায় ট্র্যাক ও ফিল্ড এবং সাঁতারসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ঐতিহ্যবাহী সুদক্ষ প্রতিযোগিতায় তাদের সুবিধা হ্রাস পেয়েছে। অনেক মার্কিনী এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে ওঠেন।

জানা গেছে, গত জানুয়ারির শুরু থেকে প্যারিস অলিম্পিকের প্রাক্কালে, চীনা সাঁতার দলের প্রতিটি সদস্য গড়ে ২১টি অ্যান্টি-ডোপিং অর্গানাইজেশন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, মার্কিন দল এবং অস্ট্রেলিয়ান দল যথাক্রমে গড়ে ৬টি এবং ৪টি পরীক্ষায় নিয়েছিলো। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির মুখপাত্র মার্ক অ্যাডামস বলেন, চীনা সাঁতার দল ‘বিস্তৃত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে।

আমেরিকান আধিপত্য দ্বারা অলিম্পিকের চেতনাকে কলঙ্কিত করা যাবে না এবং ডোপিং বিরোধী কাজের মাধ্যমে অন্য দেশকে অসম্মান ও দমন করার হাতিয়ার বানানো যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং রেগুলেশন গুরুতর লঙ্ঘনকারী আচরণ নিয়ে প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলোর স্বাধীন তদন্ত চালানো প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ‘লং আর্ম জুরিসডিকশন’ বন্ধ করতে হবে, তার নিজের সমস্যা সমাধান করতে হবে, বিশ্বকে বৃহৎ আকারের ডোপিং ঘটনার একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে, ন্যায্য প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং অলিম্পিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।

লিলি/তৌহিদ/সুবর্ণা