চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।
বিজনেস টাইম’ য়ের এই পর্বে থাকছে:
v পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে চীনের সিশা দ্বীপের প্রমোদভ্রমণ
v অলিম্পিকে সরব উপস্থিতি চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর
v চীন জুড়ে এক নতুন অর্থনীতির বিকাশ ঘটাচ্ছে পোষাপ্রাণী
v পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে চীনের সিশা দ্বীপের প্রমোদভ্রমণ
এই গ্রীষ্মে দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের সিশা দ্বীপ চীনা পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠছে আকর্ষণের কেন্দ্র। দক্ষিণ চীন সাগরে সিশা দ্বীপপুঞ্জে গ্রীষ্মের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে সেখানে আছে বিলাসবহুল প্রমোদতরী। যাতে চড়ে ঘুরে দেখা যাবে প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের সম্ভার।
এর মাঝে আবার কেউ কেউ আছেন, যারা কিনা পাঠ্যবইতে এ দ্বীপের অবাক করা ভূদৃশ্যের বর্ণনা পড়ে বিমোহিত হয়েই এসেছেন এখানে।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের শিক্ষার্থী কাও মিউয়িং বলেন,
‘আমি সিশা দ্বীপ দেখতে চাই, কারণ বইয়ে দ্বীপটির মনোরম দৃশ্য এবং সমুদ্রের স্বচ্ছ পানি নিয়ে একটি নিবন্ধ পড়েছিলাম।’
কাও মিউয়িং-এর বাবা গাও হু বলেন,
‘আমরা আমাদের মেয়ের পরামর্শে এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে তার পাঠ্যপুস্তক সাথে নিয়ে এ দ্বীপে ছবি তুলতে চায়।’
সানইয়া ফিনিক্স আইল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ক্রুজ বন্দর থেকে প্রমোদতরীতে চড়ে ১২ ঘণ্টার যাত্রায় পর্যটকরা পৌঁছাতে পারবেন এই ভূস্বর্গে।
বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে যাত্রীদের জন্য আছে বিশেষ কিছু সুবিধা। এখানে আছে একটি সামুদ্রিক জাদুঘর, সিনেমা হল এবং বইয়ের দোকান। বিনোদনের সব অনুষঙ্গই পাওয়া যাবে এখানে।
২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে সিশা দ্বীপে প্রমোদভ্রমণ শুরু হয়েছে। এর অবকাঠামো, সেবা, ধারণক্ষমতা ও মান উন্নত হচ্ছে প্রতিবছর।
কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে হাইনানকে একটি
শক্তিশালী পর্যটনকেন্দ্র ও পছন্দের গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কর্তৃপক্ষ সিশা দ্বীপপুঞ্জে ক্রমবর্ধমানভাবে পর্যটনের প্রসার ঘটাবে। সেই সঙ্গে বাড়বে আন্তঃসীমান্ত প্রমোদভ্রমণও।
।। প্রতিবেদন: শাহানশাহ রাসেল
।। সম্পাদনা: ফয়সল আব্দুল্লাহ
v অলিম্পিকে সরব উপস্থিতি চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর
অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিডিয়া সম্প্রচারে দূরবর্তী বিতরণে স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টিংয়ের বিকল্প হিসেবে চালু হলো ক্লাউড কম্পিউটিং। আর এ পদ্ধতিতে এবার নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। মর্যাদাপূর্ণ এ ক্রীড়া ইভেন্টে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ শুধু দর্শকদের খেলা দেখার নতুন অভিজ্ঞতাই দিচ্ছে না, বরং বিশ্ব মঞ্চে এ ধরনের সম্প্রচার ব্যবস্থায় চীনা কোম্পাানিগুলোর সক্ষমতা ও স্বীকৃতির নতুন অধ্যায় রচনা করছে।
এবারের অলিম্পিকে যে পরিমাণ লাইভ সিগনাল সম্প্রচার হচ্ছে তার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসছে চীনা টেক জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপের ক্লাউড ব্রডকাস্টিং পরিষেবা আলিবাবা ক্লাউড থেকে। প্রতিষ্ঠানটি এবারের প্যারিস অলিম্পিকের বৈশ্বিক পার্টনার। অলিম্পিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিসেসের সঙ্গে যৌথভাবে আলিবাবা ক্লাউড প্রথমবারের মতো চালু করেছে ওবিএস ৩.০ প্রযুক্তি, যা মিডিয়া আউটলেটগুলোকে অলিম্পিকের ছবি ও ভিডিও পাঠাচ্ছে।
আলিবাবা ক্লাউডের গ্লোবাল ক্লাউড অবকাঠামোর সাহায্যে এবারের অলিম্পিক ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে মোট ১১ হাজার ঘণ্টার কনটেন্ট বিতরণ করা হবে, যা দেখবে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক।
তাৎক্ষণিক ছবি ও ভিডিওচিত্র দেখার ক্ষেত্রে ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম এখন ট্রান্সমিশন বিশ্বের বাকিসব পদ্ধতিকে ছাড়িয়ে গেছে। এর বাণিজ্যিক পরিসরও ব্যাপক। সেই সঙ্গে এটি বেশ সাশ্রয়ীও।
আলিবাবা ক্লাউড প্যারিস গেমসে এআই যুক্ত মাল্টিক্যামেরা রিপ্লে সিস্টেমও দিচ্ছে। ব্যাডমিন্টন, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, বাস্কেটবল, বিচ ভলিবল এবং টেবিল টেনিসের মতো ২১টি খেলার জন্য ১৪টি ভেনুতে চালু হয়েছে এই সিস্টেম।
সিস্টেমগুলো ক্রীড়াবিদদের পারফরম্যান্সের স্লো-মোশন রিপ্লে দেখাবে। বিশ্বব্যাপী দর্শকরা এ খেলাগুলোর লাইভ ফুটেজকে সুনির্দিষ্ট থ্রিডি মডেলেও দেখতে পারবেন। এতে করে ক্রীড়া অনুরাগীরা অলিম্পিকে অভিজ্ঞতায় যেমন নতুনত্বের স্বাদ পাবেন, তেমনি পারফরম্যান্সের গভীরতা বিশ্লেষণেও পাবেন নতুন সুযোগ।
অলিম্পিকের স্পোর্টস ডেটা বিশ্লেষণ এবং প্রতিযোগিতার কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়ার জন্য চীনের বাস্কেটবল দলের সাথে কাজ করছে চীনা এআই কোম্পানি সেন্সটাইম এআই।
কোম্পানির এআই-চালিত প্ল্যাটফর্মটি বাস্তব সময়ে প্রতিটি অ্যাথলেটের গতির অবস্থা এবং বাস্কেটবলের গতিবিধি বিশ্লেষণ করছে। থ্রিডি মোশন ক্যাপচার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে অ্যাথলেটদের কোচিং টিমকে তাৎক্ষণিক ফলাফল জানাচ্ছে এই সিস্টেম।
বেইজিং একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষক ওয়াং পেং বলেছেন, প্যারিস গেমসে চীনের অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ বিশ্বজুড়ে দর্শকদের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা বদলে দিয়েছে। এটি চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী শ্রেষ্ঠত্বকেও তুলে ধরেছে। সেই সঙ্গে এমন একটি বহুমাত্রিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের ব্র্যান্ডের প্রভাবও বাড়াচ্ছে। এতে করে বিদেশি দর্শকরা ক্লাউড কম্পিউটিং এবং এআই নিয়ে চীনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবে বলেও জানান ওয়াং।
অন্যদিকে, চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি বাইদু ইনকরপোরেশন এবারের অলিম্পিককে ঘিরে একটি এআই সহায়ক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছে। চীনের ডাইভিং দলের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে এটি। লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি কোচদের জটিল সব নির্দেশনা বুঝতে পারে এবং ক্রীড়াবিদদের ডাইভিং ভঙ্গি ও অন্যান্যা ক্রিয়াকলাপ রেকর্ড করতে পারে।
চাইনিজ একাডেমি অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের ই-কমার্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী রিসার্চ ফেলো হং ইয়ং বলেছেন, বিশ্বমানের ক্রীড়া ইভেন্টে চীনা কোম্পানিগুলো যেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা মূলত প্রযুক্তি বিশ্বের প্রতি প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই বহিঃপ্রকাশ। আর ওই প্রতিশ্রুতি পূরণের ট্র্যাকে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ছুটে যাচ্ছে দুর্দান্ত গতিতে।
।। প্রতিবেদন: ফয়সল আব্দুল্লাহ
।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল
v চীন জুড়ে এক নতুন অর্থনীতির বিকাশ ঘটাচ্ছে পোষাপ্রাণী
পোষাপ্রাণীর বিক্রি চীনের অর্থনীতিতে এনেছে নতুন গতি। অনেকের আগ্রহ বাড়ছে পোষা প্রাণীর ব্যাপারে। তারা ভ্রমণেও সঙ্গে রাখছেন তাদের প্রিয় প্রাণীটিকে।
চিয়াংসু প্রদেশের সুচৌ শহরের একটি হোটেলে পোষা প্রাণীর জন্য ৯টি কক্ষ আছে। প্রতিদিনই রুমগুলো ভাড়া হয়।
শখ করে প্রাণী পোষেন হ্যাং চেসি। তিনি জানান, যখন আমরা ভ্রমণে যাই, তখন পোষা প্রাণীবান্ধব হোটেল খুঁজি।
জেডি মার্কেটের একটা পোষাপ্রাণী ও এ সংক্রান্ত সরঞ্জাম বিক্রির দোকানের মালিক লিউ ছাও। তিনি বলেন, ‘এখন মালিকরা কোথাও ভ্রমণে গেলে তাদের পোষা প্রাণীটাকে একা ঘরে রেখে যেতে পারে। এই অবস্থায় স্বয়ংক্রিয় প্রাণীর ফিডার, লিটার বক্স, পানির ফোয়ারা ওগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।>
বাড়ির সবাই ভ্রমণে বের হলে এখন কৃত্রিম বুদ্ধি বা এআই প্রযুক্তিও পোষাপ্রাণীর দেখাশোনা করছে।
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের শেনছেনের একটা এআই প্রতিষ্ঠান এমন এক ক্যামেরা ব্যবহার করছে যা পোষা প্রাণীর গতিবিধি অনুসরণ করতে পারে। ওই ক্যামেরা প্রাণীর ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোাস্টও করতে পারে। এ প্রযুক্তি মাত্র এক বছর বাজারে রয়েছে এর টার্নওভার প্রায় ৭০ লাখ ইউয়ান।
স্থানীয় একটি এআই ডিভাইস কোম্পানির প্রধান লু শেংবো বলেন,
‘প্রাণীর আচরণের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে, আমরা ক্রমাগত নতুন প্রযুক্তি পণ্য তৈরি করে চলেছি। তাই কোম্পানির দ্রুত প্রসার ঘটছে।’
চীনের পোষা প্রাণী শিল্পের সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, চীনে পোষা প্রাণীর বাজার ছিল প্রায় ২৮০ বিলিয়ন ইউয়ান। আগামী ২০২৬ সালে এ বাজার ৩৬০ বিলিয়ন ইউয়ানে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
।। প্রতিবেদন: শাহানশাহ রাসেল
।। সম্পাদনা: ফয়সল আব্দুল্লাহ
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: শাহানশাহ রাসেল
অডিও সম্পাদনা: নাজমুল হক রাউয়ান
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী