‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৭৮
2024-07-10 19:26:17

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।

 

৭৮ তম পর্বে যা যা থাকছে:

১. শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্নাতক চীনা তরুণ ইয়াও চুনপেং

২. ক্রস-স্ট্রেইট যুব উন্নয়ন ফোরামে বন্ধন শক্তিশালী করার প্রত্যয়

৩.  তাজিক শিক্ষার্থীর চীন নিয়ে যতো কথা

 

১.  শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্নাতক চীনা তরুণ ইয়াও চুনপেং

২৩ বছর বয়সী ইয়াও চুনপেংয়ের গল্পটি অন্য সবার মতো না। সেরিব্রাল পালসির কারণে কাজ ও কথাবার্তায় বিশাল প্রতিবন্ধকতা থাকলেও, সেটাকে জয় করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অক্লান্ত পরিশ্রম আর সহপাঠীদের সহযোগিতায়। বাস্তব হয়েছে তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন। তবে তার এ  যাত্রাপথ মোটেও মসৃণ ছিল না।

 

২০২০ সালের কথা। জাতীয় পর্যায়ের কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় চমৎকার ফলাফল করেন ইয়াও। এরপর ভর্তি হন নানচিংয়ের চায়না ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে।

 

চায়না ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিভার্সিটির পার্টি সেক্রেটারি চিন নেংমিং বলেন,

‘আমরা তার মতো করে একটি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তার বিভিন্ন কোর্সের জন্য পৃথক নির্দেশনা এবং সাহায্য করার জন্য ছয়জন পেশাদার শিক্ষকও নিয়োগ দেয়।’

ইয়াওর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয়েছিল অগণিত বাধার মধ্য দিয়ে। এমনকি ক্লাসে নোট নেওয়ার কাজটিও ছিল কঠিন পরিশ্রমের। হাতের সমস্যা থাকায়  লিখতে গিয়ে দেখা যেত পাতার পর পাতা নষ্ট হচ্ছে। তবে হাল না ছেড়ে চর্চা চালাতে থাকেন ইয়াও। পরে এক পর্যায়ে সহপাঠীদের সাথে তাল মিলিয়ে নোট নেওয়া শিখে যান তিনি।

শিক্ষার্থী ইয়াও বলেন, ‘লেখা আমার জন্য কঠিন ছিল। মাঝে মাঝে আমাকে সহপাঠীদের নোট দেখতে হতো। কিন্তু এখন আমি লেকচারের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নোট নিতে পারি।’

হুইলচেয়ার-নির্ভর থাকায়, ইয়াওকে দৈনন্দিন জীবনেও পড়তে হয় নানা সমস্যার মুখে। তার আত্মবিশ্বাসের অভাবও ছিল প্রবল। সৌভাগ্যক্রমে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সে পায় কিছু যত্নশীল সহপাঠী। যাদের হাত ধরে ইয়াওর জীবনে আসতে থাকে পরিবর্তন। জটিল পড়াশোনাও হয়ে যায় সহজ।



ইউনিভার্সিটির স্পোর্টস মিট চলাকালে ইয়াওর সহপাঠী ও শিক্ষকরা একটি হুইলচেয়ার প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল। বার্ষিক এই স্পোর্টস মিটও ইয়াওর জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে।

 


পড়াশোনার প্রতি ইয়াওর আত্মনিবেদন ছিল অনন্য। ভোর ৬টায় থেকে রাত ১১টা অবধি চলতো পড়া। চার বছরের অধ্যয়নের দশটি কোর্সে ৯০ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে  র‌্যাংকিংয়ে ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২তম স্থান অর্জন করেন ইয়াও। 

সমাবর্তনের দিন ইয়াওয়ের বাবা ইয়াও মিং, বক্তব্য দিতে যখন মঞ্চে আসেন, তখন তরুণ ইয়াও গর্বে হাততালি দেন।  এখন সুচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়ছেন ইয়াও।

‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক স্ব-শৃঙ্খলার প্রয়োজন। অন্যদের তুলনায়, আমাকে একটু  চেষ্টা করতে হবে। তবে আমি মনে করি আমার জন্য সহজ হবে এমন একটি পদ্ধতি খুঁজে পাবো। সত্যি বলতে কি, যদি লক্ষ্য ঠিক  থাকে তবে ভালো ফল পাওয়া কঠিন নয়।’

আপাতত তার লক্ষ্য পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়া। আর তা সম্পন্ন করেই ইয়াও চুনপেং দেখাতে চান, ধৈর্য ও অধ্যবসায় থাকলেই স্থাপন করা যায় অনন্য এক নজির।

প্রতিবেদক : হোসনে মোবারক সৌরভ

সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ

 

২. ক্রস-স্ট্রেইট যুব উন্নয়ন ফোরামে বন্ধন শক্তিশালী করার প্রত্যয়

তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের যুবকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে পূর্ব চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের হ্যাংচৌ শহরে সপ্তম ক্রস-স্ট্রেইট যুব উন্নয়ন ফোরাম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।     

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির তাইওয়ান কার্যালয়, স্টেট কাউন্সিলের তাইওয়ান সম্পর্কীয় কার্যালয়ের প্রধান সং থাও এবং চীনা কুওমিনতাং পার্টির সাবেক চেয়ারপারসন হুং সিউ-ছু  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।  

 

এই ফোরামে চীনের মূল ভূখণ্ডে জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে তাইওয়ান থেকে প্রায় ৭০০ জন তরুণ অংশগ্রহণ করেন। তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে মূল ভূখণ্ডকে জানার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা শেয়ার করেন একদল অংশগ্রহণকারী।   



অংশগ্রহণকারীদেরকে বৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ই-কমার্স লাইভ সম্প্রচার এবং বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন থিমের উপর ধারাবাহিক কর্মশালার আয়োজন করে দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কে আরও ভালভাবে বোঝার সুযোগ করে দেয় এই ফোরাম।

এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ক্রস স্ট্রেইট যুব উন্নয়ন ফোরাম স্ট্রেইটের উভয় পাশের তরুণদের জন্য ধারণা বিনিময়, পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি এবং একে অপরের কাছ থেকে শেখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

 

৩. তাজিক শিক্ষার্থীর চীন নিয়ে যতো কথা

সম্প্রতি তাজিকিস্তানের একজন ছাত্র বেইজিং ফিল্ম একাডেমি থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। পড়াশোনা ছাড়াও চীনের সংস্কৃতি তাকে খুব আকৃর্ষণ করে। চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী। বিস্তারিত থাকছে রফিক বিপুলের প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি তাজিকিস্তান থেকে আগত একজন ছাত্র বেইজিং ফিল্ম একাডেমি (বিএফএ) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি চীনে তার চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য চীন সরকারের প্রশংসা করেন।

তেইশ বছর বয়সী মুখিতদিনভ সামারিদ্দিন সিনেমাটোগ্রাফি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার আলোকে বিদেশে পড়ার জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করছেন। তিনি চীনে আসার আগে তাজিকের রাজধানী দুশানবেতে একটি স্থানীয় কনফুসিয়াস কেন্দ্রে চীনা ভাষা শিখেছিলেন এবং চীনের ভূখণ্ড ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

 

চীন বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও সামারিদ্দিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কুইচৌ, পূর্ব উপকূলীয় শহর ছিনতাও এবং উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়ান উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ধরনের খাবারের বৈশিষ্ট্য এবং উপভাষা দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন।

 

মুখিতদিনভ সামারিদ্দিন বলেন, "কুইচৌতে গিয়ে আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম। আমরা কুইয়াং, ছিনতাও এবং সিনচিয়াং-এ একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি এবং আমি এই সমস্ত বৈচিত্র্যময় লোকদের সাথে সেখানে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ করতে গিয়েছিলাম"

 

তিনি আরও বলেন  চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ মানুষকে এমন কিছু অভিজ্ঞতার সুযোগ দেয় যা তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কখনও কল্পনা করতে পারে না এবং তিনি দর্শকদের একটি বিস্তৃত ধারণা প্রদানের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখেন। তিনি আরও আশা করেন যে তার চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তাজিকিস্তানকে ভিন্নভাবে দেখবে চীনা জনগণ।  

‘আমি চলচ্চিত্রে স্নাতক শেষ করে বাড়ি ফিরে একটি  শর্ট ফিল্ম নির্মাণ শুরু করেছিলাম। তখন আমার সাথে দুই চীনা সহপাঠী এসেছিল। আমি মনে করি এটি তাদের জন্যও খুব আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা ছিল। এভাবে আমরা এই চলচ্চিত্রকে চীনে ফিরিয়ে এনেছি। এই গল্পের মাধ্যমে তারা ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভূখণ্ড এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাবে।’

 

পড়াশোনার পাশাপাশি সামারিদ্দীন চীনের জীবনযাত্রা সম্পর্কেও অনেক কিছু শিখেছিলেন এবং বিশেষ করে সেখানে বসবাসের সুবিধা তাকে মুগ্ধ করে।

 

"আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে চীনের গল্প বলতাম। চীনে বসবাস করা যে কতটা সুবিধাজনক তা নিয়ে আমি বেশিরভাগ সময় কথা বলতাম। উদাহরণস্বরূপ একটি ফোনের মাধ্যমেই আপনি যেকোনও খাবার অর্ডার, জিনিসপত্র ক্রয় এবং ভ্রমণ করতে পারবেন। আপনি সহজেই উইচ্যাট পে এর মাধ্যমে যেকোনও ধরনের পণ্যে ক্রয় করে পেমেন্টে করতে পারবেন। আমি চীনে থাকাকালীন এই বিষয় সম্পর্কে শিখেছি এবং এটা খুবই সুবিধাজনক।

সামারিদ্দীন আরও বলেন ভবিষ্যতে তাজিক গল্পের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি তার ক্যারিয়ার গড়বেন  এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে  চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন পূরণে চীনের মূল্যবান সময়  তাকে অবশ্যই সাহায্য করেছে।

 

প্রতিবেদক : রফিক বিপুল  

সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা:  রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী