জুলাই ৮: চীনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্ককালীন ছুটি শুরু হয়েছে। এর সাথে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মের ভ্রমণ-মৌসুম। এ সময় অভিভাবকরা শিশু-কিশোরদের নিয়ে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যান। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের যৌবনে গ্রীষ্মের রঙ যুক্ত করতে বাড়ি থেকে বের হন।
এ সময় আপনি যেখানেই যাবেন, তা সেটা হোক কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্যস্থান, জলপ্রপাত, সাংস্কৃতিক যাদুঘর, প্রাচীন শহর বা গ্রাম, পর্যটকদের ভির আপনার চোখে পড়বে। গ্রীষ্মের পর্যটন মৌসুমে সংশ্লিষ্টদের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পর্যটন কার্যক্রম চালু হয়েছে। পর্যটকদের যাতায়তের সুবিধার জন্য নতুন নতুন রুট চালু হয়েছে। এ সময় কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিটের মূল্য হ্রাস করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, শিক্ষার্থী পর্যটকরা গ্রীষ্মের পর্যটনের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন বয়সের পর্যটকদের আনাগোনার কারণে পর্যটনশিল্প এখন চাঙ্গা। এ শিল্পের সাথে জড়িতদের মতে, পিতামাতারা এখন তাদের বাচ্চাদেরকে উচ্চমানের সাহচর্য দিতে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক আগ্রহী। তাঁরা বাচ্চাদের নিয়ে ভ্রমণে যাচ্ছেন এবং তাদের জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচনে সময় ও অর্থ ব্যয় করছেন।
গ্রীষ্মে গবেষণা ও অধ্যয়নের সাথে সম্পর্কিত ভ্রমণও বাড়ছে। চীনের চ্য চিয়াং প্রদেশের চিয়া সিং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এলাকার ছাং শুই রাস্তার চিয়া সিং পার্কে গবেষণা ও অধ্যয়নের সাথে জড়িত গ্রুপগুলোর স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে রয়েছে ১২টি বৈশিষ্ট্যযুক্ত কার্যকরী ব্লক, বিভিন্ন প্রদর্শন ও অভিজ্ঞতা কার্যক্রম, কৃষিশিক্ষা পার্ক, উদ্যান, চাল সংস্কৃতি পার্ক, পরিবেশগত জলাভূমি অঞ্চল, এবং বীজ গবেষণা পরীক্ষামূলক অঞ্চল, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রাকৃতিক ‘পাঠ্যপুস্তক’-এর মতো। শিশুরা পার্কে আসে এবং ভ্রমণ ও শেখার মজা অনুভব করে। তাঁরা গবেষণা ও অধ্যয়ন ক্লাসে নিজেদের নিমজ্জিত করে।
সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রীষ্মে বিভিন্ন জায়গায় ৪,০০০-এরও বেশি সাংস্কৃতিক ও পর্যটন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। সেই সাথে ভোগকুপন, টিকিট ছাড়, এবং ধরাবাহিক সুবিধাজনক ব্যবস্থাও চালু করা হবে।
‘সিয়ে ছেং’ তথ্য অনুসারে, দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমণ চলতি বছরের গ্রীষ্মের প্রধান পর্যটন তত্পরতা। ৭০ শতাংশেরও বেশি পর্যটক এবার দীর্ঘমেয়াদে ভ্রমণ করবেন। দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পর্যটন যথাক্রমে ৪০ ও ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে পর্যটন বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ।
একই সময়ে, চীনের সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ই লি, আলতায়, কাশগর এলাকা; ইয়ুননান প্রদেশের তা লি, সিশুয়াংপাননা; ইনার মঙ্গোলিয়ার হুলুনবুয়ার সিটি; সিছুয়ানের আবা; এবং চিলিন প্রদেশের ইয়ানপিয়ান এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। এসব এলাকার ভালো পরিবেশ, চমত্কার আবহাওয়া, সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি পর্যটকদের কাছে প্রিয়। এখানে পর্যটকরা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীতে শীতল হতে পারেন এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের পোশাক ও খাবার পরতে ও খেতে পারেন।
বহির্মুখী ভ্রমণের শক্তিশালী পুনরুদ্ধার চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণের আরেকটি হাইলাইট। অনেক ভ্রমণসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বলেছেন, অনুকূল ভিসা-মুক্ত নীতি এবং আন্তর্জাতিক বিমানের ভালো পুনরুদ্ধারের পটভূমিতে, এই গ্রীষ্মে বহির্মুখী ভ্রমণ বুকিংয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। বিশেষত, ইউরোপ বহির্মুখী ভ্রমণের জন্য একটি হট স্পট হয়ে উঠেছে।
‘থুংছেং’ ভ্রমণ তথ্য অনুসারে, জুলাই মাসে প্যারিসে দেশীয় পর্যটকদের কাছে বিমানের টিকিটের চাহিদা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং প্যারিস অলিম্পিকের সময় ফ্রান্সে গ্রুপ ভ্রমণের জনপ্রিয়তা ২২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপ ছাড়াও, জনপ্রিয় গ্রীষ্মের আউটবাউন্ড গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে টোকিও, ওসাকা, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিওল, সিঙ্গাপুর, হংকং, ফুকে, জেজু দ্বীপ, লন্ডন, ইত্যাদি। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)