‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৮০ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. তাইওয়ানের তরুণদের ‘রন্ধন সেতু’
২. তরুণদের আন্ডারওয়াটার রোবট প্রতিযোগিতা ছিংতাওতে
৩. বেইজিংয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক যুব কবিতা উৎসবের ব্রিকস অধিবেশন অনুষ্ঠিত
৪. ইন্টেলিজেন্ট নির্মাণ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত বেইজিংয়ে
১. তাইওয়ানের তরুণদের ‘রন্ধন সেতু’
পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ছোয়ানচৌতে তাওইয়ুয়ান রন্ধনপ্রণালীর আদি ও অকৃত্রিম স্বাদ নিয়ে কাজ করছেন তাইওয়ানের দুই তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের এ উদ্যোগ শুধু স্থানীয় ভোজনরসিকদের মন জয় করেনি বরং তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের মানুষের মধ্যে পরিচিতি এবং সাংস্কৃতিক সংযোগের একটি বৃহত্তর অনুভূতিও গড়ে তুলেছে।
সম্প্রতি চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিজিটিএনে সম্প্রচারিত "দ্য ওয়ে হোম" শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই দুই উদ্যোক্তার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এতে তাইওয়ানের তরুণদের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরা হয়েছে।
বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তাইওয়ানের বিপরীতে অবস্থিত ফুচিয়ান প্রদেশে তারা তাদের স্বপ্ন বুনতে আসেন।
৩৩ বছর বয়সী ছং ছুয়ান ইয়াং এবং ৪০ বছর বয়সী ছং ইয়াও ইউ তাইওয়ানের তাওইয়ুয়ান থেকে এসেছেন। তারা তাদের ভোজনশালাটি ২০২৩ সালের শেষের দিকে খোলেন। সেখানে তাইওয়ান-স্টাইলের কিছু ভাজা খাবারের তালিকা রাখা হয়।
ছং ছুয়ান ইয়াংয়ের তাইওয়ানে একটি রেস্তোরাঁ ছিল। কিন্তু মহামারীর কারণে এটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
"সেই সময়, ওটা আমার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। ক্যারিয়ার পরিবর্তন করার কথা ভাবছিলাম। এসময় মিস্টার ছং আমার দাদার রেসিপি সম্পর্কে জানতে চান। আমি তার কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী নানা রান্না শিখতে ফিরে যাই। তারপর আবার ব্যবসা শুরুর সিদ্ধান্ত নিই।’
ছোয়ানচৌতে জনপ্রিয় তাইওয়ানের স্ন্যাকস আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ দুই উদ্যোক্তা। কারণ, ছোয়ানচৌর খাবারের সঙ্গে তাইওয়ানের মিল আছে বেশ। এবার তাদের মেন্যুতে থাকবে ডিপ-ফ্রাই ক্রিস্পি চিকেন।
‘ছোয়ানচৌতে, আমার সঙ্গে চীনের মূল ভূখণ্ডের যারা বিনিয়োগকারী ছিলেন, তারাই পরামর্শ দেন, তাইওয়ান থেকে আমরা জনপ্রিয় স্ন্যাকস এখানে নিয়ে আনতে পারি।’
এ দুজন শুধু তাইওয়ান থেকে স্ট্রিট ফুডের সংস্কৃতিটাই নিয়ে আসছেন না, ছং ছুয়ান ও ছং ইয়াও তাদের এই ব্যবসায়িক উদ্যোগকে প্রণালীর দুই পাশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের একটি সেতু হিসেবেও দেখেন। তারা মনে করেন, মূলত স্ট্রিট ফুডই হলো সেই খাবার, যা কিনা দুটি সংস্কৃতির সেতু হিসেবে কাজ করতে পারবে।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
২. তরুণদের আন্ডারওয়াটার রোবট প্রতিযোগিতা ছিংতাওতে
পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের ছিংতাওতে হয়ে গেল ২০২৪ চায়না ইন্টারন্যাশনাল ওশান আন্ডারওয়াটার রোবট প্রতিযোগিতা। যেখানে দেখানো হয়েছে চীনের প্রতিভাবান তরুণ উদ্ভাবকদের তৈরি অত্যাধুনিক সব রোবোটিক্স প্রযুক্তি।
গেল সপ্তাহে শেষ হওয়া দুই দিনব্যাপী ইভেন্টটি ছিল 'এমব্রেসিং দ্য ওশান, ইন্টেলিজেন্স লিডস দ্য ফিউচার' প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে।
৩৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৯টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০০ তরুণ অংশগ্রহণকারী ছয়টি বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে এতে। বিভাগগুলো হলো—সৃজনশীল, বিজ্ঞান-কল্পকাহিনি, সিমুলেশন, চালকবিহীন ডুবো যান, দূরচালিত যান, এবং শিল্প সম্পর্কিত।
চায়না ওশেনিক ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি জেনারেল পান সিনছুন বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিভাকে চিহ্নিত করি এবং তাদের বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দেই।’
তীব্র এ প্রতিযোগিতাটি ছিল চাহিদাপূর্ণ, যাতে অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের রোবটকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জিং পথে চালাতে হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেখাতে হয়েছে রোবটগুলোর দক্ষতা।
এ আয়োজনের মূল লক্ষ্যগুলো তুলে ধরেন চাইনিজ একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সদস্য চিন সিয়াংলং।
তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, উদীয়মান উদ্ভাবনগুলো উন্মোচন করার আশা করা হচ্ছে, যা নতুন মানের উৎপাদনশীল শক্তিতে বিকাশ করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত শিল্পখাতে একীভূত হতে পারে।
শিক্ষার্থীরা তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের ব্যবহারিক পরীক্ষা করার একটি মূল্যবান সুযোগ হিসেবেই দেখে প্রতিযোগিতাটিকে।
চীনের ওশান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সিয়া চিয়াওফেই বললেন, আরও হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। এই প্রতিযোগিতাটি বেশ উচ্চ পর্যায়ের। আমি এটাকে আমার তাত্ত্বিক জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগের দুর্দান্ত সুযোগ হিসেবে দেখছি।
পানির নিচে রোবোটিক্স কতটা এগিয়েছে তা তুলে ধরে এই ইভেন্টটি। পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা শীর্ষ গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যতে সামুদ্রিক অনুসন্ধান প্রকল্পসহ বৈজ্ঞানিক গবেষণা উদ্যোগে জড়িত হওয়ার সুযোগ পাবে।
এ ছাড়াও শীর্ষ উদ্ভাবনগুলো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থা এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং সেখানে উদ্ভাবনগুলোর বাস্তব প্রয়োগের সুযোগও তৈরি হবে।
প্রতিবেদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. বেইজিংয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক যুব কবিতা উৎসবের ব্রিকস অধিবেশন অনুষ্ঠিত
ব্রিকস দেশগুলোর জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক যুব কবিতা উৎসবে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। গেল সপ্তাহে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে ব্রাজিল, রাশিয়া এবং ভারতের মতো ১০ টি দেশের তরুণ কবিদের একত্রিত করা হয়। এতে উত্তরাধিকার, উদ্ভাবন এবং কবিতার মূল্যবোধের মতো বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে আদান প্রদান করা হয়।
বিশেষ অধিবেশনটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) চ্যচিয়াং প্রাদেশিক কমিটির চীনা লেখক সমিতি এবং প্রচার বিভাগের যৌথ আয়োজনে এই অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানান, ২০২৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের উত্থাপিত বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করা এবং বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে বিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে উত্সাহিত করাই এই আয়োজনের লক্ষ্য।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৪. ইন্টেলিজেন্ট নির্মাণ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত বেইজিংয়ে
চীনে ইন্টেলিজেন্ট নির্মাণের বিষয়ভিত্তিক একটি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে সমকালীন তথ্যচিত্র সম্প্রচার এবং একটি বই প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এই ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
ইভেন্টটি যৌথভাবে আয়োজন করে চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিজিটিএন এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন সিএসসিইসি।
‘আর্কিটেকচার ইন্টেলিজেন্স’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রটি অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোতে চীনা নির্মাণের প্রযুক্তি তুলে ধরেছে, যা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সহযোগিতায় যোগদানকারী দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নের প্রচারে চীনের ভূমিকা প্রদর্শন করে। তথ্যচিত্রটি সিজিটিএনসহ একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার করা হবে।
বিল্ডিং লাইভস নামে বইটি সিজিটিএন এবং সিএসসিইসি-এর যৌথ প্রচেষ্টায় করা একাধিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।
বিশ্বব্যাপী সৃজনশীল তরুণ প্রতিভাদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-ক্ষমতাপ্রাপ্ত উদ্ভাবনী ঘটনাগুলোকে উন্মোচন ও প্রদর্শনের জন্য সিজিটিএনের মিডিয়া সুবিধাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করার লক্ষ্যে গ্লোবাল ইনোভেশন হাব নামে পরিচিত একটি প্রকল্পও উদ্বোধন করা হয়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী