জুলাই ১৫: পৃথিবীপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলের প্রায় ৭১ শতাংশজুড়ে আছে সাগর-মহাসাগর। মানবসভ্যতার জন্য এ সাগর-মহাসাগর তথা পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই, চীন বরাবরই সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এমনই প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি ‘চীনের সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষা’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়।
শ্বেতপত্রে পদ্ধতিগতভাবে মানুষ ও সমুদ্রের মধ্যে একটি সুরেলা সহাবস্থানের পরিবেশ গড়ে তুলতে চীনের নীতিগত ধারণা তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি, এতে রয়েছে, সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষার পরিকল্পনা, সমুদ্রের সবুজ ও নিম্ন কার্বন উন্নয়নের মান বৃদ্ধি, এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা।
সামুদ্রিক পরিবেশ ভালো না মন্দ, তা বোঝা যায় সমুদ্রসৈকতে হাঁটলে। যদি দেখা যায়, সমুদ্রসৈকত ও সমুদ্রের পানি পরিষ্কার, সামুদ্রিক পাখির আনাগোনা যথেষ্ট, আছে সুন্দর উপকূলীয় জলাভূমি—তবে বুঝতে হবে যে, পরিবেশ ভালো। শ্বেতপত্রটি প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের পরিবেশ উপমন্ত্রী কুও ফাং একটি রঙিন রুমাল দেখান। তিনি বলেন, রুমালটি কুয়াংচৌ শহরের নানশা এলাকার সৈকত থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি। এভাবেই সুন্দর সৈকত গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন।
সমুদ্রের অভ্যন্তরের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা আরও গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রে আছে প্রবাল, সামুদ্রিক প্রাণী, শৈবাল, সিবেড, ইত্যাদি। শ্বেতপত্রটিতে বলা হয়, আমাদের দেশ বিশ্বের প্রথম দেশ, যেটি পরিবেশগত সুরক্ষার লাল লাইন নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করেছে। চীনে ৩৫২টি সামুদ্রিক প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা আছে। সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকার আয়তন প্রায় ৯৩.৩ বর্গকিলোমিটার। ৫টি সামুদ্রিক জাতীয় পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনাও আছে চীনের। ইতোমধ্যেই চীনের সমুদ্রে একটি সম্পূর্ণ সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকাব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে গড়ে উঠেছে।
একটি ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবশ্যই আইন ও আইনের শাসন প্রয়োজন। সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। শ্বেতপত্রটিতে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে ‘চীনের সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষা আইন’ প্রকাশিত হয়। কয়েক বার সংশোধনের মাধ্যমে বর্তমানে আইনটি জাতীয় সামুদ্রিক পরিবেশগত সুরক্ষা বহুমুখী আইনে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা হলো উত্পাদিত শক্তির সুরক্ষা, প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন হলো উত্পাদিত শক্তির উন্নয়ন।
২০২৩ সালে চীনের সামুদ্রিক জিডিপি ছিল ৯.৯০৯৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে ০.৮ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
সমুদ্র একটি বৈশ্বিক ইস্যু। সমুদ্রের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার সাথে গোটা বিশ্বের মানুষের স্বার্থ জড়িত। ২০১২ সাল থেকে চীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে বিভিন্ন ধরনের ৮ শতাধিক প্রস্তাব জমা দিয়েছে। চীন পরিবেশ ও জ্বালানিসম্পদ সুরক্ষার নির্দিষ্ট নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছে এবং যথাযথভাবে বিশ্বের সামুদ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে।
ভবিষ্যতেও চীন সমুদ্রের বহুমুখী ব্যবস্থাপনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও দুর্যোগ হ্রাস, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাবে। চীন এক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা জোরদার করবে, বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় ফোরামে সংলাপ চালিয়ে যাবে, সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষার জন্য চীনা বুদ্ধি ও পরিকল্পনা তুলে ধরবে, এবং বাস্তব ব্যবস্থা নিয়ে একটি দায়িত্বশীল প্রধান দেশের ভূমিকা পালন করে যাবে।
(ছাই/আলিম)