জুলাই ১১: গত দুই দিনে, দক্ষিণ চীন সাগরসংশ্লিষ্ট দুটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে চীনের কর্তৃপক্ষ। একটি প্রকাশিত হয়েছে ১০ জুলাই, যার শিরোনাম: “হুয়াংইয়ান দ্বীপসংক্রান্ত সামুদ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতির তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট”; আরেকটি প্রকাশিত হয়েছে ৮ জুলাই, যার শিরোনাম: “শানহুচিয়াও প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্টকারী যুদ্ধজাহাজ”। এই দুটো রিপোর্টে বিস্তারিতভাবে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে এবং আলাদাভাবে হুয়াংইয়ান দ্বীপ এবং রেনআইচিয়াও-র প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
হুয়াংইয়ান দ্বীপের সামুদ্রিক পরিবেশের গুণগত মান শ্রেষ্ঠ এবং শানহুচিয়াও-র প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বাস্থ্যকর। তবে, রেনআইচিয়াও অঞ্চলের শানহুচিয়াও-র প্রাকৃতিক পরিবেশ গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট সমুদ্রসৈকতে ফিলিপিন্সের যুদ্ধজাহাজের অবৈধ অবস্থান ও কার্যকলাপ।
দক্ষিণ চীন সাগরের পরিবেশ নষ্ট করছে ফিলিপিন্সের অবৈধ কার্যকলাপ। এটা এখন প্রমাণিত সত্য। অথচ দেশটি হাস্যকরভাবে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে পুরাতন কৌশল খাটাচ্ছে। ফিলিপিন্সের দক্ষিণ চীন সাগরসংক্রান্ত বিশেষ কর্মগ্রুপ গত ৯ জুলাই এক বিবৃতি জারি করে। বিবৃতিতে উল্টো চীনকে দক্ষিণ চীন সাগরের শানহুচিয়াও-র পরিবেশ নষ্টের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, সত্যকে মিথ্যা বা সাদাকে কালো বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। এ ক্ষেত্রেও ফিলিপিন্সের মিথ্যাচার বিশ্বাসযোগ্য নয়। দেশটির অপতত্পরতাও এতে ঢাকা পড়বে না। আন্তর্জাতিক সমাজ এতে বিভ্রান্ত হবে না।
এই দুটো চীনা রিপোর্টের মূল বিষয়বস্তু একবার দেখে নেওয়া যাক। উপগ্রহ রিমোট সেন্সিং এবং সাইট জরিপের তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, ফিলিপিন্সের যুদ্ধজাহাজ, যা ২৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ‘সৈকতে’ বসে আছে, শানহুচিয়াও অঞ্চলের পরিবেশ নষ্ট করছে। এতদঞ্চলের সমুদ্রের জলে ভারী ধাতু, তেলজাতীয় ও লবণজাতীয় পদার্থের পরিমাণ স্পষ্টভাবে ইতিহাসের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এর মূল কারণ ক্রমবর্ধমান মরিচা এবং ক্ষতিগ্রস্ত যুদ্ধজাহাজ ও এর নাবিকদের মানবিক কার্যকলাপ।
চীনের রিপোর্ট সু-প্রতিষ্ঠিত ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে রচিত। এ ক্ষেত্রে চীনের দাবি স্পষ্ট: ফিলিপিন্সকে তার যুদ্ধজাহাজ রেনাই রিফ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। এতে সামুদ্রিক পরিবেশ আরও ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সিএনএন-এর এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, ১০ বছর আগে, সিএনএনের সাবেক রিপোর্টার থমাস জিলার ‘ইঁদুর ও তেলাপোকায় ভর্তি মরিচায় আক্রান্ত নৌকায় ফিলিপিনো মেরিনদের সাথে বাস করতেন’। তাঁরা নিজেদের জন্য মাছ ধরতেন এবং জাহাজেই বেশিরভাগ খাবার রান্না করতেন। এখন পর্যন্ত সেই জাহাজে কী পরিমাণ ঘরোয়া বর্জ্য উত্পন্ন হয়েছে, তা কল্পনা করাও কঠিন।
বিপরীতে, চীনের সুরক্ষা ও তত্ত্বাবধানের ফলে হুয়াংইয়ান দ্বীপের পরিবেশ সুন্দর ও প্রাণবন্ত। মে ও জুনে বেশ কয়েকটি চীনা পেশাদার বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের যৌথভাবে পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুসারে, হুয়াংইয়ান দ্বীপে সমুদ্রের পানির গুণগত মান ভালো। মাছের নমুনায় ভারী ধাতু ও ক্ষতিকর পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বনের মানও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রয়েছে। এখানকার প্রবালের বৈচিত্র্যও সন্তোষজনক।
এই অনুসন্ধান থেকে ফুটে উঠেছে সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় চীনের কার্যকর পদক্ষেপের ছবি। এ পর্যন্ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), আসিয়ান, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলো, আর্কটিক দেশগুলো, এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাথে একের পর এক নীল অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে চীন। দক্ষিণ চীন সাগর তথা বিশ্বের সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অনস্বীকার্য। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)