অগাষ্ট ৫: চলতি বছর হলো চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘দুই সড়ক চেতনা’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনার দশম বার্ষিকী এবং দুই সড়ক তথা সিছুয়ান-সিচাং ও ছিংহাই-সিচাং সড়ক চালু হওয়ার ৭০তম বার্ষিকী। এই দুই সড়ক সিচাং তথা তিব্বতের জন্য আধুনিক সভ্যতার দরজা খুলে দিয়েছে। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে, লক্ষাধিক শ্রমিক ও কর্মকর্তার কঠোর পরিশ্রমের নির্মিত হয় এই দুই সড়ক। তখন একে বিশ্বের সড়ক নির্মাণ ইতিহাসের অলৌকিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
১৯৫৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সিছুয়ান-সিচাং ও ছিংহাই-সিচাং সড়ক একই সময় চালু হয়। দু’টি সড়ক ৪৩৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যেন দু’টি সাদা রঙের হাদা। সড়ক দুটি তুষারাবৃত মালভূমির বড় পরিবারের অংশ।
২০১৪ সালের ৬ অগাষ্ট সিছুয়ান-সিচাং ও ছিংহাই-সিচাং সড়ক চালু হওয়ার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সি চিন পিং এই মর্মে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেন যে, দু’টি সড়ক নির্মাণ ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়ায় কষ্টকে ভয় না পাওয়ার, মৃত্যুকে ভয় না পাওয়ার, দৃঢ়তার সাথে পরিশ্রম করার, সশস্ত্রবাহিনী ও জনগণকে একই পরিবার হিসেবে গণ্য করার, এবং জাতিগত ঐক্য প্রতিষ্ঠার ‘দুই সড়ক চেতনা’ সৃষ্টি হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে সি আরেক বার ‘দুই সড়ক চেতনা’ এবং ছিংহাই-সিচাং রেলপথ চেতনার কথা উল্লেখ করেন।
বিগত ৭০ বছরে, কয়েক প্রজন্মের পরিবহন-শ্রমিকের পরিশ্রমের ফলে, বর্তমান সিচাং সিছুয়ান, ইউননান, ছিংহাই ও সিনচিয়াংয়ের সাথে সংযুক্ত হতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী নেপালের সাথেও সিচাং তথা তিব্বতের পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া, লিনচি-লাসা, নাছু-লাসা ও লাসা-শিগাৎসেসহ বিভিন্ন মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে। সিচাংয়ে ‘পাঁচ শহরের মধ্যে তিন ঘন্টার অর্থনৈতিক বৃত্ত’ শীর্ষক বহুমূখী ত্রিমাত্রিক পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত সিচাংয়ে ১.২৩৩ লাখ কিলোমিটার সড়কপথ চালু হয়েছে। এতে ৬৬৬টি থানা ও ৪৫৯৬টি গ্রামের পাকা রাস্তা অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩ সাল পর্যন্ত গোটা সিচাংয়ে যানবাহনের জন্য গ্রামীণ রাস্তার দৈর্ঘ্য ৯৩ হাজার কিলোমিটার ছিল। ৭০ বছরে সিচাংয়ে ছিংহাই-সিচাং রেলপথ, লাসা-শিগাৎসে রেলপথ ও লাসা-লিনচি রেলপথ চালু হয়। ইএমইউ রেলপথের দৈর্ঘ ১১৮৭.৮ কিলোমিটার হয়েছে। বর্তমানে সিচাংয়ে আধুনিক রেলপথ নেটওয়ার্ক নির্মিত হচ্ছে। এ ছাড়া, সিচাং থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তর্জাতিক রেলপথ চালু করার পরিকল্পনা আছে। এটি উচ্চ মানের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার পর, দুই সড়ক বরাবর এলাকাগুলোর দারিদ্র্য দূর হয়েছে। কৃষকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও আয় বেড়েছে এবং গ্রামীণ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে।
চীন সিচাংয়ের সভ্যতার উন্নয়ন এবং বিভিন্ন জাতির অভিন্ন সমৃদ্ধের জন্য আরও কাজ করতে হবে। নতুন যাত্রায় আরেক ধাপে বিভিন্ন জাতির মধ্যে ব্যাপক যোগাযোগ ও সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে হবে; সামাজিক কাঠামো ও আবাসিক এলাকার সমন্বিত উন্নয়নের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে; বিভিন্ন জাতির মধ্যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সমন্বয়ের কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে; উন্নয়নের গোটা প্রক্রিয়ায় চীনা জাতির অভিন্ন চিন্তাচেতনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
মুক্তা, সিএমজি, বেইজিং থেকে।
(ছাই/আলিম/প্রেমা)