জুলাই ৩০: চীন সফররত ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি গতকাল (সোমবার) বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয়টি তুলে ধরবো।
সাক্ষাত্কালে সি চিন পিং মেলোনিকে চীনে স্বাগত জানান। সি বলেন, চীন ও ইতালি প্রাচীন রেশমপথের বিপরীত প্রান্তে অবস্থিত। দু’দেশের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষা এবং মানবসমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা, উন্মুক্ত ও সহনশীলতা, পারস্পরিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং অভিন্ন কল্যাণ কেন্দ্রিক রেশমপথের চেতনা হলো দু’দেশের অভিন্ন ধন।
সি বলেন, বর্তমান বিশ্বের অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ সহযোগিতা চালালে অভিন্ন উন্নয়ন হবে, বন্ধ হলে পিছনে ফিরে যাবে। ঐক্য হলে অভিন্ন সমৃদ্ধি হবে, বিচ্ছিন্ন হলে পিছিয়ে পড়বে। চীন ও ইতালির উচিত সুদীর্ঘকালীন রেশমপথের চেতনা মেনে চলে ঐতিহাসিক, কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দেখা ও উন্নত করা।
সি জোর দিয়ে বলেন, চীন-ইতালি সম্পর্কের সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়ন দু’দেশ ও দু’দেশের জনগণের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যদিও বর্তমান আন্তর্জাতিক অবস্থা গভীরভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তবুও চীন ইতালির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্ব পরিবর্তন হয় নি। দু’দেশের সম্পর্কের সহযোগিতামূলক ও অভিন্ন কল্যাণের চেতনা পরিবর্তন হয় নি। দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগের ঐতিহ্য বজায় রাখা এবং অব্যাহতভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও একে অপরের নির্বাচিত উন্নয়ন পথের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। দু’দেশ একে অপরের জন্য পরিপূরক শিল্প সুবিধা ও সুযোগ। উভয় পক্ষেরই পারস্পরিক উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া উচিত। চীন অব্যাহতভাবে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ উন্নত করবে এবং ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। চীন ইতালির সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিয়োগ, শিল্প উত্পাদন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং তৃপক্ষীয় বাজারসহ ঐতিহ্যবাহী সহযোগিতার আপগ্রেড ও উন্নতি করতে ইচ্ছুক। চীন ইতালির প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনে বিনিয়োগে স্বাগত জানায়। চীন ইতালি থেকে আরো বেশি বিশিষ্ট পণ্য আমদানি করতে চায় এবং আশা করে যে, ইতালি চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতালিতে বিনিয়োগের জন্য একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরাপদ ও বৈষম্যহীন ব্যবসার পরিবেশ দেবে।
জবাবে মেলোনি বলেন, এ বছর হলো দু’দেশের সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ২০তম বার্ষিক এবং মার্কো পোলোর ৭০০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ইতালি ও চীন দু’টি প্রাচীন সভ্যতার দেশ হিসেবে বরাবরই পরস্পরকে প্রশংসা করে ও একে অপরের কাছ থেকে শিখতে থাকে। বর্তমান আন্তর্জাতিক অবস্থা গভীরভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তর দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে চীন অপরিবর্তনীয় ভূমিকা পালন পালন করে। ইতালি চীনের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও ভূমিকার ওপর উচ্চ গুরুত্বারোপ করে এবং চীনের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ ও উচ্চ মানের অংশীদারি সম্পর্ক উন্নত করতে চায়। ইতালি এক চীন নীতিতে অবিচল থাকে এবং চীনের সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। ইতালি চীনের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিয়োগ, বৈদ্যুতিক গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ উন্নীত করতে ইচ্ছুক। ইতালি বিচ্ছিন্নতা ও সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
সাক্ষাত্কালে দু’দেশের ‘চীন ও ইতালি সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক জোরদারের কর্ম পরিকল্পনা (২০২৪-২০২৭)’ স্বাক্ষরিত হয়।
(ছাই/তৌহিদ/ওয়াং হাইমান)