ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের তথ্য বের হচ্ছে, উত্তেজনা বাড়ছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির আশা মলিন হয়ে যাচ্ছে
2024-08-03 18:25:51

ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যা এবং গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের জন্য শুক্রবার "বিক্ষুব্ধ ক্রোধের দিন" ঘোষণা করেছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, হানিয়াহের হত্যা গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আশাকে ম্লান করে দিয়েছে। পাশাপাশি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ এখন ইরানকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলছে। সেই সঙ্গে আরও অনেক পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে পারে। যা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে। এ সম্পর্কে চীনের গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তার সংক্ষিপ্তসার উল্লেখ করা হলো।

হানিয়ার হত্যার পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর "প্রতিটি মসজিদ থেকে গর্জনকারী ক্রোধ মিছিল..." বের করে হামাস। শুক্রবার দোহার উত্তর লুসাইলে একটি কবরস্থানে হানিয়াহকে দাফন করা হয়। হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের আরও বিশদ তথ্য সাম্প্রতিক দিনগুলিতে বের হয়ে এসেছে। তথ্যে দেখা যায় যে, তিনি একটি দূর নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক যন্ত্রের মাধ্যমে নিহত হন; যা জুন মাসে ইরানের তেহরানে তার গেস্টহাউসে গোপনে স্থাপন করা হয়েছিল; কোনো বিমান হামলায় নয়। জেরুজালেম পোস্ট অনুসারে বোমাটিতে অত্যাধুনিক দূরবর্তী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল।

ইরান সরকার এবং হামাস এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে। ইসরায়েল তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি। ইরানকে আরও সংঘাতে টেনে নিয়ে, ইসরায়েল এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনতে চায়, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকাকে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত করা যায় এবং এটিকে তার কৌশলগত ফোকাস অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত করা থেকে বিরত রাখা যায়। এ মন্তব্য করেছেন ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজের পরিচালক সুন ত্যকাং।

সুন ত্যকাং উল্লেখ করেন যে, হানিয়াহকে হত্যার ফলে ইরানের পক্ষ থেকে শক্তিশালী প্রতিশোধ আসবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে বাধ্য করবে, এটি ইরান ও অন্যান্য ইসরায়েল-বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছ থেকে ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রতিশোধ নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। সুন বলেছেন যে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধ হতে পারে তার ভূখণ্ডের মধ্যে ইসরায়েলি এবং মার্কিন গোয়েন্দা নেটওয়ার্কগুলি ভেঙে দেওয়া এবং ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জন্য হিজবুল্লাহ এবং হুথি-সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে সহযোগিতা করা।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে আলাপ করেছেন, "ইরানের সব হুমকির" বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বাইডেন হুমকির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাকে সমর্থন করার প্রচেষ্টা নিয়েও আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে "নতুন প্রতিরক্ষামূলক মার্কিন সামরিক স্থাপনাও" অন্তর্ভুক্ত থাকবে, মিডিয়া জানিয়েছে।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষে পরিণত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এর ফলে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং যুদ্ধও বিস্তৃত হতে পারে, সম্ভাব্য আরও দল জড়িয়ে পড়তে পারে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি, সেইসাথে একটি বিস্তৃত প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল পুনর্মিলন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন জনাব সুন।

এদিকে, নিংজিয়া ইউনিভার্সিটির চায়না ইন্সটিটিউট ফর আরব স্টাডিজের পরিচালক লি শাওছিয়ান বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া যেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করছে ঠিক তেমনি অশান্ত পরিস্থিতি আবারও জনগণকে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সতর্ক হতে বাধ্য করেছে।

উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি ১৪টি ফিলিস্তিনি উপদলের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিরা জুলাইয়ের শেষের দিকে চীনের আমন্ত্রণে একটি পুনর্মিলন সংলাপ করেছে এবং বিভাজনের অবসান ও ফিলিস্তিনি ঐক্যকে শক্তিশালী করার বিষয়ে বেইজিং ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে, যা একটি নতুন সুযোগ উন্মোচন করেছে।

মোহাম্মদ তৌহিদ; সিএমজি, বেইজিং।