নতুন যাত্রাপথে চীন-বাংলাদেশ: ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা
2024-07-13 15:06:52

প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই চীনে সরকারি সফর করেন। চলতি বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম চীন সফর এবং পাঁচ বছর পর তিনি আবার চীন সফর করলেন। গত বছরের আগস্টে ব্রিকস নেতাদের বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের যোগাযোগ উভয়পক্ষের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থার প্রতিফলন অব্যাহত রেখেছে। ১০ জুলাই বেইজিংয়ে সি-হাসিনা বৈঠকে, দু’নেতা ঘোষণা করেন যে, তাঁরা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করবেন।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি ঘোষণার ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি সম্মেলনের সফল আয়োজনের পরপরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করেন। বিগত ৭০ বছরে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি আরও বেশি সংখ্যক দেশ দ্বারা গৃহীত হয়েছে এবং উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সর্বজনীনভাবে প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্রমাগত উন্নয়নকে নির্দেশিত করেছে।

চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার শক্তিশালী প্রাণশক্তি এবং উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি উভয় দেশের জনগণের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রচারে সহায়ক। ৪৯ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে, দু’দেশ যৌথভাবে একে অপরের মূল স্বার্থ রক্ষা করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার বলেছেন, চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। আগামী বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। প্রেসিডেন্ট সি, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে আরও ব্যক্ত করেছেন যে তিনি ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’-এর আওতায় উচ্চমানের যৌথ নির্মাণকে আরও গভীর করতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার গভীরতা ও প্রশস্ততা প্রসারিত করতে এবং স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য এই সুযোগটি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, যাতে চীন চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যায়।

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের অনন্যতা উচ্চ-পর্যায়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতায় প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের মূল বিষয়ও ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কেন্দ্রিক।

টানা ১৩ বছর ধরে চীন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। আর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

বাংলাদেশ ২০১৬ সালে বিআরআই’তে যোগদানের পর থেকে, চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সেই বছর ১৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালে ২৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ছিল ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা চীনকে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস করে তুলেছে। চীন, বাংলাদেশের জন্য ৭টি রেলপথ, ১২টি মহাসড়ক, ২১টি সেতু এবং ৩১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে, পদ্মা সেতু, কর্ণফূলী টানেল এবং দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের মতো অনেক ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা নিয়ে এসেছে।

বর্তমানে, বাংলাদেশে ৬৭০টিরও বেশি চীনা কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে এবং কাজ করছে। এ সব উদ্যোগ সাড়ে ৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা একবার বলেছিলেন যে ‘বিআরআই’ বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

৯ তারিখে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ফোরামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এবং চীন দীর্ঘদিন ধরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং চীন সর্বদা বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে অবদান রেখে আসছে এবং প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উন্নীত করেছে। আমি অধীর আগ্রহে চীনের ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেমন অবকাঠামো, পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি, লজিস্টিকস, এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগের অপেক্ষায় আছি।”

আমি সম্প্রতি যখন সর্বস্তরের অনেক বাংলাদেশীর সাথে যোগাযোগ করি, তখন আমি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ভবিষ্যতের সহযোগিতার জন্য তাদের আশাবাদও গভীরভাবে অনুভব করি।

তারা আশা করে যে চীনের প্রস্তাবিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতাকে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করতে পারে এবং বাংলাদেশের পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ডিজিটাল অর্থনীতি এবং নীল অর্থনীতির উন্নয়ন স্তরকে উন্নত করতে পারে।

আগামী বছর দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। আশা করা যায়, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ এবং বিআরআইয়ের আওতায় চীন ও বাংলাদেশের যৌথ নির্মাণ এবং বাংলাদেশের ‘ভিশন ২০৪১’ ও ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতাকে আরও বড় করে তোলার জন্য উন্মুখ। এটি পারস্পরিক সুবিধা এবং জয়-জয় ফলাফলের আরও বড় উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

(জিনিয়া/হাশিম/ফেই)