নতুন যুগে চীনের সংস্কার-নীতি: জনগণই দেশের ভিত্তি
2024-07-17 14:47:04

জুলাই ১৭: সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দেশ পরিচালনার একটি মৌলিক নীতি। ১৯৭৮ সালে তত্কালীন শীর্ষনেতা তেং সিয়াও পিংয়ের সভাপতিত্বে, সিপিসি’র ১১তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে, এ নীতি গ্রহণ করা হয়। আর, ২০১৩ সালে সি চিন পিংয়ের সভাপতিত্বে ১৮তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এ নীতি সার্বিকভাবে গভীরতর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনি এক প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি শুরু হয়েছে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ২০তম তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। এ উপলক্ষ্যে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় থাকছে নতুন যুগে চীনের সংস্কার-নীতি নিয়ে কিছু আলোচনা।

প্রথমে আপনাদেরকে সি চিন পিংয়ের দু’টি গল্প শোনাবো। ২০১২ সালের শেষ দিকে সি চিন পিং ভারি তুষারপাতের মধ্যে হ্যপেই প্রদেশের একটি ছোট জেলা ফুপিংয়ে যান। তিনি প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব ভ্রমণ করেন শুধু স্থানীয় দরিদ্র কৃষকদের জীবনযাত্রা দেখার জন্য। ২০১৯ সাল এপ্রিল সি চিন পিং বিমান, ট্রেন এবং বাস— এ তিন ধরনের পরিবহণের মাধ্যমে পাহাড়ি গ্রাম হুয়াসিতে যান। গ্রামটির মানুষের চরম দরিদ্র দশা তাঁর নজরে আসে। দেশের শীর্ষনেতা হিসেবে সি চিন পিং প্রায়শই একেবারে তৃণমূল স্তরে গিয়ে স্থানীয় মানুষের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। শীর্ষনেতা হওয়ার পর তিনি একটি অসাধারণ প্রকল্প-সার্বিক দারিদ্র্যবিমোচন বাস্তবায়নে ৮ বছর ব্যয় করেছেন। এতে প্রায় ১০ কোটি গ্রামীণ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে, যা বিশ্বের অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি অলৌকিক ঘটনা’র সমতুল্য।

সি চিন পিং প্রায়শই বলেন, জনগণই দেশের ভিত্তি, জনগণ ভালো জীবন কাটালে দেশে শান্তি থাকবে। জনজীবিকা মানুষের সুখের ভিত্তি ও সামাজিক সম্প্রীতির ভিত্তি।

প্রায় ৫ হাজার বছর আগের প্রাচীন বই ‘শাং শু’তে এমন কথা লেখা আছে। বলা যায় ‘জনগণই দেশের ভিত্তি’ এই ধারণা চীনের প্রাচীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার অসামান্য সারাংশ, আর এটাও চীনা কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের জন্য সুখ, জাতির জন্য পুনরুদ্ধার অনুসন্ধানের মূল মিশনের উত্স।

এই ধারণা অনুসারে সি চিন পিং ‘জনকেন্দ্রিক’ উন্নয়ন ধারণা উত্থাপন করেন, এটাও নতুন যুগে চীনের সার্বিক ও গভীরতর সংস্কারের নতুন মূল্য যোগ করেছে। তিনি বলেন: ‘জনগণের সুন্দর জীবনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের লক্ষ্য’, ‘সার্বিক ও গভীরতর সংস্কারের লক্ষ্য হল সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা ও জনগণের অদিকতর কল্যাণ’।

এই ধারণা থেকে সি চিন পিং নতুন যুগে চীনকে জনগণের জীবিকার ক্ষেত্রে ব্যাপক ও গভীর সংস্কার নেতৃত্ব দিয়েছেন। চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবারের নিবন্ধন ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রের গভীরতর সংস্কার করেছেন, ব্যক্তিগত কর সংস্কার, ‘সিভিল কোড’ জারি করা, বর্জ্য শ্রেণীবিভাগ চালু করা পর্যন্ত, ১০ বছরের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমাজ, পরিবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রের ২ হাজারটিরও বেশি সংস্কার করা হয়েছে।

 

‘জনকেন্দ্রিক’ উন্নয়ন ধারণায় ‘কার জন্য সংস্কার ও উন্নয়ন’ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি ‘কার উপর নির্ভর করে সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। নতুন যুগে প্রবেশ করার পর চীনা সমাজের মূল দ্বন্দ্ব বদলে গেছে। উন্নত জীবনের জন্য জনগণের ক্রমাবর্ধামন চাহিদা এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত উন্নয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য সি চিন পিং সিপিসিকে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে অনেক কাজ করেছেন এবং জনগণের কাছ থেকে পরামর্শ ও প্রস্তাব সংগ্রহ করেছেন। যেমন ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’র খসড়া তৈরির জন্য তিনি কৃষক, গ্রামীণ শিক্ষক, ট্রাক চালক, ডিলিভারিম্যান ইত্যাদি পেশাদার মানুষের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, সিপিসি’র ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের জন্য সমগ্র সমাজের মতামত সংগ্রহ করেছেন।

বর্তমানে সিপিসি’র ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের অধিবেশনে নতুন যুগে চীনের সার্বিক ও গভীরতর সংস্কারের কী কী নতুন নীতি ও পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এর জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।

(তুহিনা/হাশিম/স্বর্ণা)