নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
কী রয়েছে এবারের পর্বে
১. আরও বেশি নারী বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে আসুক: ইয়ান নিয়েং
২. তোং পোশাকের ঐতিহ্য উদ্ভাসিত নারীর হাতে
৩. প্যারিস অলিম্পিক: ডাইভিংয়েও প্রথম স্বর্ণ জিতেছে চীনের নারীরা
আরও বেশি নারী বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে আসুক: ইয়ান নিয়েং
বিজ্ঞান চর্চায় নারীদের আরও বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রতিভাবান ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নারী বিজ্ঞানী ইয়ান নিয়েং। সম্প্রতি চীনের এক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি। এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর কথা শুনবো প্রতিবেদনে।
চীনের একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ইয়ান নিয়েং । তিনি মনে করেন নারীদের আরও বেশি সংখ্যায় বিজ্ঞানচর্চায় এগিয়ে আসা উচিত। ইয়ান নিয়েং বেইজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি এ বছর লরিয়েল ইউনেসকোর উইমেন ইন সায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নারীদের বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করার জন্য এই সম্মাননা দেয়া হয়ে থাকে।
তিনি মানবদেহে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করছেন। কিভাবে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া কমিয়ে ওষুধের কার্যকরিতা বাড়ানো যায় সেটি নিয়ে কাজ করছেন তার টিম। স্ট্রাকচারাল বায়োলজি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বইয়ের লেখক তিনি। তিনি ইউএস ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এর সম্মানিত আন্তর্জাতিক সদস্য। তিনি অ্যাকডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এরও অনারারি মেম্বার। তিনি মানবদেহে প্রোটিনের কার্যকারিতা এবং বিভিন্ন রকম প্রোটিন কণার ব্যাপ্তি নিয়ে গবেষণা করছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান এ নারী বিজ্ঞানী মনে করেন, নারীদের আরও অধিক সংখ্যায় বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সম্প্রতি চীনের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন ইয়ান। তিনি মনে করেন বিজ্ঞান চর্চায় যদি আজকের নারীকে এগিয়ে যেতে হয় তাহলে প্রয়োজন অনেক বেশি রোল মডেল। তিনি তার এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোল মডেলদের ভূমিকা স্মরণ করেন। চীনের নারী বিজ্ঞানী যেমন, খুয়াং থিংইয়ুন, ওয়াং চিচেন, শি ইয়ুনইয়ু, লি ফাংহুয়া, চাং মিমান তাঁর কাছে রোল মডেল। তিনি যখন গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট ছিলেন তখন এই বিখ্যাত নারী বিজ্ঞানীদের দেখেই প্রেরণা পেয়েছিলেন এবং তার কাছে মনে হয়েছিল নারীরাও বিজ্ঞান চর্চায় যথেষ্ট ভালো করতে পারে।
তিনি বলেন যখন তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন তখন তার চারপাশে অনেক নারীকে দেখেছেন বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে আসতে। সেখানে তার সিনিয়র জুনিয়র অনেক নারী বিজ্ঞানী ছিলেন। এই ধরনের রোল মডেলের আরও বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
তরুণ প্রজন্মের নারীদের আরও বেশি বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে এসে পরবর্তি প্রজন্মের জন্য রোল মডেল সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি। তিনি মনে করেন বিজ্ঞানর্চা নারীর জন্য পেশা হিসেবেও খুব উপযোগী। কারণ নারীরা মূলত ধৈর্যশীল এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কোন কাজে নিয়োজিত থাকার ক্ষমতা তাদের অনেক বেশি।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
তোং পোশাকের ঐতিহ্য উদ্ভাসিত নারীর হাতে
চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম তোং জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। তাদের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ হলো পোশাক বুনন। এই কারুশিল্প শুধুমাত্র তোং নারীদেরই আয়ত্তে রয়েছে। নারীদের এই বিশেষ কারুশিল্প নিয়ে এখন রয়েছে একটি প্রতিবেদন।
তোং জাতিগোষ্ঠীর বিশেষ পোশাক তৈরির কারুশিল্প চীনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্তর্গত। পোশাক তৈরির এই কারুশিল্প নারীদের একান্ত নিজস্ব। তোং এথনিক পোশাকের ঐতিহ্য একহাজার বছরের বেশি প্রাচীন। এই পোশাক তৈরির রয়েছে বিশেষ কয়েকটি কৌশল। তোং জাতির প্রতিটি নারী এই কৌশল জানেন।
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচোও প্রদেশের তালি তোং গ্রামে রয়েছে তোং জনগোষ্ঠীর বসবাস। এখানে গড়ে উঠেছে তোওসা নারী সমবায় সমিতি।
২০১৫ সালে জেনি ছোও নামে একজন উদ্যোগী নারী এই সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। তিনি প্রথমে এলাকার নারীদের সংঘবদ্ধ করেন। তিনি মধ্য বয়স্ক নারীদের কাছ থেকে যেন তরুণ নারীরা বুনন কৌশল শিখতে পারেন সেজন্য এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।
এই সমিতির সদস্যদের তৈরি করা পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বাজারজাত করণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে একজন কারুশিল্পী ইয়াং শ্যংহুয়া। তিনি তোং কাপড় তৈরির শিল্প শিখেছেন শৈশবে তার মায়ের কাছ থেকে। তার মা শিখেছিলেন তার মায়ের কাছ থেকে। এইভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তোং নারীরা তাদের বুনন কৌশলকে ধারণ করছেন এবং পরবর্তি প্রজন্মের কাছে পৌছে দিচ্ছেন।
এই কাপড় নীল রঙের হয়। ইন্ডিগো প্ল্যান্ট বা নীলগাছের পাতা সংগ্রহ করা হয় বন থেকে। চরকায় সুতা কেটে তাতে কাপড় বোনা হয়। এরপর কাপড় নীল রঙে রাঙানো হয়। নীল রঙের কাপড়ের উপর এমব্রয়ডারি করা পাড় আলাদাভাবে বসিয়ে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী এই কাপড়।
ইয়াং শ্যংহুয়া বলেন, তোং জাতির সব মেয়েই এই কাপড় তৈরি করতে পারে। যদি কেউ না পারে তাহলে তাকে অলস বা অকর্মণ্য হিসেবে মনে করা হয়। এই কাপড় তৈরি করা অনেকটা উপহার তৈরির মতো। এই কাপড় তৈরির পর সেটা যখন তোং নারীরা পরেন তখন পরষ্পরের শিল্প নৈপুণ্যের প্রশংসা করেন।
সমিতির পক্ষ থেকে নারীরা তৈরি করছেন ব্যাগ , জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী। এসব সামগ্রী বিক্রি করে তাদের আয় বাড়ছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
কণ্ঠ: হোসনে মোবারক সৌরভ
প্যারিস অলিম্পিক: ডাইভিংয়েও প্রথম স্বর্ণ জিতেছে চীনের নারীরা
প্যারিসে ২০২৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে প্রথম স্বর্ণপদক জিতেছে চীন। নারীদের সিনক্রোনাইজড ৩ মিটার স্প্রিংবোর্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সারাহ ব্যাকন ও কাসিডি কুক ৩১৪.৬৪ পয়েন্ট নিয়ে রৌপ্য এবং ব্রিটেনের ইয়াসমিন হার্পার ও স্কারলেট মিউ জেনসেন ৩০২.২৮ পয়েন্ট নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪-এ ডাইভিংয়েও প্রথম স্বর্ণ জিতেছে চীন। নারীদের সিনক্রোনাইজড ৩ মিটার স্প্রিংবোর্ডে ৩৩৭.৬৮ পয়েন্ট পেয়ে চীনকে প্রথম পূর্ণ দিবসের দ্বিতীয় স্বর্ণ এনে দেন চ্যান ইয়ানি ও চেন ইওয়েন।
ডাইভিংয়ের আটটি স্বর্ণের মধ্যে আটটিই জিততে চায় অলিম্পিক জায়ান্টরা। প্রথমটি জিতে নেয়ার পর এখন বাকি সাতটি স্বর্ণের জন্য লড়বে তারা।
এ চীনা জুটি গত তিনটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জয় করায় এবার প্যারিস অলিম্পিকেও হট ফেভারিট হিসেবে খেলতে নামেন এবং শেষ পর্যন্ত তারাই হেসেছেন স্বর্ণের হাসি। চীনাদের সাফল্যের পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন সমর্থকরা। চীনা পতাকা নিয়ে উচ্ছল সমর্থকরা উল্লাস ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলেন ডাইভি সেন্টারটি। চীনা ডাইভাররা যে সময়ই লড়াইয়ে নেমেছেন তখনই তাদের উল্লাস ধ্ববনিতে জুগিয়েছেন চীনা দর্শক।
গত এক দশক ধরে ডাইভিংয়ে রাজত্ব করে চলেছে চীনারা। ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিক গেমসে তারা ডাইভিং থেকে সাতটি স্বর্ণপদক জয় করে। তবে কখনো আটটি স্বর্ণের সবগুলোই জেতা হয়নি। এবার সেই লক্ষ্যে ছুটছে চীনা ডাইভাররা।
২০০০ সালে অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হয় এ ইভেন্টটি। সিডনিতে সেই গেমসে সাতটির মধ্যে ছয়টি স্বর্ণ জয় করে চীন। তিন বছর আগে টোকিও অলিম্পিকে এ ইভেন্টে চীনকে স্বর্ণ এনে দেন শি থিনমাও ও ওয়াং হ্যান।
১৯৮৪ সালের অলিম্পিকে ডাইভিং প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম স্বর্ণটি জিতে নেয় চীন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪টি স্বর্ণের ৪৭টি গেছে চীনে। এছাড়া ২৩টি রৌপ্য ও ১০টি ব্রোঞ্জও জিতেছেন চীনারা।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ