“আজ, চীনা জনগণ অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে পারে যে সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ— আপনি যদি চান তবে একে চীনের দ্বিতীয় বিপ্লব বলতে পারেন— কেবল দেশটিকেই গভীরভাবে পরিবর্তন করেনি বরং সমগ্র বিশ্বকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।”
২০১৮ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণে, এশিয়ার জন্য বোয়াও ফোরামে’র বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এমন মন্তব্য করেছিলেন।
এরপর আরো বেশ ক’বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ আরও গভীরতর হয়েছে। সবশেষ গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বলা হয়, এখন চীন আধুনিকায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী দেশ নির্মাণ ও জাতীয় পুনরুদ্ধার প্রচার করার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রবেশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট সি অধিবেশনে বলেন, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনা আধুনিকায়নের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ধারণ করে।
এবারের অধিবেশনে ‘সার্বিক ও গভীরতর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চালিয়ে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত করা সম্পর্কে সিপিসি’র সিদ্ধান্ত’ গৃহীত হয়েছে, যাতে সামগ্রিক ও কৌশলগত পরিকল্পনা আছে, এবং গভীর ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপও রয়েছে।
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে এবারের অধিবেশনের গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অনেক বিদেশী পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট সি’র প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্বে, চীন সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ প্রত্যাশিতভাবেই অব্যাহত রেখেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড কোপারেশনের পরিচালক হোয়াং জায়েহো বলেছেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় নতুন সমস্যা মোকাবেলায় “সাহসীভাবে কাজ করা এবং স্থিরভাবে অগ্রসর হওয়া”র বিষয়ে সি’র বক্তব্য তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, সি “চীনের উন্নয়নের সম্ভাবনার প্রতি পূর্ণ আস্থা” প্রকাশ করেছেন।
নাইজেরিয়ায় সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজের পরিচালক চার্লস ওনুনাইজু বলেছেন, একজন দূরদর্শী নেতার অবশ্যই সমাজের উন্নতির সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জগুলো উপলব্ধি করার জন্য অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হবে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, সি শুধু সংস্কারের মাধ্যমে উপস্থাপিত সুযোগগুলোই কাজে লাগান না বরং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলো নিখুঁতভাবে মোকাবেলা করেন।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, সি অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, সমাজ, বাস্তুসংস্থান, পার্টি গঠন, জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন খাতে তিন হাজারের বেশি সংস্কার পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চীন-আফ্রিকা সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভাইজরির নির্বাহী পরিচালক পল ফ্রিম্পং উল্লেখ করেছেন যে, সি’র নেতৃত্বে পরিচালিত সংস্কার বিস্তৃত ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং চীনের সামনে আসা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চ্যালেঞ্জগুলোকে সময়মত এবং কার্যকরভাবে মোকাবেলা করেছে।
বিগত বছরগুলিতে, চীনের সংস্কার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃঢ় অগ্রগতি এবং ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করেছে। ইউরোপ-এশিয়া কেন্দ্রের সহ-সভাপতি এবং জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এরিক সোলহেইম বলেন, “চীন এখন বৈশ্বিক সবুজ উন্নয়নের মূল এবং বৈশ্বিক সবুজ রূপান্তরের একটি অপরিহার্য শক্তি। চীনের সঙ্গে সহযোগিতা না করে সবুজ উন্নয়ন চাওয়া দেশগুলোকে “অনেক সময় এবং অর্থ গুনতে হবে।”
চীনা গণমাধ্যমের সাথে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাত্কারে, বিদেশী পর্যবেক্ষকরা চীনের সংস্কার উদ্যোগ এবং এর আধুনিকীকরণের পথকে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য মূল্যবান পাঠ হিসাবে বিবেচনা করেছেন।
তানজানিয়ার দার এস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের পরিচালক হামফ্রে মোশি বলেছেন, সংস্কারের মাধ্যমে চীনের জন-কেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারণা বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং চীনে গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। .
মানবতার জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের সম্প্রদায় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট সি’র দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করেন, এক অঞ্চল এক পথ উদ্যোগ, বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ, বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগের মতো সি’র প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলো বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চীনের প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।