আকাশ ছুঁতে চাই ৮০
2024-07-25 14:51:50


নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

কী রয়েছে এবারের পর্বে

১. শিকড়ের সন্ধানে তরুণী

২. ইনসাইড পেইন্টিং: ঐতিহ্যকে ধরে রাখছেন নারী ইনহেরিটর

৩. অলিম্পিকে সাফল্য চান নারী ক্রীড়াবিদ চাং ত্যশুন

 

শিকড়ের সন্ধানে তরুণী

চীনের তাইওয়ানে জন্ম নেয়া এক তরুণী সঙ্গীত শিক্ষিকা তার পরিবারের শিকড় খুঁজে পেয়েছেন মূল ভূখণ্ডে ফুচিয়ানের এক গ্রামে। তাইপেই শহরে পরিবার ছেড়ে আসলেও ফুচিয়ানের বাইছি গ্রামে তিনি খুঁজে পেয়েছেন আরও বড় এক পরিবার। সেইসঙ্গে তিনি নিজের স্বপ্নকে সফল করার জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। এই হৃদয় ছোঁয়া গল্প শুনবো প্রতিবেদনে।

পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশ। এখানকার ছুয়ানচৌ সিটির একটি গ্রামে একটি মিউজিকাল প্লেতে অংশ নিতে আমন্ত্রিত হন এক তরুণী সংগীত শিক্ষিকা। সেখানে এসে তিনি খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যদের। খুঁজে পান তার শিকড়। সম্প্রতি চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিজিটিএন একটি বিশেষ সিরিজ অনুষ্ঠান করেছে। ‘দ্য ওয়ে হোম’ বা গৃহ অভিমুখে শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে একজন সংগীত শিক্ষিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে যিনি নিজের স্বপ্নকে সফল করতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছেন তার শিকড়।

কুয়ো ই ছিং এর জন্ম চীনের তাইয়ানের তাইপেই সিটিতে। তিনি শিশুদের সংগীত শিখান এবং বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করেন। তাইপেইতে শিশুদের মধ্যে সংগীত শেখার আগ্রহ কিছুটা কম লক্ষ্য করে তিনি ভাবেন মূল ভূখণ্ডে এসে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন। কারণ তার মূল আগ্রহ শিশুদের সংগীত শিখানোকে কেন্দ্র করে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।  ২০১৮ সালে তিনি মূল ভূখণ্ডের ফুচিয়ানের সিয়ামেন সিটিতে আসেন। এখানে তিনি নিজস্ব ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে থাকেন। এজন্য তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। তিনি প্রায়ই ভাবতেন তাইপেই সিটিতে তার পরিবারের সদস্যদের কথা। তাদের ভীষণ মিস করতেন তিনি। তিনি ভাবতেন যদি এখানে তার পরিবারের সদস্যরা থাকতেন।

তিনি জানতেন তার পরিবার অনেক বছর আগে ফুচিয়ান থেকে তাইপেই এসেছিল্ এজন্য মনে মনে তিনি সবসময় নিজের শিকড়ের সন্ধান করতেন। তিনি জানতেন না কোথায় তার বংশের মানুষরা বাস করেন।

একদিন হঠাৎ করেই সে সুযোগ এসে যায়। ২০২২ সালে তিনি ছুয়ানচৌ শহর থেকে একটু দূরে বাইছি গ্রামে একটি মিউজিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনার জন্য আমন্ত্রিত হন। বাইছি গ্রামে তার নাম শুনে অনেকেই অবাক হয়। কারণ এখানে অনেকেরই নামের পদবী কুয়ো। চীনে সাধারণত এক পদবীধারী ব্যক্তিদের মধ্যে পারিবারিক যোগসূত্র থাকে।

তিনি তখন নিজের পরিবারে খোঁজ খবর নেন। বাড়ির মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। খোঁজ নিয়ে দেখতে পান তার দাদার হাতে লেখা একটি চিরকুট রয়েছে যেখানে ফুচিয়ানে তাদের ঠিকানা লেখা আছে এবং কুয়ো পরিবারের সদস্যদের পুরনো রেকর্ড রয়েছে।

কুয়ো ই ছিং আবার বাইছি গ্রামে যান এবং গ্রামের গোত্র প্রধানকে সেই চিরকুট দেখান। গোত্র প্রধান তাকে চিনতে পারেন এবং পুরনো বংশ তালিকা খুঁজে দেখান যে ই ছিং এই গ্রামের এই পরিবারেরই মেয়ে। ই ছিং আগে এই বংশ তালিকার কথা জানতেন না। তিনি দেখতে পান সেখানে তার দাদার নাম রয়েছে।

মজার বিষয় হলো যে সংগীত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ই ছিং ওই গ্রামে যান সেই সংগীতের মধ্যেও রয়েছে অনুরূপ একটি কাহিনী। সেখানে বলা হয়েছে একজন মানুষ তার হারানো পরিবারের খোঁজ পায় অনেক বছর পরে।

কুয়ো ই ছিংয়ের মনে হয় তিনি তাইওয়ানে নিজের পরিবার রেখে এসেছেন কিন্তু এখানে বৃহত্তর পরিবার খুঁজে পেয়েছেন।

এর পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন সত্যি করার জন্য পরিশ্রম করে চলছেন কুয়ো। তিনি বলেন, আমি আমার কাজকে খুব গুরুত্ব দিই। আমি কখনও বিজ্ঞাপন দিইনি। কিন্তু অভিভাবকরা আমার কথা অন্যদের বলেছেন। তাইওয়ানের তুলনায় এখন আমি আর্থিকভাবে অনেক ভালো আছি। আমি খুব ভাগ্যবান কারণ অনেক মানুষ আমাকে সহযোগিতা করেছেন।

কুয়ো বলেছেন, যদিও তিনি অনেক কঠিন সময় পার হয়েছেন, তবু নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য পরিশ্রম করছেন। আর এখন তো তিনি বাইছি গ্রামে তার শিকড়ের সন্ধান পেয়েছেন।  অন্যদের জন্য তার পরামর্শ হলো নিজের স্বপ্নকে সফল করার কাজে কোন বাধাকেই বাধা বলে মনে করা উচিত নয়। বরং স্বপ্নকে সফল করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো উচিত।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

ইনসাইড পেইন্টিং: ঐতিহ্যকে ধরে রাখছেন নারী ইনহেরিটর

চীনের অনেক অবৈষয়িক ঐতিহ্যের ধারক নারী। এমনি একটি ঐতিহ্য ইনসাইড পেইন্টিং। এই কারুশিল্পে কাঁচের বোতল, বাল্ব বা অন্য কোন পাত্রের ভিতর দিকে পেইন্টিং করা হয়। এই বিশেষ ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য কাজ করে চলেছেন ইনহেরিটর সুন হোংইয়ান।

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের খুনমিং সিটি। এই শহরের চারুকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক চমৎকার প্রদর্শনী। এখানে ইনসাইড পেইন্টিং নামে একটি ভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

 

এই শিল্পে ছোট ছোট বোতল, বাল্ব বা এধরনের ছোট কাচের পাত্রের ভিতর দিকে পেইন্টিং করা হয়। এই বিশেষ ধরনের কারুশিল্পের ইনহেরিটর একজন নারী। নাম তার সুন হোংইয়ান।৪৯ বছর বয়সী এই নারী শিল্পী খুনমিং এর বাসিন্দা।

 

 তিনি ইয়ুননানের এই বিশেষ শিল্পকে ধরে রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেক বছর ধরে। বিশেষ ধরনের সরু ব্রাশের সাহায্যে ছোট কাচের বোতলে ভিতরে ছবি আঁকেন তিনি। ইয়ুননানের প্রাকৃতিক দৃশ্য, এথনিক সংস্কৃতি ও বিভিন্ন লোকজ মোটিফ তিনি তার শিল্পকর্মে তুলে ধরেন। সুন জানান এই প্রাচীন শিল্পধারাকে তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য অনেক বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি আধুনিক অনেক বিষয়ও শিল্পকর্মে তুলে ধরেন। তিনি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহী শিল্পীদের এই বিশেষ শিল্পধারায় প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

অলিম্পিকে সাফল্য চান নারী ক্রীড়াবিদ চাং ত্যশুন

প্যারিস অলিম্পিকের আর বেশি দিন দেরি নেই। এই অলিম্পিকে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে কঠোর পরিশ্রম করছেন ক্রীড়াবিদরা। চীনের একজন নারী ক্রীড়াবিদ চাং ত্যশুন। শুনবো তার কথা

চীনের একজন নারী ক্রীড়াবিদ চাং ত্যশুন। তিনি ম্যারাথন রানার। চলতি বছরে তিনি চীনের হাফ ম্যারাথনে রেকর্ড গড়েছেন। চাইনিজ উইমেন’স হাফ ম্যারাথন ইভেন্টে ২০ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দেশের জন্য আশার আলো জ্বেলেছেন চাং। তিনি ১ ঘন্টা ৭ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে হাফ ম্যারাথন জয় করেন। আসন্ন প্যারিস অলিম্পিককে ঘিরে এখন তার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চাং জানান তিনি কয়েক বছর ধরেই কঠোর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। এখনও কঠোর অনুশীলন করে চলেছেন। তিনি যখন দেশের রেকর্ড ভাঙেন তখন মনে হয়েছে তাকে আরও অনুশীলন করতে হবে যেন প্যারিস অলিম্পিকে দেশের মুখ উজ্জ্বল  করতে পারেন।

নারী ক্রীড়াবিদদের প্রতি তার অনুপ্রেরণামূলক পরামর্শ হলো কখনও হাল ছাড়তে নেই । পাশাপাশি সাফল্যে খুব বেশি আনন্দিত হয়ে অনুশীলনে ঢিলেমি করা চলবে না। তিনি নিজের স্বপ্নকে এবং দেশের স্বপ্নকে সফল করার জন্য পরিশ্রম করে চলেছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ