এক দশক আগে, ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীন-লাতিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর নেতাদের বৈঠকে প্রথমবারের মতো একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের চীন-লাতিন আমেরিকা সম্প্রদায় গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “চীন এবং অনেক লাতিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান দেশের নেতারা এখানে জড়ো হয়েছেন তা ঐতিহাসিক এবং বৈশ্বিক তাত্পর্যপূর্ণ।”
সি’র বক্তৃতা স্মরণ করে, ব্রাজিলের জাতীয় কংগ্রেসের ব্রাজিল-চীন পার্লামেন্টারি ফ্রন্টের সভাপতি ফাউস্টো পিনাতো বলেছেন, একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য চীনের প্রস্তাব বিশ্বের বহুপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে এই অঞ্চলের প্রতি তার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে।
তিনি আরো যোগ করেন, “চীন এবং লাতিন আমেরিকার মধ্যে অংশীদারিত্ব একটি স্পষ্ট উদাহরণ যে, কীভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জড়িত সকল পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা তৈরি করতে পারে।”
দশ বছর আগে প্রেসিডেন্ট সি বলেছিলেন, অভিন্ন স্বপ্ন এবং সাধনা চীন ও লাতিন আমেরিকাকে ঘনিষ্ঠভাবে একত্রিত করেছে, তারপর থেকে, উভয়পক্ষই ক্রমাগত একে অপরের আরও কাছাকাছি আসছে।
চীন এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতির উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে।
চীন, লাতিন আমেরিকার সাথে তার সম্পর্ককে উচ্চ মূল্যায়ন করে এবং সবসময়ই ওই অঞ্চলের দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঐক্য সুসংহত করতে এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করে।
গত এক দশক ধরে, চীন ও লাতিন আমেরিকা ঘনিষ্ঠ উচ্চ-স্তরের বিনিময় এবং কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রেখেছে, সমতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং সাধারণ উন্নয়ন সমন্বিত চীন-লাতিন আমেরিকা ব্যাপক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে নিরন্তর অনুপ্রেরণা প্রদান করেছে।
২০২৩ সাল থেকে, সি ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, চিলি, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, পেরু এবং অন্যান্য লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে মুখোমুখি বৈঠকে বা চিঠি, বার্তা এবং ফোন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। ‘সহযোগিতা’ এবং ‘উন্নয়ন’ হচ্ছে এসব যোগাযোগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পানামা, ডোমিনিকা, এল সালভাদর, নিকারাগুয়া এবং হন্ডুরাস— এ পাঁচটি লাতিন আমেরিকার দেশ চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বা পুনঃস্থাপন করেছে। চীন এবং লাতিন আমেরিকার ক্রমবর্ধমান অংশীদাররা চীন-লাতিন আমেরিকা সম্পর্কের একটি নতুন প্যাটার্ন তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করছেন।
চীন এবং লাতিন আমেরিকা শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরিপূরকতা উপভোগ করেছে। ২০১২ সাল থেকে চীন, লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। গত বছর চীন এবং লাতিন আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৪৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন-লাতিন আমেরিকা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা প্রথাগত ক্ষেত্র থেকে নতুন শক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সে প্রসারিত হয়েছে।
পেরু, চিলি, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর এবং নিকারাগুয়ার সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে চীন। এখনও পর্যন্ত, লাতিন আমেরিকায় চীনের মুক্ত বাণিজ্য অংশীদারের সংখ্যা এশিয়ার পরেই দ্বিতীয়।
এই বছর, চীন-হন্ডুরাস মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে পঞ্চম দফা আলোচনা হয়েছে এবং পেরুর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আপগ্রেড করার বিষয়ে সারগর্ভ আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।
চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ রেনজো বুরোত্তো বলেন, চীন ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত পরিপূরক।
বুরোটো বলেন, চীন, লাতিন আমেরিকার অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, পণ্য ও মূলধনের সরবরাহকারী এবং নবায়নযোগ্য শক্তির মতো শিল্পের বিকাশের জন্য একটি কৌশলগত অংশীদার।
প্রেসিডেন্ট সি বহুবার জোর দিয়ে বলেছেন যে চীন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভে’র (বিআআই) আওতায় লাতিন আমেরিকার সাথে কাজ করতে এবং সহযোগিতার উন্নয়নে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক।
এখন পর্যন্ত ২২টি লাতিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান দেশ চীনের সাথে বিআরআই সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করেছে, যা সেসব দেশের জনগণকে উপকৃত করেছে।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।