‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৮১
2024-08-08 00:03:47


‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।  

 

৮১ তম পর্বে যা যা থাকছে:  

১. বয়স্কদের যত্নে যোগ্যতা অর্জনকারী প্রথম চীনা আন্ডারগ্রাজুয়েটরা প্রস্তুত

২. ভিলেজ সুপার লিগে তরুণদের পুনর্জাগরণ



১.  বয়স্কদের যত্নে যোগ্যতা অর্জনকারী প্রথম চীনা আন্ডারগ্রাজুয়েটরা প্রস্তুত 

 

স্নাতকে বয়স্ক যত্নের কোর্স থেকে চীনের আন্ডারগ্রাজুয়েটরা নতুন দক্ষতা নিয়ে কাজ করছেন। বয়োঃজ্যষ্ঠ্যদের যত্ন নেওয়ার মতো দ্রুত প্রসারিত শিল্পে তাদের নতুন দক্ষতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করতে প্রস্তুত একঝাঁক তরুণ।  


সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুসারে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা ৪০ কোটির বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ চীনে ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটিতে পৌঁছেছে।  


তাই চীন উচ্চ মানের সেবা দানে মেধার ব্যবহার এবং চাহিদার মধ্যে ব্যবধান নিশ্চিত করতে নার্সিং পেশাদারদের প্রশিক্ষণকে আপগ্রেড করছে।  

 

২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণ যত্ন ডিগ্রি কোর্সের উদ্যোগ নেওয়া হয়।  এরই অংশ হিসেবে শাংহাই ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এবং শানতোং উইমেন ইউনিভার্সিটি প্রথম এই উদ্যোগটি নেয়। ফলে এই বছরের স্নাতক মৌসুমে প্রায় একশো আন্ডারগ্রাজুয়েট এই কোর্সগুলো সম্পন্ন করে বের হয়।  


মু ত্যইয়ু শাংহাই ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্সের স্নাতকদের একজন। তার চার বছরের অধ্যয়নের সময়, এই শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা, অর্থ এবং মনোবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন মডিউল সম্পন্ন করেছেন। 

 

তার প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে, তৃতীয় বছরে ইন্টার্নশিপের জন্য থাইখাং অবসর গ্রহণকারী কমিউনিটিতে যান মু। 


‘শুরুতে, আমি যখন ২০২০  সালে আমার মেজরের জন্য আবেদন করি তখন আমি বেশ বিভ্রান্ত ছিলাম। কিন্তু আমার পরিবার এমন একটি নতুন প্রোগ্রাম চালুর কথা আমাকে বলে। আমি ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিতে নিতে অনুভব করলাম, এই বিষয়ের চাহিদা একসময় অনেক বাড়বে।‘


জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মতে, ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ব্যক্তি প্রতিবন্ধী বা ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন।  নির্দিষ্ট পাবলিক নার্সিং হোমে পেশাদার মান উন্নত করতে স্নাতক ছাত্রদের অংশগ্রহণ সাহায্য করেছে। 


দেশটিতে বয়স্কদের জন্য ছয় মিলিয়নেরও বেশি পরিচর্যাকর্মী প্রয়োজন, তবে বর্তমানে আছেন মাত্র ৫ লাখ অনুশীলনকারী কর্মী।  


ঐতিহ্যগত পরিচর্যা পরিষেবা কর্মীদের ছাড়াও, ব্যবস্থাপক কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে। 

 

বয়স্ক পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পরিচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, পেশাদার ব্যবস্থাপক এবং অন্যান্য ম্যানেজমেন্ট লেভেলকে আরও দক্ষ করে তোলা এই স্নাতক মডিউলটি খোলার লক্ষ্য বলে জানান শাংহাই ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্সের স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের ডেপুটি ডিন লুও চুয়ান। 


লুও চুয়ান, ডেপুটি ডিন, শাংহাই ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স

‘আমরা শুধু প্রাথমিক নার্সিং কর্মীদের ওপর ফোকাস করিনি বরং আমাদের ব্র্যান্ড মার্কেটিং, ফিনান্স, স্মার্ট কেয়ার এবং ক্রমাগত পরিষেবার স্তর আপগ্রেড করার প্রক্রিয়াসহ অনেকগুলো সেক্টর পরিচালনার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি।


 

এই বছর, চীনের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে চাকরির সন্ধান করার কথা রয়েছে। তাদের জন্য বছরব্যাপী সরকার বিভিন্ন সহায়তা নীতি চালু করেছে। এর মধ্যে একটি অংশকে বয়স্কদের যত্নে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হবে বলে জানানো হয়।  


প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ


২. ভিলেজ সুপার লিগে তরুণদের পুনর্জাগরণ

  

চীনের কুইচোও প্রদেশের রোংচিয়াং কাউন্টির ভিলেজ সুপার লিগ গ্রামীণ তরুণদের জাগিয়ে তুলেছে। ফুটবল খেলা তো বটেই সেইসঙ্গে  অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিবেশনা জমজমাট করে তুলেছে পুরো প্রতিযোগিতাকে। এই ভিলেজ সুপারলিগ তারুণ্য শক্তিকে উজ্জীবিত করছে। বিস্তারিত শান্তা মারিয়ার প্রতিবেদনে।


জমজমাট সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলছে। স্টেডিয়ামে দর্শকদের উৎসাহের সীমা নেই। চীনের কুইচোও প্রদেশের রোংচিয়াং কাউন্টিতে ছিয়ানতোংনান মিয়াও অ্যান্ড তোং অটোনোমাস প্রিফেকচারে ভিলেজ লিগ প্রতিযোগিতায় জেগে উঠেছে গ্রামীণ তারুণ্য। 

রোংচিয়াংয়ের ভিলেজ লিগ শুধু কুইচোও প্রদেশেরই নয় পুরো চীনের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। এটি মূলত গ্রামীণ জনগণের অংশগ্রহণে ফুটবল প্রতিযোগিতা। তবে এখানে শুধু ফুটবল নয়, তোং এবং মিয়াও জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পরিবেশিত হয়। ভিলেজ সুপার লিগের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য আগেই রেকর্ড করতে হয়। এ বছরও ত্রিশটি রেকর্ডিং সেশন পরিচালনা করেছেন ইয়াং ইয়াচিং নামে একজন সংগঠক। প্রতিবারই তিনি লোকজ সংস্কৃতির পরিচয়ে মুগ্ধ হন।

 

ইয়াং ইয়াচিয়াং, ইনিশিয়েটর, ভিলেজ সুপার লিগ, প্রাইমারি স্কুল প্রিন্সিপাল  

‘গ্রামবাসীরা দূরদূরান্ত থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছেন। অনেকে ১০ কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটেও এখানে এসেছেন। অনেকে মোটর সাইকেলে চড়ে বা চালিয়ে এসেছেন। যখনই আমি রেকর্ড করতে গিয়েছি মনে হয়েছে নতুন জগৎ আবিষ্কার করেছি। এখানে এমন অনেক অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিবেশনা হয়েছে যা আগে আমরা দেখিনি। অনেক মানুষ আবেগে কেঁদেছে। কেন এত মানুষ আমাদের ভিলেজ সুপার লিগ পছন্দ করেন? এর কারণ হলো ফুটবল ছাড়াও এখানে আমাদের অসামান্য লোকজ সংস্কৃতির অনেক প্রদর্শন হয়। অনেক বিদেশি বন্ধু যখন তোং জাতির মানুষের গান শুনেছেন বলেছেন দারুণ সুন্দর।’ 

 

ইয়াং ইয়াচিংয়ের বয়স এখন ৫২ বছর। তবে ফুটবলের সঙ্গে তার যাত্রা শুরু হয়েছে ১৯৯৯ সালে। তিনি গ্রামীণ তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ফুটবল খেলা জনপ্রিয় করা এবং এই খেলায় প্রশিক্ষণের জন্য অনেক শ্রম দিয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি ওল্ড বয়েজ ফুটবল টিম’ গড়ে তোলেন। শিশু কিশোরদের ফুটবল খেলা শেখানোর ব্যবস্থা করেন।

কাউন্টি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাজে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন, স্থানীয় লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তোং এবং মিয়াও জাতির গান ও নাচ টুর্নামেন্টে প্রদর্শনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার জন্য অবদান রেখেছেন ইয়াং। ফুটবল মাঠের চারপাছে ‘পিচ সাইডে’ এইসব নাচগান পরিবেশিত হয়েছে যা দর্শকদের বিপুল আনন্দ দিয়েছে। 

বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে ফুটবল খেলা ও লোকজ সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন ইয়াং। এখন বিভিন্ন স্কুলে শিশুরা ফুটবল খেলা শিখছে। 


প্রাইমারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র চিয়াং মিংসুয়ান বলেন, 

‘আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় ফুটবল খেলা শুরু করি। আমাদের স্কুলে অনেকগুলো টিম আছে। খেলাধুলা আমাকে আনন্দ দেয়।’

 

আন্তর্জাতিকভাবেও ভিলেজ সুপারলিগ বেশ জনপ্রিয়তা পয়েছে। ব্রাজিলের ফুটবল তারকা কাকা এবার রোংচিয়াংয়ে এসেছিলেন এই ফুটবল খেলা দেখতে। তিনি ‘চেজিং ড্রিম’ নামে একটি চ্যারিটি ফুবল ইভেন্টে অংশও নেন। 

ইয়াং এখন শিশু কিশোরদের গড়ে তুলছেন। তাদের ফুটবলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে চান। 


ইয়াং ইয়াচিয়াং, ইনিশিয়েটর, ভিলেজ সুপার লিগ, প্রাইমারি স্কুল প্রিন্সিপাল

‘এই ছবিগুলো আমাদের স্পেন ভ্রমণের সময়কার। এগুলো ‘মিট কাকা’ ইভেন্টের। আর্ট ক্লাসে ছেলেমেয়েরা ভিলেজ সুপার লিগ নিয়ে ছবিও এঁকেছে। আমাকে তারা ৩৩ নম্বরের জার্সি পরিয়েছে।’


তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফুটবল জনপ্রিয় হচ্ছে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ও সাংগঠিক ক্ষমতায়ন হচ্ছে। 

 

ইয়াং ইয়াচিয়াং, ইনিশিয়েটর, ভিলেজ সুপার লিগ, প্রাইমারি স্কুল প্রিন্সিপাল

‘রোংচিয়াংয়ের ফুটবলের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৩৯ সালে ন্যাশনাল কুইচোও নরমাল স্কুল যখন রোংচিয়াংয়ে স্থানান্তরিত হয় তখন সব স্কুল,  গ্রাম ও কমিউনিটিতে ফুটবল প্রবেশ করে। এখন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানে ফুটবল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’

ইয়াং শ্যংছুন, খেলোয়াড়, গত বছরের গ্রাম চ্যাম্পিয়নশিপ 

‘আমি বিশ্বাস করি এই শিশুদের ভবিষ্যত সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের গ্রাম টিম শুধু ভিলেজ লিগে অংশ নিয়েছে। তবে যথাযথ যত্ন নিলে এই শিশুরা চীনের হয়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে খেলতে পারে।’ 


ভিলেজ সুপারলিগের আরেক নাম সুন ছাও। এই আয়োজন এখন চীনের তরুণদের কাছে গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় অংশ হয়ে উঠছে। 


প্রতিবেদক : শান্তা মারিয়া

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

  

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী  

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী