‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৭৮
2024-07-09 20:30:17

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১। ওয়াংসিয়ান উপত্যকায় পর্যটকদের ভিড়

২। রাত্রিকালীন নৌকা ভ্রমণ আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের

৩। দেখে আসুন শিছাহাই লেকে পদ্মফুলের শোভা

  

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৭৮তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।

 

১। ওয়াংসিয়ান উপত্যকায় পর্যটকদের ভিড়

চারদিকে সবুজ অরণ্য...পাহাড়ের উপর সারিসারি ছোট ঘর ...আর পাহাড়ের মাঝদিয়ে গিরিখাতে বয়ে চলছে স্বচ্ছ পানি... গ্রীষ্মের এই সময়ে এভাবেই সেজেছে ওয়াংসিয়ান উপত্যকা।   

হোমস্টে তে বসে এই উপত্যকায় বৃষ্টির টুপ-টাপ শব্দ শোনার শব্দ যেন অন্যরকম শান্তি দেয় যেকোন পর্যটককে। কেননা বৃষ্টির পর এই উপত্যকা যেন পায় তার আসল রুপ। আর এই উপত্যকার মোহনীয় অপরূপ সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। 

চং লেই নামের এক পর্যটক বলেন, ‘এখানকার দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি এখানকার প্রতিটি জায়গা থেকে ভালো ছবি তুলেছি। এ ছাড়া গিরিখাতের স্বচ্ছ পানির স্রোত দেখলে মনে রুপকথার দেশে আছি’।  

দুই দশক আগেও এই উপত্যকার চিত্র এমন ছিল না। প্রতিনিয়ত পাথর খনন, খিরিখাতের পানি দূষণে উপত্যকা হারিয়েছিল পরিবেশগত ভারসাম্য। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছিল স্থানীয়দের ওপর।  কিন্তু ২০১৭  স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে পালটে যেতে থাকে এখানকার চিত্র।  পাথর খনন বন্ধ করে, পানি ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করতে থাকে তারা।

কুয়াংসিন জেলার ডেপুটি হেড ওয়াং চিচেন বলেন, ‘একসময় এখানে কেউ আসতে চাইতো না। পানির দূর্গন্ধ ছিল। তাই আমরা ওয়াংসিয়ান উপত্যকায় পরিবেশগত পুনরুদ্ধার এবং অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছি’। 

বিভিন্ন পদক্ষেপে পরিবেশের প্রাথমিক উন্নতির পর প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক সম্পদকে একীভূত করে পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে  এক দশকেরও বেশি সময় পর ২০২০ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এই উপত্যাকা। সেই সময় থেকে গেল পাঁচ বছরে এখানে ঘুরতে এসেছেন প্রায় ৭ দশমিক ১ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক। পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায় শহর থেকে নিজ কাউন্টিতে ফিরে আসছেন তরুণ-তরুণীরা।

চৌ লিহুয়া নামের গ্রামের বাসিন্দা বলেন, এখানে কাজের পলিসি খুব ভালো। এখানে কাজ করে আমি ভালো আয় করতে পারি এবং এই আয় আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। আমি মনে করি আমার জীবন এখন খুব সুখী, এবং আমি নিজেও খুব সন্তুষ্ট," ।

বর্তমানে,এই ওয়াংসিয়ান উপত্যকায় রয়েছে ৭০০’র বেশি  হোমস্টে। যেখানে শান্তিময় পরিবেশে রাত্রিযাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। পরিসংখ্যান বলছে, নৈসর্গিক এই জায়গাটির পর্যটন আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ইউয়ানে।

  

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

২। রাত্রিকালীন নৌকা ভ্রমণ আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের

চীনের চেচিয়াং প্রদেশের প্রাচীন একটি শহর সিথাং। এই শহরেই অবস্থিত হুকুও সুইলিয়াং রাজা মন্দির। চমৎকার আলোকসজ্জা, ঐতিহ্যবাহী নৌকা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা সব মিলিয়ে পর্যটক আকর্ষণের সবটাই রয়েছে এই শহরে।

সম্প্রতি এই শহরে 'স্বপ্নের সিথাং: নৌকার গল্প' নামে চালু করা হয়েছে রাত্রিকালীন নৌকা ভ্রমণ ইভেন্ট। আকর্ষণীয় ইভেন্টটি পরিচয় করিয়ে দেবে শহরের অনন্য মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এবং হাজার বছরের পুরনো সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে। 

ঝলমলে আলোয় সজ্জিত আটটি  ঐতিহ্যবাহী ফুলের নৌকা ধীর গতিতে প্রাচীন এ শহরের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। যার প্রতিটি নৌকা একটি ভিন্ন গল্প এবং থিম বহন করে। নৌকাগুলোর রঙিন আলো রাতের আকাশে তৈরি করে এক অপূর্ব দৃশ্যের।

নৌকা ভ্রমণের সময় স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত ঐতিহ্যবাহী গান, নাচ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। এই নৌকা ভ্রমণ ইভেন্টটি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হুকুও সুইলিয়াং রাজা মন্দির থেকে ওলং ব্রিজ পর্যন্ত নদীর ধার দিয়ে চলবে।

সিথাং শহর চীনের চেচিয়াং প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এই শহরে বিমান, ট্রেন এবং বাসে করে যাওয়া যাবে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের হোটেল এবং রিসোর্ট যেখানে বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী থাকার সুব্যবস্থাও।

অসংখ্য সেতু এই শহরকে করে তুলেছে অনন্য। শহরটি বেশিরভাগ অংশ সমতল তবে ৯টি জলপথ একে ৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। মিং, ছিং ও সং রাজবংশের রাজত্বকালে এই ৮ অঞ্চলে বিভিন্ন শৈলীতে নির্মাণ করা হয় ১০৪টি সেতু।

সিথাং শহরটি একেবারেই কোলাহল মুক্ত। শান্তিময় সকাল। সন্ধ্যা নাগাদ চোখে পড়বে চিমনি থেকে ধোঁয়া উঠার দৃশ্য। প্রায় ১ হাজার বছরের পুরনো এই শহরে মিং এবং চিং রাজবংশ শাসনামলে নির্মিত প্রাচীন কিছু ভবনগুলো এ নজরকাড়ে পর্যটকদের। পর্যটকরা এই বাড়িতে প্রবেশ করে দেখতে পারেন যে অতীতে এসব রাজবংশের মানুষদের জীবনাচরণ কেমন ছিল।

পর্যটকদের আকর্ষণ করতে স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সে উদ্যোগেরই একটি অংশ হলো এই নৌকা ভ্রমণ।

প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। দেখে আসুন শিছাহাই লেকে পদ্মফুলের শোভা

 

বেইজিংয়ের বিখ্যাত পর্যটন স্পট শিছাহাই লেক এলাকা। এই গ্রীষ্মে এখানে ফুটেছে পদ্মফুল। এই পদ্মফুলের শোভা দেখতে অনেক পর্যটক যাচ্ছেন শিছাহাই লেকে। এখানে দিনের বেলা যেমন পদ্মফুল দেখা যায় তেমনি পূর্ণিমা রাতে পদ্মফুলের অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে ফরবিডেন সিটি ও  বাইহাই লেক থেকে উত্তর পশ্চিমে অল্প দূরেই অবস্থিত শিছাহাই লেক এলাকা। এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। শিছাহাই শব্দের অর্থ হচ্ছে দশ মন্দিরের লেক। এখানে দশটি বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে তাও ও বৌদ্ধমন্দিরগুলো অপূর্ব সুন্দর কারুকার্যসমৃদ্ধ।

বেশ কিছু রাজকীয় ভবনও রয়েছে এর আশপাশে। প্রিন্স কং ম্যানশন এবং প্রিন্স ছুন ম্যানশন বিখ্যাত। পুরো এলাকাটি ১৪৭ হেকটর জুড়ে অবস্থিত। চিন রাজবংশের সময় এই এলাকা গড়ে ওঠে। ইউয়ান রাজবংশের সময় এটি ছিল গ্র্যান্ড ক্যানেলের সবচেয়ে উত্তরের অংশ। এই গ্র্যান্ড ক্যানেলের মাধ্যমে হাংচৌ থেকে বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এটি ছিল প্রাচীনকালে চীনের একটি প্রধান জলপথ।

শিছাহাই প্রকৃতপক্ষে তিনটি লেকের সমন্বয়ে গঠিত। ছিয়ানহাই, সিহাই এবং হোওহাই। লেকের তীর ধরে রয়েছে দীর্ঘ হাঁটা পথ। এই হাঁটা পথে স্থানে স্থানে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের ধারে রয়েছে অনেক রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টেুরেন্টে চীনের বিভিন্ন প্রদেশের কুইজিন তো পাবেনই কোরিয়া, জাপান, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের খাবারও মিলবে।

পদ্মফুলের বীজ ও মৃণালের নানা রকম লোকজ খাদ্যও পাওয়া যাবে। পদ্মফুল দেখতে হলে লেকের তীর ধরে হাঁটতে পারেন অথবা প্যাডেল বোট ভাড়া করে  ‍ুঘুরতে পারেন লেকের জলে।

১৯৯২ সালে বেইজিংয়ের পৌর সরকার পুরো এলাকাটিকে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সিনিক এরিয়া হিসেবে ঘোষণা দেয়। এখানে বিকালে ও সন্ধ্যায় গানের আসরও বসে। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সরাসরি শিল্পীদের গান পরিবেশিত হয়।

শিছাহাই লেকের তীরে বেড়াতে গেলে পর্যটকরা বেশ কিছু সুভ্যেনির শপও পাবেন যেখানে চীনের বিভিন্ন কারুশিল্প পাওয়া যাবে।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী