জুলাই ১৯: সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দেশ পরিচালনার একটি মৌলিক নীতি। ১৯৭৮ সালে তত্কালীন শীর্ষনেতা তেং সিয়াও পিংয়ের সভাপতিত্বে, সিপিসি’র ১১তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে, এ নীতি গ্রহণ করা হয়। বিগত ৪০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ ইতিহাসে, প্রতিটি তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সংস্কার ও উন্মুকরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা করে। যখন দেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সময়, তখন নতুন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির প্রতি জনগণের বড় প্রত্যাশ রয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) শেষ হওয়া সিপিসি’র ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের আরেকটি মাইলফলক হবে। বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এবারের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন নিয়ে কিছু কথা বলবো।
এবারের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অবিধেশনে বলা হয়, এখন চীন আধুনিকায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী দেশ নির্মাণ ও জাতীয় পুনরুদ্ধার প্রচার করার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রবেশ করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনা আধুনিকায়নের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ধারণ করে। এবারের অধিবেশনে ‘সার্বিক ও গভীরতর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চালিয়ে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত করা সম্পর্কে সিপিসি’র সিদ্ধান্ত’ গৃহীত হয়েছে, এতে সামগ্রিক ও কৌশলগত পরিকল্পনা আছে, এবং গভীর ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপও রয়েছে।
এবারের অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তে গভীরভাবে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ায় নতুন সমস্যা বিশ্লেষণ করা হয়, চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক পরিচালনা করা হয়। বলা যায়, সিদ্ধান্তটি নতুন যুগে সিপিসি’র দেশ পরিচলনার কর্মসূচির দলিল। সিপিসি’র সার্বিক ও গভীরতর সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন প্রচার করার দৃঢ় সংকল্প প্রতিফলিত হয়েছে এতে।
এই সিদ্ধান্তের বিষয় অত্যন্ত ব্যাপক, এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে উচ্চমানের সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, উচ্চমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যবস্থা সুসম্পন্ন করা, উদ্ভাবন সমর্থন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিচালনা ব্যবস্থা উন্নত করা, শহর ও গ্রামের উন্নয়ন সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা, জনগণের জীবিকা নিশ্চিত ও উন্নত ব্যবস্থা সুসম্পন্ন করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের নীতি ও পরিকল্পনা।
সার্বিক ও গভীরতর সংস্কার সম্পর্কে এই সিদ্ধান্তে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের বৈশিষ্ট্য কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট পদক্ষেপও প্রণয়ন করা হয়। যেমন সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় বাজার গড়ে তোলা এবং বাজার অর্থনীতির মৌলিক ব্যবস্থা উন্নত করার প্রস্তাব করা হয়; উচ্চমানের উন্নয়ন সম্পর্কে স্থানীয় অবস্থা অনুসারে নতুন মানের উত্পাদন শক্তি উন্নয়ন করা, বাস্তব অর্থনীতি ও ডিজিটাল অর্থনীতি গভীর একীকরণ প্রচার করা, শিল্প সরবরাহ চেইনের স্থিতিস্থাপকতা ও নিরাপত্তা উন্নত করা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সংস্কার ও উন্মুক্তরণ একে অপরের পরিপূরক এবং পরস্পরকে প্রচার করে। উন্মুক্তকরণ চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের একটি স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য। এই সিদ্ধান্তে উন্মুক্তকরণ সম্পর্কে অনেক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ রয়েছে, যেমন চীনের বিপুল বাজারের ওপর নির্ভর করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ করবে, বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা সংস্কার করবে, বিদেশি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা সংস্কার করবে, আঞ্চলিক উন্মুক্তকরণ সুবিন্যাস্ত করবে, ‘এক অঞ্চল এক পথ উদ্যোগে’র আওতায় সহযোগিতা প্রণালী উন্নত করবে ইত্যাদি।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশের উন্নয়নকে দাবা খেলার সঙ্গে তুলনা করেন, আর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এই দাবা খেলার চাবিকাঠি। তিনি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের চালিকাশক্তি হিসেবে এবং সামাজিক ন্যায্যতা প্রচার ও জনগণের কল্যাণ উন্নত করা মূল উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেন, সার্বিক ও গভীরতর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের জন্য ক্রমাগত নতুন চালিকাশক্তি যোগাচ্ছেন।
(তুহিনা/হাশিম/স্বর্ণা)