আকাশ ছুঁতে চাই ৭৮
2024-07-11 21:25:54

১.   অমেই কুংফু গার্লসের অগ্রযাত্রা                         

২. পুরুষ চরিত্রে মঞ্চ মাতাচ্ছেন নারী শিল্পী

৩. কেশবতী কন্যার ভূমি

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

অমেই কুংফু গার্লসের অগ্রযাত্রা                         

মার্শাল আর্ট চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটি অংশ। সাধারণ শরীরচর্চা হিসেবেও অনেকে চীনের মার্শাল আর্টের অনুশীলন করেন।

                                               

চীনের নারী-পুরুষদের মধ্যে মার্শাল আর্ট বা কুংফু শেখার প্রবণতা নতুন কিছু নয়। তবে এর মাঝেও আলাদা করে সবার নজর কেড়েছে নতুন প্রজন্মের মেয়েদের একটি কুংফু দল। অমেই কুংফুং গার্লস নামের দলটির একটি ভিডিও পেয়েছে কোটি কোটি ভিউ। তাদের দেখাদেখি এখন চীনের নারীরা আগ্রহী হচ্ছে মার্শাল আর্ট শেখার বিষয়ে। কিশোরী ও তরুণীদের অনুপ্রেরণা যোগাতে নিয়মিত ভিডিও আপলোডও করে চলেছে নারী দলটি। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

 

গত এপ্রিলে চীনজুড়ে দারুণ আলোড়ন তৈরি করেছে নতুন প্রজন্মের একদল তরুণীর কুংফু চর্চার ভিডিওচিত্র। তরুণীরা সবাই অমেই কুংফু গার্লস-এর সদস্য। ঐতিহ্যবাহী চীনা মার্শাল আর্টের প্রতি চীনের কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যে নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে অমেই কুংফু গার্লস।

 

মে মাসের প্রথম দিকে প্রকাশিত দলটির প্রথম প্রচারণা ভিডিওতে অমেই কুং ফু গার্লস-এর ৯ সদস্যকে দেখা যায় দারুণ সব কসরত ও দুর্দান্ত দক্ষতা দেখাতে। এক সপ্তাহের মধ্যে, ভিডিওটি একশ কোটি বার দেখা হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে।

দলটির সদস্য লিং ইউন বলেন, “অভিষেকের পরপরই আমরা এতটা সাড়া পাব ভাবিনি। প্রশংসা ও উৎসাহ পেয়ে আমরা বেশ সম্মানিত। এতে চীনের ঐতিহ্যবাহী অমেই কুং ফুর প্রচার আরও এগিয়ে যাবে।”

২৬ বছর বয়সী লিং ইউন বললেন, সবার আইডল হয়েই তারা সন্তুষ্ট নন। তারা সাংস্কৃতিক উদ্ভাবনে বড় কিছু অর্জনের স্বপ্ন দেখছেন। সংস্কৃতির গভীরে থাকা উপাদানগুলোর প্রচার ও প্রসারেও তারা কাজ চালিয়ে যেতে চায়।

 

অমেই কুংফু দলটির পরিচালক লি চিয়েইউ জানালেন, সিচুয়ান প্রদেশের অমেই পর্বতে অমেই মার্শাল আর্টের উত্তরাধিকারী যারা আছেন তাদের কাছ থেকেই নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেন অমেই কুং ফু গার্লসের সদস্যরা।

মার্শাল আর্ট ছাড়াও তারা ঘোড়ার চড়া, তীরন্দাজ এবং আরও কিছু পারফর্মিং আর্টের প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন। পরে আরও বড় মঞ্চে পারফরম করে সবাইকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।

লি বলেন, দলটির এখন পরিকল্পনা হলো প্যারিস অলিম্পিকের জন্য কিছু বিষয়বস্তু তৈরি করা, যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঐতিহ্যবাহী চীনা কুংফুর অনন্য আকর্ষণ প্রদর্শন করা যায়।

প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

পুরুষ চরিত্রে মঞ্চ মাতাচ্ছেন নারী শিল্পী

পিকিং অপেরা চীনের ঐতিহ্যবাহী নাট্যশিল্প। পিকিং অপেরার প্রধান পুরুষ চরিত্রকে বলা হয় মানমোওসং। নারী চরিত্রকে বলা হয় ফাদান। পুরুষ চরিত্রে নারীর অভিনয় বেশ বিরল ঘটনা। এই বিরল ঘটনা ঘটিয়ে তার মানে  পিকিং অপেরায় প্রধান পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করে আলোড়ন তুলেছেন একজন নারী। শুনবো তার গল্প।

চীনের বিখ্যাত নাট্যধারা পিকিং অপেরা। পিকিং অপেরায় প্রধান পুরুষ চরিত্রকে বলা হয় মানমোওসাং। মানমোওসাং বা নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন একজন নারী অভিনয়শিল্পী। ছিন শান। তিনি ক্যানটোনিজ অপেরার একজন তারকা অভিনেত্রী। তিনি মঞ্চে প্রধান পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ খ্যাতি পেয়েছেন। কাজটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। পুরুষের ভূমিকায় অভিনয় করতে হলে আয়ত্ত্ব করতে হয় পুরুষের ব্যক্তিত্ব ও অনুভব। ছিন শান বলেন, বিষয়টি খুব চ্যালেঞ্জিং। কারণ নারী ও পুরুষের ব্যক্তিত্বের গঠন, কথা বলার ভঙ্গি, আচরণ ও অনুভূতি ভিন্ন। মঞ্চে যখন তিনি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন তখন পুরুষালী আচরণ, দৃঢ়তা, দেহভঙ্গী সবকিছু ফুটিয়ে তুলতে হয়। তাকে রীতিমতো একজন পুরুষ হয়ে উঠতে হয়। অভিনয়ের মাধ্যমে শুধু যে চরিত্রে অভিনয় করছেন সেটাই নয় বরং তার জেন্ডারগত আচরণ পর্যন্ত পালটে ফেলতে হয় যা বেশ কঠিন। তবে এই কঠিন কাজটি করার মাধ্যমেই নিজের অভিনয়ের উৎকর্ষ অনুভব করতে পারেন তিনি।

ছিন শান কিন্তু অভিনয়ের শুরুতে নারী চরিত্রই বেশি পছন্দ করতেন। এর কারণ মঞ্চে নারীদের বেশ সুন্দর দেখায়। তাদের সাজসজ্জাও বেশ সুন্দর। নানা রকম অলংকার পরেন তারা। সবাই তাদের সুন্দরী বলেন। এসব কারণে নারী চরিত্রকে ভালো লাগতো।

ছিন শান আরও বলেন, প্রথমদিকে তার কাছে এ কাজটি বেশি কঠিন বলে মনে হতো। পিকিং অপেরায় নায়িকাকে বলা হয় ফাদান। তো এই ফাদানকে যখন নারীসুলভ সাজসজ্জা করতে দেখতেন তখন ইচ্ছা হতো নিজেই নায়িকা হতে। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন পিকিং অপেরায় অনেকক্ষেত্রে কাহিনীর গতি নিয়ন্ত্রণ করেন নায়ক। অনেক নাটক নায়ককেন্দ্রিক।

পুরুষের চরিত্রের সংলাপ ও অভিব্যক্তির প্রক্ষেপণও অনেক দৃঢ়। বীরত্ব প্রকাশিত হয় পুরুষ চরিত্রের মাধ্যমে। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে নিজের ভিতর অন্য এক ধরনের শক্তি অনুভব করেন তিনি। তাছাড়া এটিই তো কেন্দ্রীয় চরিত্র।

তাই কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মজাই আলাদা। চ্যালেঞ্জও বেশি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আনন্দ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চ তারকা ছিন শান।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

কেশবতী কন্যার ভূমি

বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল এমন খোঁপা বেঁধে দেবো হাজার টাকা মূল। হ্যা, বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় লোকজ গান। নারীর লম্বা চুল অনেক সমাজেই তার সৌন্দর্যের একটি অংশ। চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়াও জাতির নারীদের লম্বা চুল তাদের ঐতিহ্যের অংশ । এই ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে কিভাবে গ্রাম পুনর্জীবনে অবদান রাখছেন তারা শুনবো সেই গল্প।

কেশবতী কন্যার গল্প রয়েছে বিভিন্ন দেশের রূপকথায়। রাপুনজেলের মতো লম্বা না হলেও ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর নারীদের চুল হাঁটু ছাড়িয়ে পা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইয়াও জাতির নারীদের তিনটি প্রধান ঐতিহ্য রয়েছে। প্রথমত তাদের লম্বা চুল, দ্বিতীয়ত তাদের বিশেষ লোকজ নৃত্য আর তৃতীয়ত বিশেষ নকশায় বোনা কাপড়। এই ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলেছেন কুয়াংসি চুয়াং অঞ্চলের লংশ্যং কাউন্টির হুয়াংলুও গ্রামের অধিবাসী নারীরা।

এখানকার নারীদের লম্বা চুলের বাহার দেখে অনেকেই জানতে চান এই চুলের যত্ন পদ্ধতি কি, কিংবা কিভাবে এত ঘন, কালো, লম্বা চুল পাওয়া যায়। বিশেষ ধরনের হেয়ার অয়েল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার তৈরি করেন এখানকার নারীরা।

 

এই হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টসের বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে এখানে। যার উদ্যোক্তারা নারী। এখানকার ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি হয় এসব প্রোডাক্ট।

লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করেন নারী উদ্যোক্তারা। আবার এখানে যে পর্যটকরা আসেন তারাও এগুলো আগ্রহের সঙ্গে কিনে নেন।

এখানকার নারীদের বিশেষ নৃত্য গীতের সংস্কৃতিও অনন্য। বিশেষ বিশেষ উৎসব উপলক্ষে এই নৃত্য গীতের পরিবেশনা দেখতে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক এখানে আসেন। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে এ গ্রামে ২ লাখ ৭৪ হাজার পর্যটক এসেছেন।

নারীদের বিশেষ নকশায় বোনা ঐতিহ্যবাহী কাপড়েরও বেশ চাহিদা রয়েছে। এই কাপড়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী পোশাক কেনেন অনেকেই।

এভাবে ইয়াও জাতির নারীদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে আয় বৃদ্ধির পথ করে নিয়েছেন এই গ্রামের মেয়েরা। গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনেও অবদান রাখছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: আফরিন মিম

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ