পর্বতারোহন গাইড লি ইউয়েন
2024-08-01 15:23:07

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত মুজতাগের পর্বতারোহণ বেস ক্যাম্পে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। পাহাড়ের বাতাসে এক ডজনেরও বেশি তাঁবু এবং দিনে তিন বেলার সাধারণ খাবারের নিরস জীবন এখানে। এত সাদামাটা এবং প্রাকারান্তরে বিরক্তিকর জীবন পর্বতারোহন গাইড লি ইউয়েন খুব উপভোগ করেন।

২০০৭ সাল থেকে, লি ইউয়েন প্রতি বছর জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত শহর ত্যাগ করে পর্বতারোহণের মওসুমকে স্বাগত জানাতে দ্বিধা ছাড়াই মুজতাগ শিখরে যান।

তার জন্য ‘আইসবার্গের জনক’ হিসাবে পরিচিত মুজতাগ শিখর তার জীবনে আরও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

লি ইউয়েন সিনচিয়াং পর্বতারোহণ সমিতি’র মুজতাগের আরোহণ দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘মুজতাগের পিকটি এখন সিনচিয়াংয়ের সবচে জনপ্রিয় পর্বতারোহণ গন্তব্য হয়ে ওঠে। এর কারণ হলো এটির মৃদু ঢাল এবং তুলনামূলকভাবে এখানে কম আরোহণ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কিছু স্কি অনুরাগী এটিকে স্কিইং এবং পর্বতারোহণের একটি ‘পবিত্র ভূমি’ হিসেবে বিবেচনা করেন।’

দশ বছরেরও বেশি সময় আগে লি ইউয়েন, যিনি পোশাক শিল্পে কাজ করতেন, ক্যারিয়ারে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। বিচলিত হয়ে তিনি কারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন এবং বাইরের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে আরাম করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন,  ‘সেই সময়ে সেই চাকরিতে সাফল্য আনতে পারিনি, এবং আমি কোন উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়নি।’

অপ্রত্যাশিতভাবে, এটি কেবল শিথিল করার একটি উপায় ছিল, কিন্তু তিনি এটিকে থামাতে পারেননি। লি ইউয়েন ধাপে ধাপে আরোহণের জন্য ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হয়েছিলেন। অবশেষে, তিনি হৃদয়ের কথা শুনে নিজের আত্ম-মূল্য খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সেই সময় সিনচিয়াংয়ের বাণিজ্যিক পর্বতারোহণ কার্যক্রম সবে শুরু হয়েছিল। চীনের খুব কম লোকই মুজতাগ পিকের জন্য প্রত্যন্ত দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ে আসতেন, শুধুমাত্র কিছু বিদেশী এটি পছন্দ করতেন। লি ইউয়েন যখন এই পর্বতারোহণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তখন তার বয়স ৩০ বছরের বেশি ছিল। তার কাছে পর্যাপ্ত তহবিল বা গ্রাহকদের একটি স্থিতিশীল উত্স ছিল না। একজন যুবকের মতো সবচে প্রাথমিক কাজ থেকে শুরু করতে বাধ্য হন তিনি। যেমন, বিদেশী পর্বতারোহণ উত্সাহীদের জন্য লাগেজ বহন এবং পরিবহন করা।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সে সময় আমার মাসিক বেতন ছিল মাত্র ১৬০০ ইউয়ান রেনমিনপি এবং আমি সকালের নাস্তাও খেতে পারতাম না। সেই সময়ে আমি কল্পনা করিনি যে, পর্বতারোহণ শিল্প এতটা বিকাশ করতে পারে।

তিনি পর্বত আরোহণ পছন্দ করেন। এই কাজটি তাকে পাহাড়ে আরোহণের আরও সুযোগ দেয় এবং তিনি খুবই সন্তুষ্ট বলে জানান।

কেন তিনি পর্বত আরোহণ পছন্দ করেন? ইতোমধ্যেই ৫২ বছর বয়সী লি ইউয়েনের জন্য, পর্বত আরোহণ আর শুধুমাত্র পর্বত আরোহণ নয়।

তিনি বলেন, ‘তুষার-ঢাকা পাহাড়ে, প্রত্যেককে স্ক্র্যাচ থেকে শুরু করতে হবে, প্রতিটি দক্ষতা এবং প্রতিটি খুঁটিনাটি নিখুঁত করতে হবে, এবং তাদের দাঁত-কষে উপরে উঠতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি একটি খুব বড় পরীক্ষা এবং চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আপনি এটি অভিজ্ঞতা করার পর একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ পেতে পারেন। আপনি জীবনকে কীভাবে দেখেন সে সম্পর্কে নানা দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে পারেন।’

পর্বত আরোহণের কারণে লি ইউয়েন বহু ধরণের মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছেন এবং তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, জীবনযাপনের অনেক উপায় আছে।

২০১৬ সালের দিকে, দেশীয় পর্বতারোহণ উন্নয়নের ‘দ্রুত পথে’ প্রবেশ করেছে। গত দুই বছরে, সিছুয়ানের সিকুনিয়াং পর্বত এবং ইউনানের হাবা স্নো মাউন্টেনকে প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে প্রবেশ-স্তরের তুষার পর্বতগুলো নানা সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শেয়ার করার পরে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। পর্বতারোহণে চীনের অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ, মুজতাগ শিখরের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি সমতল ও সোজা এবং পাহাড়ের গোড়ায় পৌঁছেছে। স্থানীয় সরকারের সহায়তায় ১১০ মিলিয়ন ইউয়ানের বিনিয়োগে মুজতাগ পর্বতারোহণ জেলার নির্মাণ কাজও শুরু হতে চলেছে এবং পর্বতারোহণের পরিষেবার নিশ্চয়তা ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে।

লি ইউয়েন আরও তরুণদের দলে যোগ দিতে দেখে খুব খুশি হয়েছেন। কিন্তু তিনি মনে করেন, পাহাড়ে আরোহণ করা শুধু পা থাকলে সম্পন্ন করা সহজ ব্যাপার নয়। যদিও তিনি ইতিমধ্যেই পর্বতারোহণের মৌসুমের কর্মপ্রবাহের সাথে খুবই সুপরিচিত, তবুও তিনি আগ্রহী পর্বতারোহীদের মুখোমুখি হওয়ার সময় বিশদভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি বারবার গতি, শ্বাস-প্রশ্বাস, ছন্দ এবং সারির মতো প্রযুক্তিগত বিবরণের উপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকলে পর্বতারোহণ এতটা জনপ্রিয় হবে না। কিন্তু এই খেলাটিকে প্রথমে জীবন ও প্রকৃতিকে সম্মান করতে শিখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, মুজতাগ পিকের হাইপোক্সিয়া, নিম্নচাপ, শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মি এবং নিম্ন তাপমাত্রার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের বয়ে আনা অনেক অসুবিধা আছে।’

সিনচিয়াংবাসী হিসেবে লি ইউয়েন বলেন, ‘সিনচিয়াংয়ের সমৃদ্ধ পর্বতারোহণ সম্পদ রয়েছে, কিন্তু পর্বতারোহণকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে এটি অগ্রভাগে নেই। পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের সাথে তুলনা করলে এ খেলায় অংশগ্রহণকারী সিনচিয়াংবাসীদের সংখ্যা বেশি নয়।’ তার উত্সাহে আরো বেশি লোক এই খেলায় অংশ নেবে এবং সিনচিয়াংয়ের পর্বতারোহরণের আরো উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

লিলি/হাশিম