জুলাই ১০: চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীন ব্যাপকভাবে সংস্কারকে আরও গভীর করেছে, উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারিত করেছে। এই প্রক্রিয়ায় চীনা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আজকের চীন বিশ্বের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। চীনের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। চীন সম্পর্কে বিশ্বের ধারণা বোঝা যায় বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের কথায়।
পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পেরু ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক পলিসির পরিচালক রিকার্ডো লোপেজ রিজো বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন দারিদ্র্যবিমোচন, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিকাশ, এবং শিল্প বিকাশসহ অনেক ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। এই প্রক্রিয়ায় সিপিসি’র নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে ও করছে। চীনের বিকাশের অভিজ্ঞতা গভীরভাবে অধ্যয়নযোগ্য। তিনি আরও বলেন,
“চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য নেতৃত্বের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে সিপিসি, সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে, ঐতিহাসিকভাবে হতদারিদ্র্যকে নির্মূল করেছে। এ ক্ষেত্রে চীনের অভিজ্ঞতা ও সাফল্য বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের সাফল্যও অসাধারণ। এই সফল অভিজ্ঞতার সবই সিপিসি’র নেতৃত্বের সঙ্গে জড়িত, আমাদের যা গভীরতর বুঝতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রে চীন-মার্কিন গবেষণাকেন্দ্রের সিনিয়র গবেষক সুরব গুপ্ত বলেছেন, বহু বছর ধরে চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে অসাধারণ অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করে আসছে। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সবুজ উন্নয়নের ধারণায় চীনের দূরদর্শিতা প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন,
“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মহাকাশ থেকে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত, বহু নতুন ক্ষেত্রে, চীনের অনুসন্ধানকাজে বিশাল অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে, চীনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ক্রমাগত বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নত করার পাশাপাশি, অর্থনীতির রূপান্তর ও আপগ্রেডিংয়ের কাজ চালিয়ে যাওয়া। একই সঙ্গে, চীন সবুজ রূপান্তর প্রক্রিয়ায় দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চীন এই প্রক্রিয়ার মুখোমুখি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলোকে স্বীকার করে এবং একে একটি বিশাল সুযোগ হিসাবেও দেখে। দেশটি সবুজ রূপান্তর ছড়িয়ে দিতে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করারও চেষ্টা করে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চীন ‘কার্বন পিক’ ও ‘কার্বন নিউট্রালিটি’ অর্জনের সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এক্ষেত্রে অনেক বেশি বিনিয়োগও করছে চীন। চীনের লিথিয়াম ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে অর্জিত সাফল্য বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছে।”
পানামার সান্তা মারিয়া অ্যান্টিগা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও অর্থনীতির অধ্যাপক রিচার্ড মোরালেস বলেন, চীন উন্মুক্তকরণ, জয়-জয় সহযোগিতা, ও সংস্কারের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি আরও বলেন,
“চীনের অর্থনীতির আকার, দিকনির্দেশনা, ও উন্মুক্তকরণ কার্যক্রম বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংহতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটি অর্থনীতি, যা উত্পাদনশীল শক্তির বিকাশ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সামাজিক অগ্রগতি, এবং সামাজিক নীতিমালার উন্নতির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেল অন্যান্য অর্থনীতি, বিশেষত উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর জন্য অনুসরণযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, পানামার অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। এখানে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করা দরকার, যা মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে চীনা অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে।” (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)