বিজ্ঞানবিশ্ব ৭৮তম পর্ব
2024-07-08 19:05:19

১। নতুন খনিজ আবিষ্কার করলেন চীনা ভূতত্ত্ববিদরা

২। ইনজেক্টেবল আলট্রাসোনিক সেন্সর তৈরি

৩। স্ফটিক তৈরির অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন চীনা গবেষকরা

 

 

 

নতুন খনিজ আবিষ্কার করলেন চীনা ভূতত্ত্ববিদরা

চীনের ভূতত্ত্ববিদরা দেশটির উত্তর অংশে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দূর্লভ খনিজ সমৃদ্ধ একটি খনিতে দুটি নতুন খনিজ আবিষ্কার করেছেন। নাইওবিয়াম-স্ক্যান্ডিয়াম সমৃদ্ধ এই খনিজগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে অবনিওবাইট এবং স্ক্যান্ডিও-ফ্লুওরো-একারম্যানাইট।

 

 

ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বায়ান ওবো খনিতে নতুন দুটি খনিজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে চীনা একাডেমি অফ সায়েন্সেস।

একাডেমি অফ সায়েন্সেসের প্রচার বিভাগ জানিয়েছে, চীনা একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ইনার মঙ্গোলিয়া বাওথৌ স্টিল ইউনিয়ন কো., লিমিটেড, বাওথৌ রেয়ার আর্থস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সেন্ট্রাল সাউথ ইউনিভার্সিটির যৌথ সহযোগিতার ফলে এমন আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।

নাইওবিয়াম এবং স্ক্যান্ডিয়াম উভয়ই অত্যন্ত বিরল কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। নাইওবিয়াম বিশেষ স্টিল, অতিপরিবাহী উপকরণ এবং মহাকাশ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যখন স্ক্যান্ডিয়াম অ্যালুমিনিয়াম-স্ক্যান্ডিয়াম অ্যালয় এবং কঠিন অক্সাইড জ্বালানি কোষে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

 

চীনা একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষক লি সিয়ানহুয়া জানান, আন্তর্জাতিক খনিজবিজ্ঞান সংস্থা এই খনিজগুলোকে নতুন খনিজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এদের নাম অনুমোদন করেছে। এই নতুন খনিজগুলোতে মূল্যবান উপাদান রয়েছে যার নতুন উপকরণ, নতুন শক্তি, তথ্য প্রযুক্তি, মহাকাশ, জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং সামরিক শিল্পের মতো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ রয়েছে এবং এগুলো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অবনিওবাইট এবং স্ক্যান্ডিও-ফ্লুওরো-একারম্যানাইট উভয় খনিজই অত্যন্ত বিরল এবং মূল্যবান। নাইওবিয়াম বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং মেডিকেল ইমেজিং সরঞ্জাম।

চীনের প্রধান ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনার মঙ্গোলিয়া বাওথৌ স্টিল ইউনিয়ন কো লিমিটেডে লি সিয়াও জানান, বায়ান ওবো খনিতে লোহা, নাইওবিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম, থোরিয়াম এবং ফ্লুওরাইটের মতো অসংখ্য খনিজ সম্পদ রয়েছে।

১৯৫৯ সাল থেকে এখন পযন্ত এই খনিতে ১৮টি নতুন খনিজ আবিষ্কৃত হয়েছে, এবং ওবনিওবাইট ও স্ক্যান্ডিও-ফ্লুওরো-একারম্যানাইট এখানে আবিষ্কৃত ১৯তম এবং ২০তম খনিজ। চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি অ্যান্ড জিওফিজিকসের গবেষক ফ্যান হংরুই জানিয়েছেন, অবনিওবাইট হলো হলুদ-বাদামী থেকে বাদামী রঙের। এটি পাতের মতো চ্যাপ্টা এবং এর কণার আকার ২০ থেকে ১০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ফ্যান বলেছেন, স্ক্যান্ডিও-ফ্লুওরো-একারম্যানাইট হলো চীনে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত স্ক্যান্ডিয়াম ধারণকারী প্রথম খনিজ। এটির নামকরণ করা হয়েছে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের একাডেমিক চাই মিংকুওয়ের নামানুসারে, খনিজ নিয়ে গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য তাকে সম্মান জানিয়ে তার নাম ব্যবহার করা হয়।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

 

ইনজেক্টেবল আলট্রাসোনিক সেন্সর তৈরি

 

একটি মিনি ইনজেক্টেবল আলট্রাসোনিক সেন্সর তৈরি করেছেন চীনের গবেষকরা। এই সেন্সরটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসায় সাহায্য করবে। মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কে সংকেতগুলো ওয়ারলেসভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, যা বর্তমানে প্রাপ্ত ক্লিনিকাল যন্ত্র ব্যবহার করে সম্ভব ছিল না। মস্তিষ্কে স্থাপিত এই সেন্সরটি অপসারণ করার জন্য অতিরিক্ত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনও হবে না।

এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল নেচার জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।

হুয়াচোং বিশ্ববিদ্যালয় অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক চাং চিয়ানফেংয়ের নেতৃত্বে গবেষণা দলটি মস্তিষ্কের সংকেতগুলোর আলট্রাসোনিক পর্যবেক্ষণের জন্য এই ইনজেক্টেবল এবং ওয়ারলেস মেটাস্ট্রাকচার্ড হাইড্রোজেল সেন্সরটি তৈরি করেছেন।

তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যবহৃত তারযুক্ত চিকিৎসা যন্ত্রগুলো, যা ত্বকের ভিতর দিয়ে ঢোকানো তারের সাহায্যে কাজ করে, সেগুলো সংক্রমণ এবং সার্জারি পরবর্তী জটিলতা সৃষ্টি করে এবং এই ধরনের যন্ত্র রোগীদের সেরে উঠায় বিলম্ব করে। কিন্তু এই সেন্সরের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নেই।

ওয়ারলেস ইমপ্লান্টযোগ্য ডিভাইসগুলো আরও বেশি কার্যকরী। পূর্বের সেন্সরগুলোতে যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল বিশেষ করে স্বল্প পরিসরে সংকেত পাওয়া, দ্রুত নষ্ট হওয়া এবং আকারে ছোট করাও কঠিন ছিল। নতুন এই সেন্সরটি এ ধরনের সমস্যাগুলোও দূর করেছে। ওয়ারলেস ইমপ্লান্টযোগ্য এ ডিভাইসটি শরীরের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করে।

গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, এই সেন্সরগুলো মাত্র ৮ ঘনমিলিমিটার আকারের। এটি হাইড্রোজেল দিয়ে তৈরি, যা পানি এবং পলিমার দিয়ে তৈরি নরম, জেলের মতো উপাদান। এগুলোকে সূঁচ দিয়ে মাথার খুলির ভিতরে স্থাপন করা যায়। শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি সাড়া দিয়ে বিকৃত হতে পারে। এইভাবে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক তথ্য, যেমন, নিউরাল নেটওয়ার্ক, তাপমাত্রা, পিএইচ (pH) মাত্রা এবং রক্ত প্রবাহের গতি পাওয়া যায়।

গবেষণা দলটি বলছেন এই সেন্সরগুলো শক্তি ব্যয় কমাতে এবং তাপীয় প্রভাব না রাখার ক্ষেত্রে বিশাল সুবিধা দেয়। ভবিষ্যতে, এটিকে মানব দেহের অন্যান্য অংশেও প্রয়োগ করা যেতে পারে, যা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি।

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

স্ফটিক তৈরির অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন চীনা গবেষকরা

চীনা গবেষকরা স্ফটিক তৈরির এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে স্ফটিক বা ক্রিস্টালের কাঠামোর নিয়ন্ত্রণযোগ্যতা আরও উন্নত হয়েছে। সম্প্রতি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা নিবন্ধ।

আধুনিক কম্পিউটার, যোগাযোগ, বিমান চালনা এবং লেজার প্রযুক্তিতে ক্রিস্টালের ব্যবহার অনেক। ক্রিস্টাল উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি কম্পিউটার ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতির চিপগুলোর কম্পিউটিং ক্ষমতাকে আরও উন্নত করবে এবং ইলেকট্রনিক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এবং ফোটোনিক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটগুলোকে আরেকটি নতুন প্রজন্মে নিয়ে যাবে আশা করা হচ্ছে।

বড় আকারের স্ফটিক তৈরির প্রচলিত পদ্ধতিটা হলো ছোট স্ফটিক কণার পৃষ্ঠের ওপর পরমাণুগুলোকে "নিচ থেকে উপরের দিকে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা। এই পদ্ধতির বড় সীমাবদ্ধতা হলো এখানে পরমাণুর ধরন এবং বিন্যাসে ব্যাপক মাত্রায় যাচাই-বাচাই করতে হয়। সফলভাবে স্ফটিক জমা করা ও গঠন করা যাচ্ছে কিনা, সেটার ওপর নির্ভর করতে হয় বড় স্ক্রিস্টাল তৈরির বিষয়টিকে।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফিজিক্সের অধ্যাপক লিউ কাইহুই জানান, যখন পরমাণুর সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন পারমাণবিক বিন্যাস ধীরে ধীরে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, এবং ক্রিস্টালের ভেতর খাদ জমতে থাকে, ত্রুটিও বাড়তে থাকে। এতে স্ফটিকের বিশুদ্ধতা ও গুণমান প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

চীনা গবেষকরা স্ফটিকের পারমাণবিক বিন্যাসকে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা স্ফটিককে বড় করার হার প্রতি মিনিটে ৫০ স্তরে উন্নীত করতে পেরেছে। সেইসঙ্গে স্তরের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজারে। এতে প্রতিটি স্তরের পারমাণবিক বিন্যাস দেখা গেছে পুরোপুরি সমান্তরাল এবং সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এর ফলে যত বড়ই হোক না কেন, স্ফটিকগুলো ত্রুটিমুক্ত থাকে এবং এর কাঠামোটাও নিয়ন্ত্রণের ভেতর থাকে।

গবেষকরা সাত ধরনের দ্বি-মাত্রিক স্ফটিক তৈরিতে প্রয়োগ করেছেন নতুন এই পদ্ধতি।

লিউ জানালেন, ‘দ্বিমাত্রিক স্ফটিকগুলোর একক স্তরের পুরুত্ব মাত্র দশমিক ৭ ন্যানোমিটার। এগুলো যখন কোনো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ট্রানজিস্টরগুলোতে ব্যবহার করা হয়, তখন চিপগুলো আরও ভালোভাবে একীভূতকরণ করা যায়।

মোটকথা, ক্রিস্টাল তৈরির নতুন এ পদ্ধতির কারণে প্রচলিত চিপের কম্পিউটিং শক্তি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে এবং চিপের ভেতর ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো যেতে পারে।

এই ধরনের স্ফটিকগুলো আলোর ইনফ্রারেড ফ্রিকোয়েন্সি রূপান্তরেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে অতি-পাতলা অপটিক্যাল চিপগুলোর জন্য নতুন করে আরও কিছু কাজ বাড়ানো সম্ভব হবে।

 

|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

|| সম্পাদনা:  শুভ আনোয়ার

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- নাসরুল্লাহ রাসু

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী