আকাশ ছুঁতে চাই ৭৯
2024-07-18 17:38:56

                                             

১ রাইডিং উইন্ডের মঞ্চে দ্যুতি ছড়াচ্ছে নারী শক্তি

২. টিসিএম প্র্যাকটিস করে সাফল্য পেয়েছেন কাজাখ নারী মইসেইয়েভা

৩. ইতিহাস থেকে প্রেরণা নেন সংগীত তারকা লিউ লিয়ান

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

রাইডিং উইন্ডের মঞ্চে দ্যুতি ছড়াচ্ছে নারী শক্তি

চীনের জনপ্রিয় মিউজিক রিয়েলিটি শো রাইডিং উইন্ড। এখানে ত্রিশ বছরের বেশি বয়সের নারী শিল্পীরা তাদের প্রতিভার পরিচয় দেন। সম্প্রতি এই মঞ্চে দ্যুতি ছড়িয়েছেন ঐতিহ্যবাহী ইয়ুয়েচু অপেরার নারী শিল্পী চেন লিচুন। তিনি দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন।  শুনবো এই জয়িতার গল্প।

প্যাকেজ: চীনের জনপ্রিয় টিভি রিয়েলিটি প্ল্যাটফর্ম রাইডিং উইন্ড অনুষ্ঠানের মঞ্চ। স্পটলাইট এসে পড়লো শূন্য মঞ্চে দাঁড়ানো এক নারীর ওপর। তার পরনে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানফু। চোখে বীরত্বের দীপ্তি। সাহসী কণ্ঠে তিনি পরিবেশন করলেন ইয়ুয়েচু অপেরার গান।

দর্শকরা উল্লাসে সমর্থন জানালো তাকে। সম্মিলিত কণ্ঠে ধ্বনিত হলো তার নাম। চেন লিচুন।

২০২০ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে রাইডিং উইন্ড টিভি রিয়েলিটি শো নারীদের শক্তি, সৌন্দর্য ও প্রতিভাকে তুলে ধরছে।  এই শোতে সাধারণত বিনোদন জগতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা  সংগীতশিল্পী, চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেত্রী, নারী সঞ্চালক, নৃত্যশিল্পীরা অংশ নিয়ে থাকেন।  এখানে যারা অংশ নেন তাদের বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে। একটি কথা প্রচলিত আছে যে, বিনোদন জগতে বা শো বিজে ত্রিশ বছর বয়স পেরিয়ে গেলে নারীদের ক্যারিয়ারের গতি নিচে নামতে থাকে। তাদের জনপ্রিয়তাও কমতে থাকে। কিন্তু রাইডিং উইন্ড অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, বয়স কোন বিষয় নয়। পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া নারীরাও এখানে তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন।

সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে ইয়ুয়েচু অপেরা শিল্পী চেন লিচুন দর্শকদের কাছ থেকে দুর্দান্ত সমর্থন পেয়ে অভিভূত হয়েছেন। ৩২ বছর বয়সী এই নারী দীর্ঘদিন ধরে ইয়ুয়েচু অপেরায় অভিনয় করছেন।

চীনের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ অপেরা। অপেরা হলো সংগীত ও নাচের মাধ্যমে একধরনের যাত্রা পালা। চীনে বিভিন্ন রকম অপেরা রয়েছে। যেমন বেইজিং অপেরা, কুনছু অপেরা ইত্যাদি।

ইয়ুয়েচু অপেরা চীনের ঐতিহ্যবাহী নাট্যশিল্পের একটি বিশেষ ধারা। ইয়াংজি নদীর অববাহিকা অঞ্চলে এই বিশেষ ধরনের অপেরা বেশি জনপ্রিয়। এই বিশেষ ধরনের অপেরায় পুরুষের চরিত্রে নারীরা অভিনয় করে থাকেন।

রাইডিং উইন্ডের মঞ্চে সাধারণত পপ মিউজিক প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে। কিন্তু এবারের শোতে ঐতিহ্যবাহী ইয়ুয়েচু অপেরা যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এর শিল্পী চেন লিচুন যে দর্শক সমর্থন পেয়েছেন তা সত্যিই অবাক করার মতো।

চেন লিচুন মনে করেন তার এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা। তিনি জাতীয় ঐতিহ্যকে পৌছে দিতে চান তরুণ প্রজন্মের কাছে। তিনি প্রাচীন চীনের পোশাক পরেন, সেসময়ের বীরদের কাহিনী তুলে ধরেন নতুন প্রজন্মের কাছে।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা ফয়সল আবদুল্লাহ

টিসিএম প্র্যাকটিস করে সাফল্য পেয়েছেন কাজাখ নারী মইসেইয়েভা

চীনের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এদেশের লোকজ বিদ্যা, সংস্কৃতি এবং জীবনচর্চা অনুসরণ করে শুধু আজকের দিনের চীনারাই নন, বিদেশিরাও পেয়েছেন সাফল্যের গৌরব। অনেক বিদেশি নারী চীনেই বেঁধেছেন সুখের ঘর। এমনি একজন বিদেশি নারী মইসেইয়েভা নাটালিয়া যিনি চীনের নাগরিককে বিয়ে করে চীনে বাস করছেন ।  শুনবো তার গল্প।

কাজাখস্তানের নারী মইসেইয়েভা নাটালিয়া । তিনি বাস করেন চিয়াংসু প্রদেশের ইসিং সিটিতে। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতির একজন চিকিৎসক এবং লাইভ স্ট্রিমার হিসেবে  তিনি বিপুল সংখ্যক অনুসারী পেয়েছেন। চীনের টিকটক বা দোওইন এ তার ভক্তের সংখ্যা ১.৮ মিলিয়ন।

চীনের সঙ্গে তার সম্পর্কের সূচনা ঘটে টিনএজে। নাটালিয়ার জন্ম ১৯৯২ সালে কাজাখস্তানে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। তার মায়ের অসুখ হয়। হাইপারথাইরয়েডিসমে আক্রান্ত হন তার মা। গতানুগতিক পাশ্চাত্য চিকিৎসায় তার তেমন কোন উপকার হয়নি। সেখানে একজন প্রবাসী চীনা ছিলেন। তিনি টিসিএম বা ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি জানতেন। তার চিকিৎসাতেই নাটালিয়ার মা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেই থেকে চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি এবং চীনের সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন নাটালিয়া। দিনে দিনে এই আকর্ষণ বাড়তে থাকে। হাইস্কুল পাশ করা পর তার সামনে থাকে দুটি পথ। আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অথবা চীনে টিসিএম শিক্ষা। নাটালিয়া দ্বিতীয়টি বেছে নেন। ২০১০ সালে তিনি শায়ানসি প্রদেশের রাজধানী সিআনে দুই বছর চীনা ভাষা শেখেন। তারপর সিয়ানইয়াং সিটিতে শায়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন চাইনিজ মেডিসিন বিভাগে।

তিনি আকুপাংচার ও ম্যাসেজ থেরাপি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে কাজাখস্তানে ফিরে আসেন। তখনও কিন্তু তিনি জানতেন না তার জীবনসঙ্গীও হবেন চাইনিজ। রাশিয়াতে তিনি একটি পারিবারিক ভ্রমণে গিয়েছিলেন। মস্কোতে তার সঙ্গে দেখা হয় ইসিং থেকে আসা এক চীনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের। পরিচয় দ্রুতই রূপ নেয় ভালোবাসায়। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করে ঘর বাঁধেন চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইসিং শহরে। তিন সন্তানের জননী হন।

এখানে নাটালিয়া দোওইন এ একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেখানে তিনি নিজের ঘর গৃহস্থালির কথা বলেন, চীনের গাড়ি, ইলেকট্রনিকস নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। এখানে তিনি ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি, লাইফস্টাইল ভেষজসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে দারুণ জনপ্রিয়তা পান। নাটালিয়া বলেন তিনি চীনের যে কোন বিষয় যেমন নতুন জ্বালানির গাড়ি বা সিনেমা নিয়ে কথা বলে অনেক সাড়া পেয়েছেন। তিনি টিসিএম বিষয়ে বলে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এবং অনেকেই তার বক্তব্য অনুসরণ করে উপকারও পেয়েছে।

নাটালিয়া তার ভাইবোনদেরও টিসিএম চর্চায় উৎসাহ দিয়েছেন। তারাও চীনে এসে টিসিএম বিষযে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। এখন নাটালিয়ার ভাইবোনেরা কাজাখস্তানে টিসিএম ক্লিনিক খুলেছে।

চীনকে কেন্দ্র করে নাটালিয়া গড়ে তুলেছেন তার সুখের ভুবন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

কণ্ঠ: হোসনে মোবারক সৌরভ

ইতিহাস থেকে প্রেরণা নেন সংগীত তারকা লিউ লিয়ান

চীনের একজন জনপ্রিয় নারী সংগীত তারকা লিউ লিয়ান। সম্প্রতি তিনি হ্যনান জাদুঘর পরিদর্শন করে দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।

চীনের জনপ্রিয় সংগীত তারকা ও গীতিকার লিউ লিয়ান। ৩৪ বছর বয়সী এই জনপ্রিয় শিল্পী  ২০১২ সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্কিওলজি অ্যান্ড মিউসিওলজি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ইতিহাসের প্রতি তার আকর্ষণ তাই বরাবরের। সম্প্রতি তিনি হ্যনান প্রদেশের রাজধানী চ্যংচৌ সিটির হ্যনান জাদুঘর পরিদর্শন করেন। সেখানে তার অনন্য কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে।

তিনি প্রাচীন কিছু বাদ্যযন্ত্রের নিদর্শন দেখেছেন। কয়েকটি নিদর্শনের রেপ্লিকা বাজানোর সুযোগ পেয়েছেন, উপভোগ করেছেন কিছু পরিবেশনা।

৮৭০০ বছর আগের একটি রেড ক্রাউনড সারস পাখির ডানার হাড় থেকে বানানো একটি বাঁশি দেখে মুগ্ধ হন লিউ। এই হাড়ের বাঁশিটি হ্যনান প্রদেশের উইয়াং কাউন্টির চিয়াহু সাইট থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় পাওয়া যায়।

প্রাচীন এই বাঁশি লিউকে এত অভিভূত করে যে তিনি নতুন সৃষ্টির প্রেরণা খুঁজে পান। তিনি হুসিয়া এনসিয়েন্ট মিউজিক অর্কেস্ট্রার একটি লাইভ পারফরমেন্সেও আমন্ত্রিত হন। প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রের দশটি রেপ্লিকার সাহায্যে এই অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করা হয়। সেখানে লিউ প্রাচীন ড্রাম বাজানোরও সুযোগ পান।

নারী সংগীত তারকা লিউ বলেন, হ্যনান মিউজিয়ামে এই ট্যুর তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দিনগুলোতে। সেসময় শিক্ষকরা তাদের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। এখন সেগুলো নিজের চোখে দেখে , হাতে নিয়ে, বাজিয়ে অভিভূত হয়েছেন লিউ। তিনি মনে করেন ইতিহাস সবসময়েই একজন সৃজনশীল মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা ও কণ্ঠ: আফরিন মিম

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ