সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও মধ্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে নিরন্তর সবুজ জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণ করার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু সহযোগিতামূলক প্রকল্প পরপর নির্মিত হচ্ছে। দু’পক্ষের জ্বালানি সহযোগিতার ক্রমবর্ধমানভাবে ‘সবুজ’ জ্বালানি স্থান করে নিচ্ছে।
সম্প্রতি সিনচিয়াংয়ের উরুমুচিতে অনুষ্ঠিত অষ্টম চীন-ইউরেশিয়া এক্সপোয় সিনচিয়াং গোল্ডউইন্ড বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোং, লিমিটেড মধ্য-এশিয়ার ভৌগোলিক পরিবেশের জন্য উপযুক্ত বায়ু শক্তি পণ্য প্রদর্শন করে।
“সিনচিয়াং মধ্য-এশীয় অঞ্চলের সঙ্গে নদী ও পাহাড় দিয়ে সংযুক্ত। ওই অঞ্চল গোল্ডউইন্ড বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানির অন্যতম বাজারে পরিণত হয়েছে।” কোম্পানির ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাও চিনশান বলেন, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের শেষ নাগাদ পর্যন্ত, কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের মতো মধ্য-এশীয় দেশে কোম্পানির মোট বায়ু শক্তির বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ৩.১৯ লাখ কিলোওয়াটের বেশি ছিল। সাম্প্রতিক উজবেকিস্তানে কোম্পানি ২ মিলিয়ন কিলোওয়াটের বায়ুশক্তি প্রকল্প বিডিং জয় করেছে। ভবিষ্যতে কোম্পানির কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানে বিনিয়োগ করে কারখানা নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে। যাতে বায়ু চালিত জেনারেটরের স্থানীয় উত্পাদন বাস্তবায়ন করা যায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান মধ্য-এশিয়ায় নতুন জ্বালানি শিল্পে বিনিয়োগ করতে আসছে। কাজাখস্তানে চীনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে নির্মিত ঝানাটাস উইন্ড ফার্ম, টারগুসুন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও আলমাটি ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশনসহ বিভিন্ন নতুন জ্বালানি প্রকল্প কার্যকরভাবে স্থানীয় নিম্ন-কার্বনে রূপান্তরে সহায়তা দেয়।
এবারের চীন-ইউরেশিয়া মেলায় চায়না এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট এবং চায়না হুয়াডিয়ান কর্পোরেশন ইত্যাদি চীনা প্রতিষ্ঠান মরুভুমি, গোবি ও উঁচু পাহাড়সহ বিভিন্ন ভূসংস্থানের সঙ্গে উপযুক্ত জেনারেটরের ধরন ও ব্যাটারি প্যাক প্রদর্শন করেছে। টিবিইএ কোং. লিমিটেড নিজস্ব গবেষণায় উদ্ভাবিতs সুপার হাই পাওয়ার ট্রান্সমিশন এবং ট্রান্সফরমেশন যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করেছে। যেটা দিয়ে সবুজ বিদ্যুতের বড়মাপের দূরপাল্লার পরিবহন বাস্তবায়ন করা যায়।
চীনের জলবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ, ফটোভোলটাইক এবং নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিসর বহু বছর ধরে বিশ্বের প্রথম স্থানে ধরে রেখেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইনস্টলেশন হার ৫০ শতাংশের বেশি। স্টেট গ্রিড সিনচিয়াং ইলেকট্রিক পাওয়ার কোং, লিমিটেডের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সিনচিয়াংয়ের মোট নতুন শক্তির বিদ্যুৎ উত্পাদন ৮৯ মিলিয়ন কিলোওয়াটের বেশি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তখন নতুন শক্তি প্রথমবারের মতো সিনচিয়াংয়ের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উত্স হবে। অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা মনে করেন, নতুন শক্তির উঁচু হারে সিনচিয়াং বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কে সংযুক্ত সিনচিয়াং থেকে অনুরূপ ভৌগলিক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবেশ মধ্য-এশীয় অঞ্চল সবুজ শক্তি উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা সরবরাহ করতে পারে।
“বর্তমানে কিরগিজস্তান সবুজ নিম্ন-কার্বন জ্বালানির রূপান্তর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও ব্যবহার বেগবান করছে।” দেশটির চেম্বার অফ কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির জ্বালানি কমিটির চেয়ারম্যান কুন্দুস কেরবাশেভা এমন কথা বললেন। “চীন কিরগিজস্তান জ্বালানি অবকাঠামো আধুনিকায়নের প্রধান সহযোগিতামূলক অংশীদারগুলোর অন্যতম। কিরগিজস্তান চীনের সঙ্গে সহযোগিতার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।”
চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য-এশিয়া গবেষণালয়ের গবেষক সু ছাং বলেন, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও জলবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন শিল্পে চীনের প্রযুক্তি, প্রশাসন ও উত্পাদন ইত্যাদি দিকে প্রাধান্য আছে। তাই মধ্য-এশীয় দেশগুলোর সবুজ রূপান্তরে সহায়তা দেবার সামর্থ্য আছে দেশটির।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন ও মধ্য-এশিয়া বাস্তব সহযোগিতা আরো গভীর ও বাস্তব হবার সঙ্গে সঙ্গে দু’পক্ষ সবুজ নিম্ন-কার্বন সহযোগিতা চালানোর উচ্চপর্যায়ের পরিকল্পনা দিন দিন সুসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালের মে মাসে চীন ও মধ্য-এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে, চীন মধ্য-এশিয়ার পাঁচটি দেশের সঙ্গে ধারাবাহিক সহযোগিতামূলক মতৈক্যে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ‘চীন ও মধ্য-এশিয়া সবুজ নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন
পদক্ষেপ উদ্যোগ নিয়ে, সবুজ উন্নয়ন গভীরতর করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ক্ষেত্রের সহযোগিতা” অন্তর্ভুক্ত করা হয়। (প্রেমা/হাশিম)