এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।
চীনের সিনচিয়াংয়ে এক ধরণের নাশপাতি আছে, যা পরিপক্ক হবার আগেই বিপুল পরিমাণে অর্ডার করা হয় এবং বিদেশেও রফতানি হয়। এ নাশপাতি সুগন্ধযুক্ত। এটি যেখানে উত্পন্ন হয়, সেখানে সর্বত্র সুগন্ধ পাওয়া যায়। ময়ূর নদীর তীরে এ নাশপাতির ফলন হয়। এই বিশেষ নাশপাতির নাম কোরলা (Korla)।
সুগন্ধযুক্ত নাশপাতি কোরলা
যদি আপনি খাঁটি সুগন্ধযুক্ত নাশপাতি কোরলা সম্পর্কে জানতে চান, তবে আপনাকে ময়ূর নদী দিয়ে শুরু করতে হবে। কিংবদন্তি অনুসারে, অনেক আগে, প্রাচীন দেশ ইয়ানকিতে এক রাজকন্যা ছিলেন। এই সুন্দরী রাজকন্যার মন সবসময় খারাপ থাকতো। তিনি বিষন্নতায় ভুগছিলেন। বিষয়টা মন্ত্রীপুত্র তাহির খেয়াল করলেন। তাহির ছিলের রাজকন্যার প্রেমে দিওয়ানা। তিনি রাজকন্যার জন্য উদ্বিগ্ন হলেন।
একদিন, রাজকন্যা একটি স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে তিনি একটি সুগন্ধযুক্ত নাশপাতির স্বাদ পান, যা তিনি আগে কখনও খাননি। এতে তার মন ভালো হয়ে গেল। ঘুম থেকে জেগে তিনি রাজাকে সেই নাশপাতির গাছ খুঁজে বের করতে অনুরোধ জানালেন। রাজা ঘোষণা দিলেন, যে এই নাশপাতির গাছ খুঁজে বের করতে পারবে, তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে।
তাহির বুঝলেন যে এটি একটি সুযোগ। তিনি হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করে, পাহাড়-নদী ডিঙ্গিয়ে, জন্তু-জানোয়ারদের সাথে লড়াই করে, তিন মাসের কঠোর অনুসন্ধানের পর, সেই নাশপাতি গাছটি খুঁজে পেলেন। সেই গাছ তিনি রাজ্যে নিয়ে আসলেন। রাজকন্যা এতে খুব খুশি হলেন। তিনি তাহিরের সাথে নাশপাতি গাছটির ভালো যত্ন নিতে শুরু করলেন। দিন কাটতে লাগলো, নাশপাতি গাছ বড় হলো। এরই মধ্যে দু’জনের মধ্যে ভাব জমে গেল। একসময় দু’জনের বিয়ের কথা পাকাও হয়ে গেল।
কিন্তু দেশের সেনাপ্রধান এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। তিনি নাশপাতি গাছটি যেখানে ছিল, সেখানে তাহিরকে হত্যা করে তার দেহ নদীতে ফেলে দিতে একদল লোক পাঠালেন। তারা তাহিরকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিল। রাজকন্যা ঘটনা জানতে পেরে মর্মাহত হলেন। তিনি শেষবারের মতো নাশপাতি গাছের গোড়ায় পানি দিলেন এবং নদীর তীরে আত্মহত্যা করলেন। এ সময় দেখা গেল অলৌকিকভাবে দুটি ময়ূর নদী থেকে আকাশে উড়ে গেল। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়ে গেল ময়ূর নদী।
সুগন্ধযুক্ত নাশপাতি কোরলার উত্স নিয়ে আরও মজাদার কিংবদন্তি আছে। আরেক কিংবদন্তি অনুসারে, প্রাচীনকালে কোরলা এলিমান নামে এক স্মার্ট ও সুন্দরী মেয়ে ছিল। বিশাল সমুদ্রের প্রান্তে গ্রামবাসীদের নাশপাতি খাওয়াতে চাইলেন তিনি। তিনি পাহাড়-নদী ডিঙ্গিয়ে ভালো নাশপাতির চারা অনুসন্ধানে বের হলেন। তাঁর অনুসন্ধানকাজ তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল। অবশেষে, একদিন তিনি একটি ভালো জাতের নাশপাতি গাছের সন্ধান পেলেন। তিনি সেই গাছের চারা নিয়ে আসলেন এবং স্থানীয় বন্য প্রজাতির নাশপাতি গাছের সাথে তার কলম করলেন। এভাবে কলমকৃত নতুন এক নাশপাতি গাছের বেড়ে উঠতে লাগল। একসময় সে গাছে ফল ধরল। নাশপাতি পরিপক্ক হলে সুগন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো। খেতেও মিষ্টি ও সুস্বাদু।
এ গাছ সম্পর্কে জমিদারের কাছে পৌঁছালে, তিনি সেটিকে উঠিয়ে নিজের বাগানে নিতে চাইলেন। কিন্তু মেয়েটি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন। এতে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে জমিদার নির্মমভাবে মেয়েটিকে হত্যা করে এবং নাশপাতি গাছটিও কেটে ফেলে। কিন্তু, পরের বসন্তে দেখা গেল, যেখানে নাশপাতি গাছটি বপণ করা হয়েছিল, সেখানে অলৌকিকভাবে আরেকটি নাশপাতি গাছ জন্মেছে। সেটি নিজে নিজে বড় হয় এবং তাতে চমত্কার নাশপাতি ধরে। লোকেরা তখন বলাবলি করতে লাগলো যে, এই গাছটি মেয়েটির আত্মা। সেই থেকে এই নাশপাতি গাছের ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়।
প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে সিচাং’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও সিচাংয়ের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)