শায়ানসি প্রদেশের ভ্রমন নির্দেশনাকারী ইউয়ে পাওচেং
2024-07-11 17:04:39

ট্যুর গাইড বা ভ্রমণ নির্দেশনাকারী ইউয়ে পাওচেং শায়ানসি প্রদেশের সি’আন থেকে এসেছেন, একটানা ৩৩ বছর ধরে তিনি ছিন রাজবংশীয় আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে ‘শ্যাসি-অ্যাকসেন্ট ইংরেজি’ ব্যবহার করেছেন, শুনতে খুব মজাদার এবং আকর্ষণীয়।

যথারীতি ইউয়ে পাওচেং ভ্রমণ দলের পর্যটকদের কাছে কিছু প্রশ্ন করেছেন, যার উদ্দেশ্য বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য- ছিন রাজবংশীয় আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং একসাথে উত্তর খুঁজে বের করতে দলের প্রত্যেককে উত্সাহিত করা।

ভ্রমণ নির্দেশনা করার সময় ইউয়ে পাওচেং বইয়ের জ্ঞান পুরোপুরি উগড়ে দিতে পছন্দ করেন না, বরং তিনি পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পছন্দ করেন। তিনি নিজের অনন্য শৈলী এবং আন্তরিক সেবা দিয়ে বিদেশী বন্ধুদের সম্মান ও প্রশংসা জিতেছে। একটানা ৩৩ বছরে শূন্য অভিযোগের সাথে একটি ভাল খ্যাতি বজায় রেখেছেন তিনি।

‘জ্ঞানই শক্তি’ এমন একটি বাক্য যা ইউয়ে পাওচেং প্রায়শই বলে থাকেন। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এই বাক্যটি প্রমাণ করেছেন। ছোটবেলায় তিনি গ্রামীণ এলাকা বসবাস করতেন এবং তার পরিবার দরিদ্র ছিল। ইংরেজির প্রতি তার গভীর আগ্রহ দিয়ে তিনি বিংশ শতাব্দীর ৮০’র দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সময় সি’আনের কিছু দর্শনীয় স্থানে ট্যুর গাইড হিসেবে খণ্ডকালীন কাজ করার অভিজ্ঞতা কেবল তার মৌখিক ভাষার চর্চাকে সমৃদ্ধ করেনি, বরং ট্যুর গাইড হওয়ার প্রবল আগ্রহও সৃষ্টি করেছে।

১৯৬৬ সালে ইউয়ে পাওচেং শায়ানসি প্রদেশের সিয়েনইয়াংয়ের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, পরিবারে অনেক ভাই-বোন ছিল এবং খাওয়া-পরার সমস্যা ছিল।

ইউয়ে পাওচেং বলেন, ‘গ্রামের লাউড স্পিকারে প্রতিদিন বেলা ১২টায় সময়মতো ইংরেজি শোনাতো। একটি ইংরেজি, তারপর একটি চীনা ভাষা। সেই সময় থেকে, আমি ইংরেজিতে প্রতিটি বাক্য এবং চীনা ভাষায় প্রতিটি বাক্য শুনতাম। আমি আরও শিখতে চেয়েছিলাম, তাই একটি অভিধান কিনতে চেয়েছিলাম। তবে পরিবার খুব দরিদ্র বলে অভিধান কেনার টাকা আমার ছিলো না। আমার মনে আছে যে, আমি জুনিয়র হাইস্কুলের তৃতীয় গ্রেডের মধ্যে ছিলাম এবং আমার বাবা-মা অনেকদিন পর টাকা সঞ্চয় করে আমাকে একটি অভিধান উপহার দিয়েছিলেন।

তারপর ইউয়ে পাওচেং অভিধানটিকে তার প্রিয় জিনিস হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ইচ্ছামতো সি’আন ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। ১৯৯১ সালে, তিনি পরীক্ষায় পাস হয়ে একটি ট্যুর গাইড সার্টিফিকেট অর্জন করেন এবং ছিন রাজবংশীয় আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটার গল্প বিদেশি পর্যটকদেরকে তুলে ধরেন।

সি’আনের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হিসেবে ছিন রাজবংশীয় আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটার ভ্রমণের শীর্ষ সময়ে দিনে ৬০ হাজারেরও বেশি পর্যটক আসে। চীনা ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও বেশি সংখ্যক বিদেশী বন্ধুরা এখানে আসে। ১৯৯৮ সালে যখন লিন থোং কালচারাল অ্যান্ড ট্যুরিজম ব্যুরো ইন্ডিভিজুয়াল ট্যুরিস্ট সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, তখন ইউয়ে পাওচেং বিদেশিদের জন্য একমাত্র ট্যুর গাইড ছিলেন। আজ, এখানে শত শত ট্যুর গাইড বিদেশী অতিথিদের সেবা দিচ্ছেন।

ইউয়ে পাওচেং বলেন, আমাদের পরিষেবার সুবিধাগুলো আন্তর্জাতিকীকরণে দিকে চলে যাচ্ছে। চীনে আসার আগে এবং পরে বিদেশী অতিথিদের সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারণা রয়েছে। তারা কখনই ভাবেননি যে, চীনে এত সুন্দর পাহাড় ও নদী রয়েছে এবং চীন এত সমৃদ্ধ ও সুন্দর।

সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে জন্মস্থানের ইতিহাস বলতে খুব সুদক্ষ ইউয়ে পাওচেং। তিনি তার আকর্ষণীয় শৈলী এবং আন্তরিক পরিষেবা দিয়ে বিদেশী পর্যটকদের মুগ্ধ করেছেন এবং করছেন। ৩৩ বছর ধরে ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করলেও তিনি নিজেকে উন্নত করতে চান। তিনি প্রতিদিন অধ্যয়নে অভ্যস্ত। ছিন রাজবংশীয় আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা সংক্রান্ত বিষয়বস্তুকে প্রতিনিয়ত পরিপূরক ও আপডেট করেন। তিনি আশা করেন যে, তার ইংরেজি ব্যাখ্যার মাধ্যমে আরও বিদেশী পর্যটক ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির আকর্ষণীয় শক্তি উপলব্ধি করতে পারবেন।

(লিলি/হাশিম)