ম্যাডাম চাং সিউ চুয়ান চীনের চেচিয়াং প্রদেশের লিনহাই শহরের চিইয়াং প্রাচীন রাস্তায়, তাঁর কাগজ কাটা শিল্পের দোকান চালান। ছোটবেলায়, ৩ থেকে ৪ বছর বয়স থেকে, তিনি ঐতিহ্যবাহী কাগজ কাটা শিল্প শিখতে শুরু করেন। এ হস্তকর্মশিল্পের চর্চায় তিনি কেবল কাগজ কাটার পদ্ধতি শেখেননি, বরং ক্যালিগ্রাফি আর ছবি আঁকার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
কোনোকিছুর ছবি দেখে কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্পকর্ম তৈরির ধারণা পেয়ে যান। তারপর শুরু হয় কাঁচি ও কাগজ দিয়ে চমত্কার ডিজাইন ফুটিয়ে তোলার কাজ। আজকে আমরা ম্যাডাম চাংকে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের একটি ছবি দেখাই। তিনি সেটি দেখে কাগজ কাটতে শুরু করেন। কাঁচি যেন তাঁর হাতের দক্ষ সহকারী। মাত্র কয়েক মিনিটেই কাগজে ফুটে ওঠে শাপলা ফুলের আকৃতি।
ম্যাডাম চাং সিউ চুয়ান স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কাগজ কাটা শিল্পের ২১তম প্রজন্মের উত্তরাধিকারী। এ হস্তকর্মশিল্প লিনহাই জেলার বৈশিষ্ট্যময় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলোর অন্যতম। কাগজ কাটা শিল্প সম্পর্কে তাঁর অনুভূতি স্পষ্ট ও আবেগময়। তিনি বলেন,ছবির ডিজাইন দেখে এর আকার ও বৈশিষ্ট্য ধরে রাখি মাথায়। তারপর, সেই ধারনা অনুসারে কাগজ কাটা শুরু করি। যখন থেকে আমি চপস্টিক ধরতে শিখেছি, তখন থেকেই কাগজ কেটে শিল্প সৃষ্টির কাজ শিখতে শুরু করি। এটি আমাদের জন্মস্থানের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। তাই, আমাদের কালে প্রত্যেক ছেলে-মেয়েকে এ শিল্প শিখতে হতো। তবে, এখন সময় বদলে গেছে। কাগজ কাটা শিল্পের সাথে আমাদের আধুনিক জীবনের তেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর নেই। কিন্তু, এ শিল্পের সংরক্ষণ অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমি এ কাজ করতে বেশ পছন্দ করি। আর, এ কারণেই এ দোকান দিয়েছি।
কাগজ কেটে সুন্দর শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে চাইলে অবশ্যই ছবির নমুনার সাথে মিল রেখে তা করতে হবে। এর বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের সাথে কথা বলতে বলতে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকটি কাগজে ফুটিয়ে তোলেন। জীবনে প্রথম এই প্রতীকটি তিনি দেখেছেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে কাগজ কেটে সেটির অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছেন। জাতীয় প্রতীকের শাপলা ফুল, চারটি তারা ও দু’পাশের ধানের ছড়া তিনি কাগজের বুকে কাঁচি চালিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর বয়স ৬০। এখন চোখে খুব ক্ষুদ্র জিনিষ দেখতে কষ্ট হয়। তবে, তিনি ঠিকই বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের অবয়ব ধরতে পেরেছেন।
ম্যাডাম চাংয়ের দোকানে আরও অনেক সুন্দর ডিজাইনের শিল্পকর্ম পাওয়া যায়। তিনি হাসিমুখে বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক কাগজে ফুটিয়ে তোলা তার জন্য পরীক্ষার মতো ছিল। এ শিল্পকর্ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী ও বন্ধুত্বের প্রতীক হোক—এই কামনা করি। (সুবর্ণা/আলিম/রুবি)