‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৮০
2024-07-30 10:00:24

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় চীন

২। শীতল আবহাওয়ার গন্তব্যে ছুটছে পর্যটকরা

৩। ঘুরে আসুন বাজনার শহরে

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮০তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।

 

১। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় চীন

বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘বেইজিং সেন্ট্রাল এক্সিস’। শুধু এই ঐহিহ্যবাহী জায়গাটিই নয়, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে চীনের আরও দুটি প্রাকৃতিক স্থান। সম্প্রতি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৬তম সেশনে এ অন্তর্ভুক্তির কথা জানানো হয়।

বেইজিং সেন্ট্রাল এক্সিস হলো, একগুচ্ছ প্রাচীন ভবনের অবস্থান।  এর মোট দৈর্ঘ্য ৭.৮ কিলোমিটার, যা ১৩ শতকের পর থেকে চীনা ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর একটি সিরিজকে একত্রিত করে।

 

 

এটি চীনা সভ্যতার একটি অনন্য সাক্ষী এবং সবচেয়ে দীর্ঘতম এবং সবচে সম্পূর্ণ প্রাচীন নগর কেন্দ্র। ৭০০ বছরেরও বেশি আগে ডিজাইনাররা মহাবিশ্বের ঐতিহ্যগত চীনা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, এই রেখাটি আকাশের তারার সাথে সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সীমাহীনভাবে প্রসারিত হতে পারে।

 

অন্য দুটি স্থানের একটি হলো বাদাইন জারান মরুভূমি-বালির টাওয়ার এবং লেক। অপরটি হলো চীনের ইয়েলো সাগর-বোহাই উপসাগরের উপকূল সংলগ্ন পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য।

বাদাইন জারান মরুভূমি উত্তর চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আলাশান মালভূমিতে অবস্থিত। এটি চীনের তৃতীয় বৃহত্তম মরুভূমি এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থানান্তরিত মরুভূমি।

অঞ্চলটি উঁচু বালির টিলা এবং পাহাড়ের মাঝে অসংখ্য হ্রদের জন্য বিখ্যাত। বাদাইন জারান মরুভূমির ল্যান্ডমার্কগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থির বালির টিলা, যার উচ্চতা ৪৬০ মিটার।

অপরদিকে ইয়েলো সাগর-বোহাই উপসাগরের উপকূল বরাবর পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্যটি বিশ্বের বৃহত্তম আন্তঃজোয়ার জলাভূমিতে অবস্থিত। এটি পূর্ব এশিয়া-অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইওয়ে বরাবর পরিযায়ী পাখিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল।

পরিযায়ী পাখিদের পথটি ২২টি দেশ জুড়ে বিস্তৃত এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ পাখি বৈচিত্র্য এবং সর্বাধিক সংখ্যক বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল।

  

প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

২। শীতল আবহাওয়ার গন্তব্যে ছুটছে পর্যটকরা

সবুজ ছায়াময় প্রকৃতি। এর মাঝে ফুটে আছে রঙ বেরঙ্গের নানা ফুল। দৃশ্যটি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং মিউনিসিপালটির হংচিবা ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্ক। যেটি এখন দেশ বিদেশের নানা পর্যটকে মুখরিত। 

একই রকম ফুলের দৃশ্য উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশের তাথং হুই এবং তু স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টিতেও। ২ হাজার ৮০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত এই জায়গাটি এখন পর্যটকদের পছন্দের পর্যটন গন্তব্য।  কেননা পর্যটকরা এখানে উপভোগ করতে পারে সমুদ্রের অবারিত নীল জলরাশি , সবুজ পাহাড় যেন অবকাশ যাপনের আদর্শ জায়গা।

গ্রীষ্মের এই সময়ে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বইছে তাপপ্রবাহ। এই খরতাপ থেকে মুক্তি পেতে পর্যটকরা ছুটছেন শীতল আবহাওয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে।

চারদিকের সবুজ অরণ্য ,পাহাড়,  স্বচ্ছ নদীর পানি বেশি টানছে পর্যটকদের। তাইতো পর্যটকরা বেছে নিচ্ছেন উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের ইচুন শহরের চিউফেংশান। এখানে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সঙ্গীত আয়োজন উপভোগ, ক্যাম্পিং এবং  বারবিকিউ পার্টি করছেন তারা। 

এদিকে চেচিয়াং প্রদেশের হ্যাংচৌ শহরের হুইকাং গ্রামও আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের। এ গ্রামের পাহাড়ি ঝর্নায় প্রবাহিত হওয়া পানি আর ৩০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য ,সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ছুটে আসছেন এখানে।

ছিংহাই প্রদেশের মালভূমির দৃশ্য ছাড়াও ২৬ জাতিগোষ্ঠীর লোকজ ঐতিহ্যে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। তারা  অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার পাশাপ্সহি লোকজ গান সম্পর্কেও ধারণা পাচ্ছেন। এছাড়া পর্যটোকরা কাগজ কাটা, ছবি আঁকা এবং হাজার বছরের পুরানো ছিংহাই এমব্রয়ডা্রিও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।  

থোংচি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের একটি কাউন্টি। যেখানে এখন শীতল আবহাওয়ায় প্পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। সুনশান পরিবেশে এখানে রয়েছে ১৭৪টি হোমস্টে। আর এখানে নিরাপদে কিছু শান্তিময় সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করেন তারা।

পর্যটক লি ইউন জানায়, "এটি অষ্টম বছর যে আমি এখানে গ্রীষ্ম কাটিয়েছি। এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। ঘরগুলিও পরিষ্কার।  

এদিকে মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের একটি শহর আনলু। যেখানে রাতেরবেলায় পর্যটকদের ভিড়ে সুন্দর এক জমজমাট পরিবেশের সূচনা হয়। 

ঘুরতে আসা পর্যটক জানায়, "রাতের পরিবেশ এখানে দারুণ। খোলা বাতাসে বসে বারবিকিউ এবং পানীয় খেতে খুব ভালো লাগে।

বিভিন্ন আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে গেল কয়েক বছরে ধরেই চীনজুড়েই বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটক নয়, বেড়েছে বাইরের পর্যটকের সংখ্যাও।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ   

 

৩। ঘুরে আসুন বাজনার শহরে

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের একটি শহর থাছ্যং। এই শহরে পথে ঘাটে পার্কে আপনি শুনতে পাবেন অ্যাকর্ডিয়ানের সুমধুর সুর। এই বাজনা উপভোগ করতে এই শহরে পর্যটকরা বেশি আসেন। ২০২৩ সালে থাছ্যংকে ‘অ্যাকর্ডিয়ান সিটি অব চায়না’ টাইটেলে ভূষিত করা হয়। চাইনিজ মিউজিশিয়ান’স অ্যাসোসিয়েশন শহরটিকে এই তকমা দেয়।

প্রাচীন রেশম পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর থাছ্যং। কাজাখ, হুই, উইগুর, মঙ্গোল, তাতার, রুশসহ ২০টির বেশি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এই শহরে বাস করে। তাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি উপভোগ করা যায় এখানে।

এখানকার প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতির সঙ্গে সংগীতের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে অ্যাকর্ডিয়ানের বাজনার রয়েছে বিশেষ প্রভাব। এই অ্যাকর্ডিয়ান বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যের অনুভূতিকে সুদৃঢ় করছে তাদেরকে বাঁধছে  সুরের বাঁধনে।

এই শহরের সব প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলে অ্যাকর্ডিয়ান শেখার সুযোগ রয়েছে। শিল্পীরা রেস্টুরেন্ট, পার্ক ও রজপথ, স্কয়ার ও অন্যান্য স্থানে বাজনা পরিবেশন করেন। বাজনার তালে তালে নাচেরও রীতি রয়েছে। লোকজ পোশাক, লোকজ গীতি এবং নাচ আকর্ষণ করছে পর্যটকদের। এখানকার বাসিন্দাদের বিনোদনের অন্যতম উৎস অ্যাকর্ডিয়ান।

সিনচিয়াং সফরে এলে পর্যটকরা একবার না একবার ঢুঁ মারেন থাছ্যং শহরে। এখানকার শিল্পীদের অ্যাকর্ডিয়ান বাজনা শোনার জন্য।

এখানে ভালো মানের অ্যাকর্ডিয়ান কেনা যায়। পাশাপাশি মেলে নানারকম এথনিক পোশাক ও সুভ্যেনির। অ্যাকর্ডিয়ানের ছবি যুক্ত বিভিন্ন সুভ্যেনির পর্যটকরা বেশ পছন্দ করেন।

এই শহরের প্রাকৃতিক দৃশ্যও খুব সুন্দর। বিভিন্ন মিউজিকাল ইভেন্টও এখানে প্রায়ই আয়োজিত হয়। এখানে রেস্টুরেন্টগুলোতেও পরিবেশিত হয় লোকজ ঐতিহ্যবাহী খাদ্য।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম


ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী